নিজস্ব প্রতিনিধি: তিনি আসতে পারেন। ঘুরে দেখতে পারেন গ্রাম। শিল্পীদের বাড়িতে বাড়িতে ঢুঁ মারতে পারেন। হয়তো একটা চেয়ার টেনে কোনও শিল্পীর বাড়িতে বসে কথাবার্তা শুরু করে দিতে পারেন সেখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে। জিজ্ঞাসা করতে পারেন কে কেমন আছে, কীভাবে তাঁদের দিন চলছে, সরকারি সুযোগ-সুবিধা ঠিক মতন তাঁরা পাচ্ছেন কিনা, অভাব-অভিযোগ কী আছে? হয়তো কিছুই কিনতেও পারেন। তাই তাঁর আসার অপেক্ষায় সেজে উঠেছিল গোটা গ্রাম। রাতারাতি বদলে গিয়েছিল এলাকার ছবি। কিন্তু তিনি আসেননি। তাই মনখারাপ গ্রামের বাসিন্দাদের। তবে তাঁর আসার সম্ভাবনার জেরে গোটা গ্রাম সেজে উঠেছিল নানান সাজে। সেই সব সাজসজ্জা রয়েই গেল। আর এই সব সাজসজ্জার জেরে এখন গ্রামের লোকেরা চাইছেন, পর্যটকেরা আসুক সেখানে। দেখুন তাঁদের শিল্পকর্ম। কিনুন যার যা পছন্দ লাগবে। গ্রামটার নাম বিকনা(Bikna)। বাঁকুড়া(Bankura) শহরে কান ঘেঁষে থাকা এই গ্রামের আরও একটা পরিচিতি আছে। গ্রামে বাস করে শো দেড়েক ডোকরা শিল্পী পরিবার। তাঁদের হাত ধরে তাই এই গ্রাম পরিচিতি পেয়েছে রাজ্যে ‘ডোকরাগ্রাম’(Dokra Village) হিসাবে। আর ‘তিনি’ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)।
আরও পড়ুন মন্দারমণি গেলে এই জিনিস দেখতে ভুল করবেন না…
মমতা বার বার বেড়া ভেঙেছেন। আজও ভাঙেন। নিরাপত্তার বেষ্টনী ভেঙে যখনতখন চলে যান আমজনতার মাঝে। আর জেলা সফরে গেলে তো কথাই নেই, কোনও না কোনও গ্রামে ঢুঁ মারবেনই মারবেন। উঠোনে বসে, মুড়ি খেতে খেতে গল্প জুড়ে দেবেন সেই সব মানুষদের সঙ্গে। কাউকে কাউকে চা করেও খাওয়াতে পারেন। আর সেই সবের ফাঁকে ফাঁকেই শুনে নেবেন তাঁদের অভাব-অভিযোগের কথা। গৃহবধূর কোলে থাকা শিশুপুত্র বা কন্যার হাতে একফাঁকে একটা চকলেট গুঁজে দেবেন। কিংবা নিজেই তাঁকে কোলে তুলে গাল একটু টিপে দিতে পারেন। আসলে এটাই মানুষ মমতা যার জুড়ে গোটা দেশে মেলা ভার। এই জনসংযোগের ক্ষমতা দেশের হাতেগোণা দুই-একজন নেতা বা নেত্রীর মধ্যেই দেখতে পাওয়া যায়। বিরোধীরা এই এক জায়গায় এসে মমতাকে কুর্ণিশও জানায়। কেননা সব আগল ভেঙে মানুষের সঙ্গে এভাবে মুশে যেতে তাঁরা কেউ কোনওদিন পারেননি, পারবেনও না। অনেকে আবার দেশের দুই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি ও রাজীব গান্ধির ছায়া দেখতে পান মমতার মধ্যে। সেই মমতা বাঁকুড়া আসছেন, সেই খবর ছড়িয়ে পড়তেই জেলা প্রশাসনের তরফেও অনেকে ভেবেছিলেন হয়তো বিকনায় ঢুঁ মারতে পারেন তিনি। তাই তাঁর আসার অপেক্ষায় সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা হয়েছিল ‘ডোকরাগ্রাম’ বিকনাকে। কিন্তু তিনি আসেননি। তাই মন খারাপ বিকনার ডোকরা শিল্পীদের। তবে গ্রামের সাজসজ্জা তাঁদের মনে কিছুটা হলেও আশার আলো জ্বালিয়ে দিয়েছে। মমতা না আসুন, পর্যটকেরা তো আসুন।
আরও পড়ুন রাস্তা চওড়া হয়েছে, গাছগুলো সব কাটা পড়েছে, অচেনা জাতীয় সড়ক
বিকনার কাছেই বলরামপুর ফুটবল ময়দানে শুক্রবার ছিল মমতার প্রশাসনিক সভা। হস্তশিল্পীদের বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া মুখ্যমন্ত্রী সভায় যাওয়ার পথে শিল্পীডাঙা ঘুরে যেতে পারেন, অনুমান ছিল জেলা প্রশাসনিক মহলের। তাই তাঁর সফরের আগে বিকনা শিলীডাঙা গ্রামের বাড়ির দেওয়ালে দেওয়ালে ছবি আঁকা, গ্রামে ঢোকার মুখে শিল্পডাঙার গেট সংস্কার বা বসার জন্য ফাইবারের সুদৃশ্য চেয়ারের ব্যবস্থা করা-সহ নানা পদক্ষেপ হয় প্রশাসনের তরফে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গ্রামে যাননি মুখ্যমন্ত্রী। সভাস্থলের পাশের হেলিপ্যাডে গিয়েই মুখ্যমন্ত্রীকে দেখার সাধ মেটান ডোকরা শিল্পীরা। তবে যদি মুখ্যমন্ত্রী শেষ মুহুর্তেও আসেন সেই ভেবে উপহার হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীর হাতে কিছু তুলে দিতে শিল্পসামগ্রীও তৈরি করে রেখেছিলেন অনেকে। মুখ্যমন্ত্রীকে উপহার দেওয়ার জন্য বানানো পাথরের রথ দিতে না পেরে হতাশ দেওয়ালচিত্রের কাজ করা শিল্পী অনন্ত দে-ও। তবে এই না পাওয়ার মধ্যে প্রাপ্তির জেরে খুশি বিকনার ডোকরা শিল্পীদের পরিবার ও সেখানকার বাসিন্দারা। তাঁদের বক্তব্য, ‘মুখ্যমন্ত্রী আসতে পারেন বলে আমাদের গ্রামকে নতুন করে সাজানো হল। আমরাও অপেক্ষায় ছিলাম। তবে ওঁর গাড়ি থামল না। মুখ্যমন্ত্রী এক বার গ্রামে এলে খুশির অন্ত থাকত না। গত কয়েক দিনে প্রশাসন গ্রামটাকে সুন্দর করে সাজিয়ে তুলেছে। এটাও আমাদের কাছে বড় পাওনা।’