এই মুহূর্তে




বারাসতের দক্ষিণপাড়ায় ৪৫৪ বছরের শিবের কোঠার দুর্গাপুজো সংকল্পিত হয় যোধাবাঈয়ের নামে




সুব্রত রায়,বারাসত: বারাসতের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণপাড়ায় ৪৫৪ বছরের দুর্গা পুজোকে ঘিরে রয়েছে এক বৃহৎ ইতিহাস।।অষ্টমীতে এই পূজোর বিশেষ রীতি ধুনো পোড়ানো। এলাকার প্রবীণ সদস্যরা দেবী মূর্তির সামনে পোড়ান ধুনো। আর তারপরই পরিবারের অন্যান্য সদস্য ও এলাকার মানুষজন ওই প্রবীণ মহিলাদের কোলে আসন নেন। ভক্তদের বিশ্বাস, কোলে বসলে সারা বছর শরীর স্বাস্থ্য সুস্থ থাকে। এভাবেই প্রায় ৪৫৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে বারাসতে দক্ষিণপাড়ায় মহানায়ক উত্তম কুমারের(Uttam Kumar) বাড়ির অনতি দূরে হয়ে আসছে শিবের কোঠার দুর্গাপুজো। তবে এর পেছনেও রয়েছে প্রাচীন এক ইতিহাস।

ওই পরিবারের বর্তমান প্রজন্ম মুকুল চ্যাটার্জী জানান, মোঘল সম্রাট আকবর বারো ভুইঁয়াদের মধ্যে ১১জনকে বশে এনেছিলেন। কিন্তু, তৎকালীন বাংলাদেশের যশোরের অধিপতি প্রতাপাদিত্যকে বাগে আনতে পারেননি। প্রতাপাদিত্যর প্রধান সেনাপতি ছিলেন সর্দার শঙ্কর চট্টোপাধ্যায়। মোঘল সম্রাটের উদ্দেশ্য ছিল প্রতাপাদিত্যকে পরাস্ত করা। ছলে বলে রাজা প্রতাপাদিত্য ও শঙ্করকে বন্দি করে দিল্লি নিয়ে যান তিনি। সঙ্গে নিয়ে যান যশোরেশ্বরী কালীর মূর্তিও। তারপরই মারা যান আকবর। অপরদিকে, বন্দি অবস্থায় প্রতাপাদিত্যেরও মৃত্যু হয়। আকবর-পুত্র জাহাঙ্গিরের (Jahangir)নির্দেশে শঙ্করের আমৃত্যু কারাবাসের সাজা হয়। তাঁর কারাদণ্ডের সময়টা ছিল পিতৃ তর্পণের কাল। বন্দি শঙ্কর সম্রাটের কাছে তর্পণ করার আর্জি করেন। সেই আবেদন নাকচ করে দেন আকবর পুত্র জাহাঙ্গির। ব্যাথিত শঙ্কর কারাগারেই আমরণ অনশন শুরু করেন। আকবরের স্ত্রী যোধাবাঈ ছেলে জাহাঙ্গিরকে শঙ্করের আবেদন অনুমোদনের জন্য নির্দেশ দেন। সেনা প্রহরায় যমুনার তীরে শংকর তর্পণ করেন। শঙ্করের মন্ত্রোচ্চারণ শুনতে প্রচুর মানুষ ভিড় করেন। সেই ভিড়ে ছিলেন বোরখা পরিহিতা যোধাবাঈও, মন্ত্র শুনে মুগ্ধ হন তিনিও। সেই রাতেই রাজমাতা স্বপ্নে দেখেন, তিনি দুর্গাপুজো করছেন। স্বপ্ন ভেঙে যেতেই তাঁর মনে পড়ে শঙ্করের কথা। কারাগারে গিয়ে তিনি শঙ্করকে দুর্গাপুজো করার নির্দেশ দেন। শিবের উপাসক শঙ্কর প্রথমে রাজি হননি।

