নিজস্ব প্রতিনিধি, মধ্যমগ্রাম: বুধবার উত্তর ২৪ পরগণা জেলায় প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। মধ্যমগ্রাম শতবার্ষিকী হলে এই অনুষ্ঠানে ঢুকেই অবশ্য তাল কাটে মুখ্যমন্ত্রীর। প্রশাসনিক বৈঠকে বেশিরভাগ বিডিও এবং পুলিশের আধিকারিকদের না দেখতে পেয়ে ক্ষুব্ধ হন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, ভার্চুয়াল বৈঠকই যদি করতে হয় তাহলে এতদূর এলাম কেন। তিনি মঞ্চ থেকে নেমে যান। পরে অবশ্য অনুষ্ঠানে যোগ দেন মুখ্যমন্ত্রী।
বুধবার প্রশাসনিক বৈঠকের শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রী খোঁজ নিলেন ঘূর্ণিঝড় যশ বিধ্বস্ত এলাকার। সেখানে কৃষকদের ক্ষতিপূরণ নিয়ে খোঁজ নিলেন তিনি। জেলা প্রশাসনের কর্তারা জানান, দুয়ারে ত্রাণ প্রকল্পে এই জেলায় ১৩ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি স্বর্ণধান প্রকল্পেও ভালো সাড়া পাওয়া গিয়েছে। এবার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ভালো ফলন হয়েছে বলে জানান প্রশাসনিক কর্তারা।
সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ রোপণ প্রকল্পের কাজও ৮০ শতাংশ হয়ে গিয়েছে। ১৫ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে জেলা প্রশাসন। ১০০ দিনের কাজে ম্যানগ্রোভ রোপণ করা হচ্ছে। জেলাশাসক জানান, আগামী জানুয়ারির মধ্যেই পুরো প্রকল্প শেষ হবে।
আগামী ২০ ডিসেম্বর বড় আকারে স্টুডেন্ট মেলা করার পরিকল্পনা। ওই দিন প্রায় ১০ হাজার পড়ুয়াদের ঋণ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। স্টেট ব্যাঙ্কের পাশাপাশি সমবায় ব্যাঙ্কগুলিকেও যুক্ত করা হচ্ছে।
আগামী ১ জানুয়ারি স্টুডেন্ট ডে পালন করার নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, বছরের প্রথম দিনটি পড়ুয়াদের জন্য বরাদ্দ থাক। যদিও সেটা ছুটির দিন। তবে কি কি অনুষ্ঠান করা যায় সেটা ঠিক করতে নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
জানুয়ারি মাসে দুই পর্যায়ে দুয়ারে সরকার প্রকল্প করার নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মকর সংক্রান্তির কথা মাথায় রেখেই দুটি পর্যায়ে ক্যাম্প করার নির্দেশ। ১ জানুয়ারি থেকে ১০ জানুয়ারি এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে দুয়ারে সরকার ক্যাম্প করা হবে।
উত্তর ২৪ পরগনার বেশ কয়েকটি পুরসভার কাজে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী। বিশেষ করে ভাটপাড়া, টিটাগড়, ব্যারাকপুর, কামারহাটি ও দমদম পুরসভার কাজ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী। পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারি খলিল আহমেদকে মঞ্চ থেকেই নির্দেশ দিলেন রাজ্যের প্রতিটি পুরসভা ও পুরনিগমে একজন করে পর্যবেক্ষক নিয়োগ করার। তাঁরা এলাকায় এলাকায় ঘুরে উন্নয়ন ও কাজের থতিয়ান দেখে নিয়মিত রিপোর্ট দেবেন।
বিধায়কদের কাজেও ক্ষুব্ধ হন মুখ্যমন্ত্রী। এবার থেকে বিধানসভা অধিবেশন চলাকালীন কোনও বিধায়ক বাইরে গেলে অনুমতি নিতে হবে বলে নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
কচুয়াধাম, চাকলাধাম ও বহানগরের ওঙ্কারধামে বড় গেট কেন হয়নি সেটা জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী। দেড় বছরেও কাজ শুরু হয়নি শুনে ক্ষুব্ধ হন তিনি। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে নির্দেশ, স্থানীয় বিধায়ক ও সাংসদদের সঙ্গে নিয়ে সমস্যা সমাধান করার। মধ্যমগ্রামে অনুকুল ঠাকুরের আশ্রমের কাজও তদারকি করেন তিনি।
প্রতিটি জেলাশাসকদের দশজন করে নোডাল অফিসার নিয়োগ করার নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এরা একেকটি প্রকল্পের কাজে যুক্ত থাকবেন। ফলে জেলাশাসকদের কাজ কিছুটা কমবে। জেলাশাসক পুরো কর্মকাণ্ডের উপর নজর রাখবেন। তিনি জানান, সরকারি আধিকারিকের অভাব মেটানোর জন্য ৫০ জন আমলা নিয়োগ করা হচ্ছে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী।