নিজস্ব প্রতিনিধি: করেছেন কী কেষ্ট(Anubrata Mondol)! গরু পাচার(Cattle Smuggling) করতে তিনি নাকি প্রায় ১২০ কোটির গাড়ি কেনার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আর সেই নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে মেনে বীরভূম(Birbhum) ও মুর্শিদাবাদ(Murshidabad) জেলার শতাধিক ব্যবসায়ী লরি কিনেছিলেন শুধু গরু পাচারের জন্য। সেই সব লরি শুধু গরু পাচারের জন্যই ব্যবহৃত হত। বীরভূম ও বর্ধমান জেলার মোট ৪টি পশুহাট থেকে গরু বোঝাই হয়ে সেই সব লরি বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে রওয়ানা দিত। সেখানে বিএসএফের সঙ্গে আগে থেকেই বোঝাপড়া ছিল গরু পাচার কাণ্ডের মূল মাথা এনামূল হকের। এবার সিবিআই(CBI) ওই সব লরিগুলিকে চিহ্নিত করার পাশাপাশি তাদের মালিকদেরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠানোর প্রস্তুতি নিতে চলেছে। এই গরু পাচারে তাঁদের লাভ কর হয়েছে, কার কত সম্পত্তি বেড়েছে সেটাও খতিয়ে দেখতে চাইছেন তাঁরা।
কেন্দ্রের গোয়েন্দা আধিকারিকেরা তদন্তে নেমে জানতে পেরেছেন, গরু পাচারের এই ঘটনায় এনামূল ছাড়াও সিন্ডিকেটের আরও ১০-১২টি মাথা ছিল। এদের প্রত্যেকের হাতে ১০-১২টি করে লরির দায়িত্ব থাকতো। এরা ওই সব লরি বীরভূম ও বর্ধমানের পশু বিক্রির হাট থেকে গরু নিয়ে যাতে নির্বিঘ্নে বাংলাদেশে চলে যেতে পারে তার ব্যবস্থা করত। গাড়িগুলিকে যাতে মাঝপথে কেউ আটকাতে না পারে বা সীমান্তে ধরা না পড়ে তার জন্য সব ব্যবস্থা এরাই করে রাখত। সিবিআই এইসবই জানতে পেরেছে বীরভূম ও মুর্শিদাবাদের কয়েকজন গাড়ির চালক ও মালিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। এরাই কার্যত জানিয়েছে এই ব্যবসায় অনেকেই যোগ দিতে চাননি। কিন্তু কেষ্টবাবার হুকুমে তাঁরা লরি কিনে এই ব্যবসায় যোগ দিতে নাকি বাধ্য হয়েছিলেন। অনেক সময় সিন্ডিকেটের বাইরে থাকা ছোট পাচারকারীরা গাড়িতে গরু নিয়ে সীমান্তে আনার চেষ্টা করত। কিন্তু সিন্ডিকেটের মাথারা তাঁদের আটকে দিত। তাঁদের বিশেষ ট্যাক্স দেওয়ার পরেই সেই গাড়িগুলি সীমান্তে যাওয়ার ছাড়পত্র পেত।
সিবিআইয়ের আধিকারিকেরা গরু পাচার মামলার তদন্তে নেমে জানতে পেরেছেন যে, গরুর হাটে গাড়ি ভাড়া খাটিয়ে অনেকেই বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়ে উঠেছে। কোন কোন গাড়ি চার থেকে পাঁচবার মুর্শিদাবাদে যাতায়াত করত। ওই সমস্ত গাড়ির মালিকদের আয় অনেক বেশি ছিল। বাংলা ছাড়াও হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, বিহার থেকে বড় লরি বা ট্রাকে এরাজ্যের হাটগুলিতে গরু নিয়ে আসা হতো। হাটগুলিতে গরু বাছাই করার পরে গাড়িতে তুলে বেশিরভাগ সময় তা ওমরপুর হয়ে জঙ্গিপুর রঘুনাথগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হতো। গ্রামের ছোট রাস্তায় লরি বা বড় চার চাকার গাড়ি নিয়ে যেতে সমস্যা হলে ছোট গাড়ি ব্যবহার করা হতো। তবে গরু বোঝাই কোনও লরি বা ছোট গাড়ি সীমান্ত অবধি নিয়ে যাওয়া হত না। একসঙ্গে কয়েকশো গরু হাঁটিয়ে সীমান্তবর্তী এলাকায় নিয়ে যাওয়া হতো। একসঙ্গে এত সংখ্যক গোরু হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যানজট তৈরি হতো। তবুও কেউ প্রতিবাদ করার সাহস দেখাত না। সিবিআই এটাও জানতে পেরেছে, গরু পাচারের সঙ্গে একাধিক প্রভাবশালী যুক্ত রয়েছে। তাঁরা এখন আড়ালে রয়ে গিয়েছে। তাঁদের কাছে পৌঁছনোর জন্যই বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হয়েছে। গাড়ি চালকদের বয়ানও তদন্তকারীদের কাছে তুরুপের তাস হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন তাঁরা।