নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলা(Bengal) দখলের ডাক দিয়েও একুশের নির্বাচনে কলকে পায়নি বিজেপি(BJP)। দৌড় থেমে গিয়েছে ৭৭টি আসন পেয়েই। তারপর থেকেই সময় যতই গড়াচ্ছে ততই ফিকে হচ্ছে বাংলার বুকে গেরুয়া শিবির। নিত্যদিন দল ছাড়ছেন নেতা থেকে কর্মীরা। দল ছাড়ছেন সাংসদ ও বিধায়কেরাও। মুখ ফিরিয়েছেন আমজনতাও। এই অবস্থায় ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় জয়ের মুখ দেখতে বামাদের(Left) হাত ধরতে চাইছে গেরুয়া শিবির। তারও আগে ২০২৩ সালের রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনে নীচুতলায় বামাদের হাত ধরতে মরিয়া গেরুয়া শিবির। তাই গেরুয়া ব্রিগেডের নেতা থেকে কর্মী, সাংসদ থেকে বিধায়ক এখন বার বার বামেদের পাশে নিয়ে তৃণমূলের(TMC) বিরুদ্ধে মহাজোট গড়ার ডাক দিচ্ছেন। কিন্তু এবার কংগ্রেসের(Congress) তরফে জানিয়ে দেওয়া হল পঞ্চায়েত নির্বাচন হোক কী লোকসভা নির্বাচন, বিজেপির হাত ধরলে বামেদের পাশে থাকবে না কংগ্রেস। আর সেই বার্তা পেয়েই এবার নড়েচড়ে বসল বামেরা।
আরও পড়ুন গরুপাচার মামলায় অনুব্রত’র জামাইবাবুকে তলব ইডি’র
সম্প্রতি পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নন্দকুমারে(Nandakumar) একটি সমবায় নির্বাচনে তৃণমূলকে হারাতে বিজেপির হাত ধরেছিল বামেরা। সেই নির্বাচনে বাম-বিজেপি জোট নিরঙ্কুশ জয়ের মুখ দেখেছে। এর পর থেকেই রাজ্যজুড়ে হাওয়া উঠে গিয়েছে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে নীচুতলায় বামেদের সঙ্গে জোট গড়ে ভোটে লড়বে বিজেপি। শুধু হাওয়া ওঠাই নয়, বিজেপির নেতারা রীতিমত প্রকাশ্যে বামেদের সঙ্গে নিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে মহাজোট গড়ার কথা বলে বেড়াচ্ছেন। তার জেরে বাংলায় বামেদের অবস্থান নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠেছে তেমনি জাতীয় স্তরেও বাম শিবিরে অস্বস্তি বাড়ছে। এই অবস্থায় কেরল ও ত্রিপুরা থেকেও বাংলায় নন্দকুমার মডেল নিয়ে তীব্র আপত্তি উঠেছে। অবিলম্বে এই ধরনের ঘটনা যাতে ঠেকানো যায় তার জন্যও কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এরই মাঝে কড়া অবস্থান নিচ্ছে কংগ্রেসও। আলিমুদ্দিন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রদেশ কংগ্রেসের তরফে বামেদের স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে পঞ্চায়েত হোক কী লোকসভা, ওপরের তলা হোক কী নীচু তলা, বিজেপির সঙ্গে বামেরা জোট গড়লে বামেদের পাশে থাকবে না কংগ্রেস। প্রয়োজনে সেক্ষেত্রে দল একা লড়বে। এমনকি নীচুতলায় প্রয়োজনে তৃণমূলের সঙ্গেও জোট গড়তে পারেন দলের কর্মীরা।
আরও পড়ুন কয়লাপাচার কাণ্ডে এবার ইডির জেরা কলকাতা পুলিশের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনারকে
ঘরে বাইরে সমালোচনার মুখে পড়ে এবার নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয়েছে আলিমুদ্দিন। নন্দকুমারের ঘটনার যাতে আর পুনঃরাবৃত্তি না হয় তা দেখতে এবার দলীয় কমিশন গড়ছে আলিমুদ্দিন। পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমারে বহরমপুর সমবায় সমিতির নির্বাচনে ৬৩-০ ফলে জয়ী হয়েছে বাম-বিজেপির ‘সমবায় বাঁচাও মঞ্চ’। যদিও ঘটনাটি ঘিরেও জলঘোলা শুরু হওয়ায় সমবায় বাঁচাও মঞ্চ আনুষ্ঠানিক ভাবে বিবৃতি দিয়ে নন্দকুমারের ঘটনায় বিজেপির কোনও যোগসূত্র অস্বীকার করেছে। দলের রংহীন এই ধরনের নির্বাচনে ‘জোট’ প্রতিষ্ঠা করাও মুশকিল। কিন্তু সিপিএম সূত্রের খবর, নন্দকুমারের সমবায় ঘিরে বাম-বিজেপি জোটের তত্ত্ব এমন ভাবে প্রচার পেয়েছে, তার আঁচ এসে পড়েছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট পর্যন্ত। বিজেপির সঙ্গে কোনও সংস্রব কোনও ভাবে সেখানে সত্যিই ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখার জন্য সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশেই কমিশন গড়া হচ্ছে। সিপিএম সূত্রের খবর, কমিশনের দায়িত্বে থাকবেন দলের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর এক বর্ষীয়ান সদস্য। কমিশন যদি মনে করে সত্যি করে বিজেপি হাত ধরে ভোটে জিতেছেন বাম সদস্যরা তাহলে তাঁদের প্রত্যেককে ইস্তফা দিতে বলা হবে। তাঁরা রাজী না হলে তাঁদের দল থেকে বহিষ্কারও করতে পারে আলিমুদ্দিন।