নিজস্ব প্রতিনিধি: তিনি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের(RSS) আদি সদস্য। ছোটবেলা থেকেই স্বয়ংসেবক। সঙ্ঘের প্রশিক্ষণের সর্বোচ্চ পর্ব ‘প্রশিক্ষণ’ প্রাপ্ত। তাঁর সাংগঠনিক শক্তি দেখে তাঁকে রাজনীতিতে নিয়ে এসেছিলেন বঙ্গ বিজেপিরই(Bengal BJP) প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথা আরেক সঙ্ঘ সদস্য দিলীপ ঘোষ। দায়িত্ব পেয়ে আলিপুরদুয়ারে বিজেপির শক্তি বাড়ানোয় বড় ভূমিকা নেন তিনি। পুরস্কারও পান। জেলা সভাপতি হয়ে যান খুব কম সময়ের মধ্যে। প্রতিদানও দিয়েছিলেন। ২০১৯ সালে আলিপুরদুয়ার লোকসভা আসনে জয়ের পিছনে প্রধান ভূমিকা নিয়েছিলেন তিনি। কার্যত তাঁর কাঁধে ভর দিয়েই জন বার্লা দিল্লি যাওয়ার ছাড়পত্র পেয়েছিলেন। কিন্তু সেই সঙ্ঘ সদস্যই বিজেপি ছেড়ে এখন শুধু তৃণমূলে(TMC) চলে এসেছেন তাই নয়, তিনিই এখন বিজেপির একের পর এক বিধায়ককে পদ্মশিবির থেকে ভাঙিয়ে তৃণমূলে নিয়ে চলে আসছেন। এহেন গঙ্গাপ্রসাদ শর্মার(Ganga Prasad Sharma) এখন বঙ্গ বিজেপির মাথাব্যাথার কারণ হয়ে উঠেছেন।
আরও পড়ুন সাগরদিঘী উপনির্বাচনে জয় নিশ্চিত তৃণমূলের, পরীক্ষা বিরোধীদের
গঙ্গাপ্রসাদকে ঘিরে এত উদ্বেগ কেন বঙ্গ বিজেপির? প্রথম কারণ অবশ্যই গঙ্গাপ্রসাদ সঙ্ঘের সদস্য। বাংলার বুকে সঙ্ঘের কোথায় কেমন সংগঠন রয়েছে, কোথায় কোন পরিকল্পনা নিয়ে সঙ্ঘ এগোচ্ছে, ভোটে জিততে সঙ্ঘ কোন রণকৌশল নিচ্ছে তা সবই নিজের হাতের তালুর মতো জানেন ও চেনেন গঙ্গাপ্রসাদ। দল বদলের পরেও এহেন সদস্যকে কিন্তু এখনও তাড়িয়ে দেয়নি সঙ্ঘ। স্বাভাবিক ভাবেই সঙ্ঘের রণকৌশল থেকে সংগঠন সবই এখন তৃণমূলের সামনে চলে এসেছে ও আসবে। তাতে বিজেপির ক্ষতিটাই বেশি হবে। দ্বিতীয়ত, সঙ্ঘের সূত্রেই উত্তরবঙ্গের নানা এলাকায় গিয়েছেন গঙ্গাপ্রসাদ। জেলায় জেলায়, ব্লকে ব্লকে, বুথে বুথে। বিজেপি সংগঠন কোথায় শক্তিশালী আর কোথায় বা কমজোরি তা জানেন গঙ্গাপ্রসাদ। সেই সবও এখন তৃণমূলের হাতে চলে আসছে। তৃতীয়ত, আলিপুরদুয়ারের বিজেপি বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলালকে(Suman Kanjilal) তৃণমূলে নিয়ে এসেছেন এই গঙ্গাপ্রসাদই। ঘটনার দিন অভিষেক যখন সুমনকে উত্তরীয় পরিয়ে বরণ করে নিচ্ছিলেন তখন গঙ্গাপ্রসাদকে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েই হাততালি দিতে দেখা গিয়েছে। সূত্রের খবর, শুধু সুমনই নয়, উত্তরবঙ্গের আরও ২ বিজেপি বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী ও সৌমেন রায়কেও তৃণমূলে নিয়ে আসার পিছনের কারিগর এই গঙ্গাপ্রসাদ। সেই সময় তিনি সামনে আসেননি, সুমনের সময়ে নিজেকে সামনে নিয়ে এলেন। তাঁর নজরে এখন আর কে কে আছেন যারা তৃণমূলে গিয়ে ভিড়তে চান সেটাই এখন ভাবাচ্ছে বিজেপিকে।
