নিজস্ব প্রতিনিধি: গত সোমবার সন্ধ্যে বেলায় প্রকাশ্যে ছাত্রীকে খুন করেছিল তাঁর প্রাক্তন প্রেমিক। পিস্তল দেখিয়ে হুমকি দিয়েছিল, ‘কেউ ওকে বাঁচাতে আসবে না’। কাতরাতে কাতরাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিলেন সুতপা চৌধুরী (২১)। ওই রাতেই পুলিশের হাতে গ্রেফতার (Arrest) হয় অভিযুক্ত। সেই থেকেই বহরমপুরের গোরাবাজার এলাকা ভুগছে নিরাপত্তাহীনতায়। দলে দলে মেস ছাড়ছেন ছাত্রীরা। এলাকা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারছে না সোমবারের হত্যাকাণ্ডের ভয়।
সোমবারে ছাত্রী খুনের (Murder) পর আর কোনও অভিভাবক- অভিভাবিকা তাঁদের মেয়েকে মেসে রাখার সাহস দেখাতে পারছেন না। তাই দলে দলে ভিড় জমিয়েছেন মেসের সামনে। ফিরে যাচ্ছেন নিজেদের মেয়েকে নিয়ে। আবার ইতিমধ্যেই মেস ছেড়েছেন বহু ছাত্রী। সকলেই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। কেউই ভুলতে পারছেন না আগেরদিন সন্ধ্যার খুন। আর তা থেকেই নিরাপত্তাহীনতার ভয়। উল্লেখ্য, সোমবার সন্ধ্যায় মেসেই ছিলেন ছাত্রী সুতপা। তাঁকে ফোন করে যুবক। ফোনেই বলে বাইরে আসতে। আর ছাত্রী মেস থেকে বেরিয়ে আসতেই তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ক্রমাগত কোপাতে থাকে অভিযুক্ত যুবক সুশান্ত চৌধুরী। আর্তনাদ শুরু করে আহতা। তা দেখে জড়ো হয় এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, তখন বন্দুক উঁচিয়ে হুমকি দিয়ে অভিযুক্ত যুবক বলেন, কেউ ওকে বাঁচাতে আসবে না। এরপরেই ছাত্রীকে গুলি করে কুপিয়ে পালিয়ে যায় যুবক। তারপর ওই জখম ছাত্রীকে নিয়ে যাওয়া হয় বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে জানান, তরুণীর মৃত্যু হয়েছে। মৃতা বহরমপুর কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। বাড়ি মালদার ইংরেজবাজার। পড়াশোনার জন্য থাকতেন শহিদ সূর্য সেন লেনের একটি মেসে। ঘটনার তদন্তে নামে বহরমপুর থানার পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে চলে ধৃতের খোঁজে তল্লাশি। পুলিশ (Police) সূত্রে জানা গিয়েছিল, সুশান্তের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল মৃতার। তবে বাড়িতে সেই সম্পর্ক মেনে নয়নি। বিয়ে ঠিক হয়েছিল অন্যত্র। তা নিয়েই ২ জনের মধ্যে মনোমালিন্য হয়েছিল।
খুনের দিন রাতেই বিশেষ অভিযান চালায় জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা। যেখানে যেখানে ওই যুবক গিয়েছিল ট্র্যাপ করা হয় সেই সমস্ত জায়গা। যোগাযোগ করা হয় জঙ্গিপুর ও সামশেরগঞ্জ থানাতেও। তারপর সামশেরগঞ্জের ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে গ্রেফতার করা হয় সুশান্তকে। মঙ্গলবার তাকে আদালতে তোলা হলে ধৃতের ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদে ধৃতের দাবি, তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল সুতপার। পরে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। অভিযুক্তের দাবি, একাধিক সম্পর্কে জড়িয়েছিল সুতপা। তারপর প্রত্যাখান করে সুশান্তকে। তাই বদলা নিতেই এই খুন। ধৃত মালদা জেলার পাকুড়িয়া থানার বীরগঞ্জের বাসিন্দা। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের কাছ থেকে একটি রক্তমাখা ব্লেড উদ্ধার হয়েছে। মৃতার বাবার দাবি, সুশান্ত আগেও বারবার হুমকি দিয়েছিল তাঁর মেয়েকে।
এই খুনের পরেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ওই এলাকায় মেসে থাকা ছাত্রী ও তাঁদের পরিবার। তাই মঙ্গলবার সকাল থেকেই মেস ছাড়ছেন সকলে। সোমবার রাতের ঘটনার পর নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে সকলে। তাই মেস ছাড়ছেন অনেকে।