নিজস্ব প্রতিনিধি: তিনি কথা দিলে সে কথা তিনি রাখেন। একথা নতুন নয়। বার বার তা সামনে এসেছে, প্রমাণিত হয়েছে। তিনি তামাম বাংলার আমজনতার আস্থার প্রতীক। এখনও প্রতিটি নির্বাচনে তাঁর দলের বাক্সে আসা প্রতিটি ভোট পড়ে তাঁর নামে। কেননা তিনি বাংলার অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। আবারও নতুন করে সামনে এল, তিনি কথা দিলে সেই কথাকে তিনি বাস্তবেও রূপ দিতে পারেন। গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে(Panchayat Election 2023) রাজ্যে একাধিক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। সেই সব মৃত্যুর ঘটনায় আগেই দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী(Chief Minister of West Bengal)। সেই সঙ্গে ঘোষণা করেছিলেন ভোট হিংসায় নিহতদের পরিবার আর্থিক ক্ষতিপূরণ(Financial Compensation) যেমন পাবে রাজ্য সরকারের তরফে তেমনি সেই পরিবারের একজনকে রাজ্য সরকার চাকরিও দেবে। সেই ঘোষণা মোতাবেক রাজ্যের তরফে তা কলকাতা হাইকোর্টেও জানানো হয়। এবার সেই ঘোষণা অনুযায়ী মুর্শিদাবাদ জেলার(Murshidabad District) ডোমকল মহকুমার রানীনগরের বাসিন্দা তথা ভোট হিংসায় নিহত সিজারুল শেখের দাদা মিজারুল শেখ পেতে চলেছেন রাজ্য পুলিশের(West Bengal State Police) হোমগার্ডের চাকরি(Home Guard Job)।
গত বছরের ৮ জুলাই পঞ্চায়েত ভোটকে ঘিরে অশান্ত হয়ে ওঠে রানিনগর। সেদিন সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ রানীনগর থানার কাতলামারির মাইনুদ্দিন শেখের বাড়িতে খবর আসে মোহনগঞ্জের একটি বুথের পেছনে ভোট লুটের অভিযোগে গণপিটুনি দেওয়া হয়েছে তাঁর ছেলে সিজারুল শেখকে। ইট দিয়ে থেঁতলে দেওয়া হয় তাঁর মাথা। তাঁকে প্রথমে গোধনপাড়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও পরে বহরমপুরের মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে রেফার হয়। সেখানে তাঁর অবস্থার অবনতি হলে পরের দিন তাঁকে কলকাতায় রেফার করা হয়। কিন্তু কংগ্রেসের পথ অবরোধের মুখে পড়ে আটকে যায় অ্যাম্বুলেন্সটি। ফের মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই ফিরিয়ে এনে ভর্তি করা হয়। ওইদিন রাতেই মৃত্যু হয় তাঁর। সেই ঘটনায় তৃণমূলের তরফে বাম-কংগ্রেসের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে বলা হয় সিজারুল তৃণমূল করতো বলেই তাঁকে পিটিয়ে মারা হয়েছিল। এবার সিজারুলের পরিবারের হাতেই আর্থিক ক্ষতিপূরণ বাবদ ২ লক্ষ টাকা এবং তাঁর দাদাকে রাজ্য পুলিশের হোমগার্ডের চাকরি প্রদান করতে চলেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। সবকিছু ঠিক থাকলে অল্পদিনের মধ্যেই সিজারুল শেখের পরিবারের হাতে ক্ষতিপূরণ বাবদ টাকা ও নিয়োগপত্র তুলে দেওয়া হবে।
জানা গিয়েছে, সিজারুল চাষ আবাদের কাজ করতেন। পুত্র বিয়োগের শোকে বাবা মইনুদ্দিন সেভাবে আর কাজ করতে পারেন না। পরিবারের পুরো দায়িত্ব এসে দাদা মিজারুল শেখের ওপর। সামান্য দিনমজুরের কাজ করে ৭ সদস্যের সংসার চালাতে তাঁর প্রাণ ওষ্ঠাগত। এবার সেই সংসারে অভাব ঘুচতে চলেছে। অসময়ে পাশে থাকার জন্য ‘দিদি’কে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন পরিবারের সকলেই। পাশাপাশি মিজারুল জানিয়েছেন, ‘ভাই মারা যাওয়ার পর পুরো সংসার এখন আমার ঘাড়ে। আমার দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। আমি মাঠে চাষ করি। সরকার আমার ভাইয়ের ক্ষতিপূরণ হিসেবে চাকরি দিচ্ছে ও পরিবারকে টাকা দিচ্ছে। আমাদের পরিবারের অবস্থা ভালো নয়। চাকরিটা পেলে ছেলেমেয়েগুলোকে ভালো জায়গায় পড়াতে পারব। পাশপাশি বৃদ্ধ মা-বাবাকেও খুশি রাখতে পারব। অসময়ে আমাদের পাশে থাকার জন্য মমতাদিদিকে ধন্যবাদ জানাই।’