আরও পড়ুন রাজনৈতিক অবস্থান জানতে সুমনকে চিঠি দেবে বিজেপি
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সঙ্ঘের প্রশিক্ষক হয়েও কেন বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে এলেন গঙ্গাপ্রসাদ? পেলেনই বা কী? বিজেপিতে থেকে তো তিনি দলের জেলা সভাপতিও হয়েছিলেন আলিপুরদুয়ারের মাটিতে। অথচ তৃণমূলে তিনি তো সেভাবে কিছুই হয়ে উঠতে পারেননি। তাহলে এসে পেলেন কী? সূত্রের দাবি, গঙ্গাপ্রসাদ সেটাই পেয়েছেন যেটা তৃণমূলের অন্দরে সবাই চট করে পান না। আর সেটা হল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভরসা অর্জন করা। কার্যত এটাই রাজ্য রাজনীতিতে গঙ্গাপ্রসাদকে অনেকটাই এখন এগিয়ে দিয়েছে। বিজেপিতে পড়ে থেকে তিনি বাংলার বুকে কেন উত্তরবঙ্গের বুকেও এতটা সাফল্য পেতেন না। আগামী দিনে তাঁর হাত ধরে যে আরও বেশ কিছু বিজেপি বিধায়ক ও সাংসদ তৃণমূলের দিকে আসতে চলেছেন তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। সেক্ষেত্রে আগামী দিনে তৃণমূলের অন্দরে গঙ্গাপ্রসাদের পায়ের নীচের মাটি যে আরও শক্ত হতে চলেছে তাই নয়, দল তাঁকে লোকসভায় বা রাজ্যসভায় প্রার্থী করলেও অবাক হওয়ার মতো কিছু থাকবে না। কিংবা কোনও বিধানসভা উপনির্বাচনে প্রার্থী হয়ে জেতার পরে মন্ত্রীত্ব। অনেক কিছুই হতে পারে।
আরও পড়ুন বিজেপি বিমুখ মতুয়ারা, কাজে দিচ্ছে না সিএএ টোপ
এখন প্রশ্ন গঙ্গাপ্রসাদ বিজেপি ছাড়লেন কেন? বঙ্গ বিজেপি সূত্রে দাবি, শুভেন্দু অধিকারীর হুকুম মতো ওঠাবসা করা তাঁর না পসন্দ। এই নিয়ে বহুবার দলকে জানিয়েছিলেন কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হয়নি। শোনা যাচ্ছে, একুশের বিধানসভা নির্বাচনে যেভাবে নব্য বিজেপিদের প্রার্থী করা হয়েছিল তা মেনে নিতে পারেননি গঙ্গাপ্রসাদ। তাঁর নিজেরও ইচ্ছা ছিল আলিপুরদুয়ার থেকে প্রার্থী হওয়ার। দল তা মেনে নেয়নি। পরিবর্তে সুমনকে প্রার্থী করে সেখানে। সেই সময় নাকি গঙ্গাই সুমনের প্রার্থী হওয়া নিয়ে বিরোধিতা করেছিলেন। আজ সেই সুমনকেই তিনি বিজেপি থেকে টেনে নিয়ে চলে এসেছেন তৃণমূলে। এখনও বিজেপিতে থেকে যাওয়া গঙ্গাপ্রসাদের অনুগামীদের দাবি, শুভেন্দু অধিকারী নাকি গঙ্গাপ্রসাদের সাংগঠনিক শক্তিকে পাত্তা দিতে চাননি। এমনকি জেলায় দলের নানা পদে নিজ অনুগামীদের বসিয়েছেন যা গঙ্গার পছন্দ হয়নি। এহেন সেই গঙ্গাই এখন বঙ্গ বিজেপির ঘুম কেড়ে নিয়েছেন।