নিজস্ব প্রতিনিধি: সকাল তখন কটা হবে, এই সাড়ে ৮টা। রবিবার, ছুটির দিন। অনেকেই তখনও দুচোখের পাতা খোলেননি। কেউ বা আয়েশ করে লুচি-তরকারি টিফিন করছেন। তারই মাঝে হঠাৎ করে তীব্র বিস্ফোরণের(Blast) শব্দে গোটা এলাকা কেঁপে উঠল। পড়ি কি মরি করে সবাই দিলেন ছুট সেই শব্দ লক্ষ্য করে। গিয়ে দেখলেন। একটা পাকা কংক্রিটের বাড়ি পুরো ধ্বংসাবশেষ। এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে একের পর এক মানুষের দেহ, পাতি ভাষায় মানুষ এখন যাকে Body বলেই চেনে। কোনওটা এতটাই পুড়ে গিয়েছে যে চেনাই দায়, কোনওটার মাথা নেই, কোনওটার হাত আছে তো পা নেই, আবার পা আছে তো হাত নেই। যারা গিয়েছিলেন দৌড়ে দেখতে তাঁরা বুঝে গেলেন বেআইনি বাজি কারখানায় ঘটেছে বিস্ফোরণ। ঘটনাস্থল কলকাতার কাছেই থাকা উত্তর ২৪ পরগনা(North 24 Pargana) জেলার দত্তপুকুর থানার(Duttapukur PS) নীলগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মোষপোল পশ্চিমপাড়া অঞ্চল। প্রাথমিক ভাবে বেসরকারি মতে মৃতের(Death) সংখ্যা ১০।
জানা গিয়েছে, বারাসাত লাগোয়া দত্তপুকুর থানার অন্তর্গত নীলগঞ্জ ফাঁড়ির নীলগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মোষপোল পশ্চিমপাড়া অঞ্চলে ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকার মধ্যে বেআইনিভাবে একাধিক বাজি কারখানা রয়েছে যারা দীর্ঘদিন ধরেই ব্যবসা করে চলেছে। এদিনের বিস্ফোরণের ঘটনার পরে এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রশাসনের সহযোগিতায় এলাকায় রমরমিয়ে চলছে বাজি কারখানা। এতে পুলিশের পাশাপাশি যুক্ত স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতারাও। তাঁদের দাবি, শুধু একটি বাড়িতেই নয়, এলাকার একাধিক বাড়িতে প্রশাসনের যোগসাজশে রমরমিয়ে চলছে অবৈধ বাজির কারবার। পুলিশ দেখেও দেখে না, পুলিশে অভিযোগ জানালেও কিছু হয় না। এদিন তাই বিস্ফোরণের ঘটনার পরে এলাকায় পুলিশ(Police) পা রাখতেই তাঁদের ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখানো শুরু করেন এলাকাবাসী। তাঁদের ঘিরে ধরে চলতে থাকে স্লোগান। যার জন্য হতাহতদের প্রথমে উদ্ধার করতেও পারেনি পুলিশ।
গ্রামবাসীদের(Villagers) অভিযোগ, শামসুল হোদা নামে এক ব্যক্তিই ওই এলাকায় বেআইনি বাজির কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর সঙ্গে সরাসরি যোগ রয়েছে প্রশাসনের কর্তাদের। ওই পাড়ায় একাধিক বাড়িতে বেআইনি ভাবে বাজি তৈরির কাজ চলত শামসুলের নেতৃত্বে। এদিন সেই ক্ষোভে শামসুলের বাড়ি ভাঙচুর করেন ক্ষুন্ধ এলাকাবাসী। তাঁদের দাবি, বিস্ফোরনের তীব্রতা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে কংক্রিটের বাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে। ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকার মধ্যে বেআইনিভাবে এই বাজির কারখানা চলছিল। দত্তপুকুর থানা ও বারাসত থানার পুলিশ এখান থেকে এসে নিয়মিত মাসোহারা নিয়ে যেত বলেও তাঁদের অভিযোগ। তাই এদিন পুলিশ ঘটনাস্থলে যেতেই গ্রামবাসীরা পুলিশের ওপরে চড়াও হয় এবং পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে।
গ্রামবাসীদের দাবি, এদিন ঘটনার সময় যে বাড়িতে বিস্ফোরণ হয়েছে সেখানে প্রায় জন ২০ লোক কাজ করছিলেন। তাদের মধ্যে শিশুশ্রমিকও ছিল বেশ কয়েকজন। এদিন খুব কম করেও ১০ জন নিহত হয়েছেন ও সমসংখ্যক আহত হয়েছেন। যদিও পুলিশের দাবি ৬জন মারা গিয়েছেন। গ্রামবাসীদের পাল্টা দাবি মৃতদেহ ও মৃত দেহের অংশ ওই বাড়ির ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকে আছে। বেশ কিছু দেহাংশ ৫০ থেকে ১০০ মিটার দূরে ছিটকে গিয়েছে। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে, আশপাশের বাড়িগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যদিও শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বারাসাত জেলা পুলিশের বিশাল পুলিশ বাহিনী ও কমব্যক্ট ফোর্স ঘটনাস্থলে ঢুকে দমকল বাহিনীর কর্মীদের নিয়ে উদ্ধারকার্য চালাচ্ছে।