নিজস্ব প্রতিনিধি: শুক্রবার সকাল থেকেই দেশের ১০২টি লোকসভা কেন্দ্রে শুরু হয়েছে ভোটগ্রহণের পালা। এর মধ্যে বেশ কিছু কেন্দ্রকে নির্বাচন কমিশন(ECI) আগেই স্পর্শকাতর হিসাবে চিহ্নিত করেছিল। সেই সব কেন্দ্রের মধ্যে ছিল বাংলার(Bengal) কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রও(Coachbehar Constituency)। আর এদিন সকাল থেকেই দেখা যাচ্ছে সেই কোচবিহারকে ঘিরেই যত গন্ডগোল। এই জেলা থেকেই সব থেকে বেশি অনিয়ম ও সংঘর্ষের অভিযোগ জমা পড়ছে কমিশনের কাছে। এই কোচবিহার সামলানোই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল কমিশনের কাছে। তিন লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাহিনী মোতায়েন হয়েছিল এই কেন্দ্রেই। তার পরেও দেখা যাচ্ছে সেখানে একের পর এক জায়গায় চলছে তৃণমূল(TMC) বনাম বিজেপির(BJP) রেষারেষি। কিন্তু কেন এই অবস্থা? জেলার বাসিন্দাদের দাবি, একুশের তুলনায় চব্বিশে ছবি অনেকটাই বদলেছে। এখন আর একতরফা ভাবে গেরুয়া ব্রিগেড নিজের ইচ্ছামতো ভোট করাতে পারছে না। তৃণমূল পাল্টা ধাক্কা দিচ্ছে যেখানেই বিজেপি বেচাল কিছু করার চেষ্টা করছে। আর তাতেই তেতে উঠেছে কোচবিহার।
কীরকম সেই রেষারেষি তা ঘটনাপ্রবাহের দিকে একটু চোখ বোলালেই বোঝা যাবে। এদিন সকালে কোচবিহার জেলার দিনহাটায় আজিমুদ্দিন আল্লাহ ও দিলীপ মাঝি নামে দুই তৃণমূল কর্মীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। আবার চান্দামারিতে বিজেপির বুথ সভাপতির মাথা মেরে ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোচবিহারের রবীন্দ্রনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ব্যাপক ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে। যদিও ওয়েব কাস্টিং দেখে কমিশন জানিয়েছে, ভোট প্রক্রিয়া স্বাভাবিক। আবার কোচবিহার দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের ৪টি ভোটকেন্দ্র থেকে অভিযোগ এসেছে যে সেখানে বিজেপির পোলিং এজেন্টকে বুথে ঢুকতেই দেওয়া হয়নি। দিনহাটায় বিজেপির পোলিং এজেন্টকে যেমন বুথ থেকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে, তেমনি সিতাইয়ে তৃণমূলের ক্যাম্প অফিসে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে। শীতলকুচিতে যেমন তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে এক বিজেপি কর্মীর মাথা মেরে ফাটিয়ে দেওয়ার, তেমনি দিনহাটার ভেটাগুড়িতে তৃণমূলের ব্লক সভাপতিকেও বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে।
আর এই সব ঘটনাই বলে দিচ্ছে, কোচবিহার জেলায় যার জোর যেখানে বেশি, সে সেখানে নিজের মতো করে ভোট করিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। একুশের ভোটের মতো বিজেপি এবারে একতরফা কিন্তু কিছুই করতে পারছে না। জোড়াফুল শিবির এই কারণে এবারে জয়ের বিষয়ে কিছুটা হলেও আশাবাদী। একুশের ভোটে জেলার ৯টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৭টিতেই জিতেছিল বিজেপি। কিন্তু এবারে সেই বিজেপিকেই তৃণমূলের কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে প্রতিটি পদক্ষেপে। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনীর কথা না বললেই নয়। একুশে যেই বাহিনীকে ঘিরে বিস্তর অভিযোগ উঠেছিল। এমনকি শীতলকুচিতে বুথে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা নিরীহ ভোটারদের গুলি চালিয়ে মেরে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছিল। এবারে কিন্তু সেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিয়ে বড় কোনও অভিযোগ ওঠেনি। আর এই সব ছবিই বলে দিচ্ছে, বদলাবদলির খেলে চলছে কোচ ভূমে। আসন ধরে রাখা, আসন ছিনিয়ে নেওয়ার খেলা চলছে। তবে জয়ী কারা সেটা জানা যাবে সেই ৪ জুন তারিখেই।