পরে তিনি পুজো করতে শুরু করেন। শঙ্করের পিতৃভিটে ছিল বারাসতে। শিবের উপাসক হয়েও তিনি দুর্গাপুজো করেছিলেন বলে এই পুজো শিবের কোঠার দুর্গাপুজো নামেই পরিচিত। আজও যোধাবাই সহ এলাকার মানুষজনের মঙ্গলকামনায় হয় সংকল্পদান। পুজোর কদিন প্রতিদিনই বাড়িতে ভোগ হয়, কিন্তু দশমীর দিন উমা বাপের বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়িতে ফেরেন পান্তা ভাত ও কচু শাক খেয়ে। সন্ধ্যা হওয়ার আগেই দেবী প্রতিমা বিসর্জন দিতে হয়। বিসর্জন দিয়ে এসে সত্যনারায়ণের পুজো করে তবেই হয় বিজয়া দশমী বলেই জানান এই চট্টোপাধ্যায় পরিবারের বর্তমান সদস্য মুকুল চট্টোপাধ্যায়। পরিবারের অন্যতম সদস্যা শ্রাবণী ব্যানার্জি জানান, প্রাচীনকালের সেই পুরনো কাঠামোতেই আজও হয়ে আসছে এই পুজো। কাঁধে চড়ে দশমীতে বিসর্জনের আগে গোল করে উমাকে অঞ্জলিও দেওয়া হয়। আর সেক্ষেত্রে বাড়ির বা পাড়ার বিধবারাও শামিল হন। মাকে সিঁদুর(Sindur) দান করতে পারেন তারাও। তারপরই মাকে কাঁধে করে নিয়ে গিয়ে বিসর্জন দেওয়া হয়। আগে বলি হলেও, এখন সেই প্রথা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। জেলার প্রাচীন পূজা গুলির মধ্যে বারাসতের এই চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ির পুজো অন্যতম ঐতিহ্য বহন করে চলেছে।

প্রতিপদ থেকেই শুরু হয় এই পুজো বলে জানালেন, পরিবারের আর এক মহিলা সদস্য টুম্পা দেবী। এই দুর্গাপুজোর প্রাঙ্গন থেকেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ভারতবর্ষে প্রথম মহিলা বিদ্যালয় চালু করেছিলেন। শুধু তাই নয় এই দুর্গা প্রতিমার কাছে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনে যুক্ত স্বাধীনতা সংগ্রামীরা দেশকে স্বাধীন করার জন্য মানত করতেন। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এই দুর্গা পুজোটি দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বারাসতের শেঠপুকুর পর্যন্ত চলেও এসেছিলেন এই দুর্গাপুজো চাক্ষুষ দেখার জন্য । কিন্তু হঠাৎ ব্রিটিশ পুলিশ(British Police) খবর পেয়ে তার পিছু নিলে তা টের পেয়ে যান নেতাজি । তাই তাকে অগত্যা দুর্গা প্রতিমা দর্শন না করে জঙ্গল পথে গা ঢাকা দিতে হয়। এই পুজো প্রাঙ্গণে এবং এখানকার বাড়িগুলিতে বহু মনীষীদের পদধূলি পড়েছিল।




Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

হাতিয়ারার ফ্ল্যাট থেকে তরুণীর মৃতদেহ উদ্ধার, এলাকায় চাঞ্চল্য.

ভুয়ো সংস্থা খুলে টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে গ্রেফতার ব্যাঙ্ক ম্যানেজার-সহ ৭

মানবিক অভিষেক, পুরোহিতের মায়ের শ্রাদ্ধের জন্য বাড়িয়ে দিলেন সাহায্যের হাত

বালুরঘাট পুরসভার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ১৪ লক্ষেরও বেশি টাকা উধাও, অভিযোগ দায়ের

রাস উপলক্ষে সেজে উঠেছে শান্তিপুরের বড় গোস্বামী বাড়ি

শিশু দিবসে বারাসত হাসপাতালের বড় প্রাপ্তি চিকিৎসকদের প্রচেষ্টায়

Advertisement

এক ঝলকে
Advertisement




জেলা ভিত্তিক সংবাদ

দার্জিলিং

কালিম্পং

জলপাইগুড়ি

আলিপুরদুয়ার

কোচবিহার

উত্তর দিনাজপুর

দক্ষিণ দিনাজপুর

মালদা

মুর্শিদাবাদ

নদিয়া

পূর্ব বর্ধমান

বীরভূম

পশ্চিম বর্ধমান

বাঁকুড়া

পুরুলিয়া

ঝাড়গ্রাম

পশ্চিম মেদিনীপুর

হুগলি

উত্তর চব্বিশ পরগনা

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

হাওড়া

পূর্ব মেদিনীপুর