নিজস্ব প্রতিনিধি: ২০০’র ওপর আসন পাওয়ার হুঙ্কার তুলে যারা বাংলা দখলের জন্য নেমে পড়েছিল, সেই বহিরাগত গেরুয়া শিবিরকে বাংলার আমজনতা একুশের বিধানসভা নির্বাচনে মুখের মতো জবাব দিয়ে দিয়েছেন। বিজেপির দৌড় তাঁরা ৭৭ এই থামিয়ে দিয়েছেন। আর এখন শুরু হয়ে গিয়েছে গেরুয়া শিবিরকে বাংলা থেকে সমূলে উৎখাত করার পালা। বিধানসভা নির্বাচনে মুখ থুবড়ে পড়ার পর থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে বিজেপিকে বিসর্জন দেওয়ার পালা। তাই প্রতিদিনই বাংলা জুড়ে দলে দলে বিজেপি কর্মীরা দল ছেড়ে আশ্রয় নিচ্ছেন তৃণমূলের পতাকা তলে। কেউ কেউ আবার দল ছেড়ে, রাজনীতি ছেড়ে বসে যাচ্ছেন। শুধু দলীয়কর্মীরাই নয়, বিজেপি ছাড়ছেন সেই দলের প্রতীকে জেতা বিধায়কেরাও। দল ছাড়ছেন নেতারাও। এই অবস্থায় বাংলায় একের পর এক নির্বাচন কার্যত গেরুয়া শিবিরের কঙ্কাল দশা তুলে ধরতে শুরু করে দিয়েছে। আর নিজেদের সেই দুর্দশা বঙ্গবাসীর কাছে তুলে না ধরতে চেয়ে এবার মামলা ঠুকে রাজ্যের পুরনির্বাচন আটকাতে আদালত মুখো হতে চলেছে বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর ছিল ভবানীপুর সহ সামসেরগঞ্জ ও জঙ্গিপুরের ভোট। সেই ভোটে যে বিজেপি পরাস্ত হতে চলেছে তাঁর আঁচ আগেই মিলেছিল। গেরুয়া শিবিরও তা জানতো। তাই তাঁরা পরাজয়ের ব্যবধান কমাতেই বেশি মন দিয়েছিল। এদিন সকাল থেকে ওই তিন কেন্দ্রে গণনা শুরু হতেই দেখা যায় তিন কেন্দ্রে তৃণমূল তো এগিয়েই রয়েছে, মুর্শিদাবাদের দুই কেন্দ্রে বিজেপি কার্যত তৃতীয় স্থানে চলে গিয়েছে। অথচ বাংলায় তাঁরাই বিরোধী রাজনৈতিক দল। অর্থাৎ এই ফলই বলে দিচ্ছে বঙ্গবাসী শুধু বিজেপির দিক থেকে মুখ ফিরিয়েইছে তাই নয়, কার্যত বিজেপিকে এবার তাঁরা বাংলা থেকে উৎখাত করার পথেই হাঁটা দিয়েছেন। এদিকে আগামী ৩০ অক্টোবর রাজ্যের আরও ৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন রয়েছে। তাঁর মধ্যে ২টি আসনে আবার একুশের ভোটে বিজেপিই জিতেছিল। কিন্তু যা অবস্থা এবার ওই ৪টি বিধানসভা কেন্দ্রেই তাতে তৃণমূলের জয় কার্যত নিশ্চিত। এই অবস্থায় গতকালই মুখ্যমন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছেন উৎসব মরশুম কাটলেই বাংলায় হতে পারে পুরনির্বাচন। শতাধিক পুরসভায় সেক্ষেত্রে নির্বাচন হবে। আর এই নির্বাচন ঠেকাতেই এখন উঠে পড়ে লেগেছে বিজেপি।
গেরুয়া শিবিরের দাবি, কোভিডের তৃতীয় ঢেউ যখন শিয়রে এসে দাঁড়িয়েছে তখন কেন রাজ্যে একের পর এক নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা হচ্ছে? মানুষের জীবনের দাম বেশি নাকি রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ বেশি দামী? বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব কার্যত বাংলার পুরনির্বাচন ঠেকাতে উঠেপড়ে লেগেছে। সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁরা এই বিষয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলাও দায়েরও করতে পারেন। সম্ভবত পুরনির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হলেই তা করা হবে। নবান্ন সূত্রে ইঙ্গিত মিলেছে, উৎসব মরশুম শেষে রাজ্যে কোভিড পরিস্থিতি কীরকম আছে তা দেখে তবেই পুরনির্বাচনের পথে হাঁটা দেবে রাজ্য সরকার। তাই এখনই উদ্বেগের কিছু নেই। ওয়াকিবহাল মহল অবশ্য জানিয়ে দিয়েছে, কোভিড ঠেকানো বিজেপির উদ্দেশ্য নয়। তাঁরা আসলে পুরনির্বাচন ঠেকাতে চাইছে যাতে তাঁদের নিজেদের দুরাবস্থা সকলের সামনে না চলে আসে। বঙ্গ বিজেপির এখন যা অবস্থা তাতে করে রাজ্যের সব পুরসভায় সব ওয়ার্ডে তাঁরা আদৌ প্রার্থী খুঁজে পাবে কিনা সন্দেহ। প্রার্থী পেলেও জামানত তাঁরা বাঁচাতে পারবে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কোনও শহরের পুরবোর্ড দখল করা তো সেখানে নিছক খোয়াব দেখা ছাড়া আর কিছুই নয়। এটা বিজেপির নেতারা বেশ ভালই টের পাচ্ছেন। তাই তাঁরা মামলা ঠুকে পুরভোট আটকাতে চাইছেন যাতে তাঁদের দলের বেহাল দশা সকলে না দেখে ফেলেন।