নিজস্ব প্রতিনিধি: তিনি বিজেপির বিধায়ক(BJP MLA)। রাজনীতিতে যদিও তাঁর হাতেখড়ি তৃণমূলের হাত ধরেই। সেই তৃণমূল ছেড়ে তিনি একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে যোগ দেন পদ্মে। পেয়ে যান পশ্চিম মেদিনীপুর(Paschim Midnapur) জেলার অন্যতম মহকুমা শহর তথা রাজ্যের রেল শহর হিসাবে পরিচিত খড়গপুরের টাউন বিধানসভার(Kharagpur Town Assembly) টিকিটও। সেই ভোটে তিনি জিতে গিয়ে বিজেপি বিধায়কও হন। মাঝে তাঁকে নিয়ে একাধিকবার গুঞ্জন ছড়িয়েছে যে তিনি আবারও তৃণমূলে(TMC) ফিরে যেতে চাইছেন আর তার জন্য জোড়াফুলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Abhishek Banerjee) সঙ্গে যোগাযোগও রাখছেন। সেই বিতর্ক পুরোপুরি রাজ্য রাজনীতি থেকে মুছে যাইনি। তাঁর তৃণমূলে ফেরার প্রচেষ্টার খবর সত্য হোক বা মিথ্যা, এবার তিনি প্রকাশ্যেই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে(Mamata Banerjee) ‘মা’ সম্বোধন করে বসলেন। স্বাভাবিক ভাবেই একদিকে যেমন তাঁর তৃণমূলে ফেরার গুঞ্জন আবারও নতুন করে ছড়ালো তেমনি বিজেপিরও মুখ পুড়ল। কেননা বিজেপি তাঁকে এবার ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্র থেকে দলের প্রার্থী করেছে। তাও আবার টলি হিরো তথা তৃণমূল প্রার্থী দেবের বিরুদ্ধে। নজরে হিরণময় চট্টোপাধ্যায়, থুড়ি হিরণ(Hiran)।
হিরণ নিজে থেকেই দেবের বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়ার জন্য প্রকাশ্যে একাধিকবার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন। সেই চ্যালেঞ্জ বেশ ভাল চোখেই দেখেছিল বিজেপি। সেই কারণে হিরণকে ঘাটাল থেকে দল টিকিটও দিয়েছে। সেই হিরণই কিনা এদিন অর্থাৎ মঙ্গলবার প্রচারে বেড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘মা’ বলে সম্বোধন করে দলকে শুধু যে ধাক্কা দিলেন তাই নয়, দলের কর্মীদেরও হতাশার গভীরে ঠেলে দিলেন। কার্যত হিরণের সম্বোধনের জেরে এখন রীতিমতো তোলপাড় পড়ে গিয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। তীব্র অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছে বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব। সেই অস্বস্তি এতটাই যে, হিরণের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে মুখ খুলতে চাইছেন না দলের কোনও স্তরের নেতা। ঠিক কী বললেন হিরণ? কিছুদিন আগে কপালে চোট পেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কপাল থেকে রীতিমতো রক্ত ঝরতে দেখা গিয়েছে। সেই প্রসঙ্গ ও রাজ্য পুলিশের ডিজিকে অপসারণকে একসঙ্গে জুড়ে এদিন হিরণ উত্তর দিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু তার থেকেও বেশি দলকে তীব্র অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছেন।
এদিন এক প্রশ্নের প্রেক্ষিতে হিরণ বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর যেদিন কপাল ও নাক ফাটল, সেদিন ডিজির বাহিনী ওঁকে সুরক্ষা দিচ্ছিল, তারা কী করছিল সেদিন? মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ডিজির নিশ্চয় কোনও অভিসন্ধি ছিল। না হলে কালীঘাটের বাড়িতে পড়ে গেলেন, সেখানে কোনও অ্যাম্বুল্যান্স ছিল না, গাড়িতে করে হাসপাতালে গেলেন, ডিজির বাহিনী কী করছিল? আমি তো এর মধ্যে ডিজির অভিসন্ধি দেখব। সৎ, অত্যন্ত ভদ্র, একজন ভালো মানুষ মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নিশ্চয় ডিজির কোনও অভিসন্ধি ছিল। না হলে কেন এটা করেন? ফলে ওঁকে যে অপসারণ করা হয়েছে, এটা অত্যন্ত ভালো হয়েছে বাংলার মায়েদের জন্য, বোনেদের জন্য। যে ডিজি আমাদের মা মুখ্যমন্ত্রীকে রক্ষা করতে পারেন না, সেই ডিজি বাংলার মা বোনেদের কী রক্ষা করবেন?’ কার্যত হিরণের এই ‘মা’ সম্বোধনের জেরে ক্ষোভ ছড়িয়েছে বিজেপির নীচুতলার কর্মী থেকে সমর্থকদের মধ্যেও। সকলের এখন একটাই প্রশ্ন, ‘ভোটে জিতলে কী হিরণ তৃণমূলে ফিরে যাবেন? তাহলে তাঁকে জিতিয়ে লাভ কী? তাঁর জন্য খাটবো কেন?’ এই প্রশ্নের উত্তর আপাতত বিজেপির কোনও নেতার কাছেই নেই।