-273ºc,
Friday, 2nd June, 2023 3:40 am
নিজস্ব প্রতিনিধি: বিজেপি(BJP) কর্মীদের বিক্ষোভের মধ্যেই কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীতে রবিবার সকালে আসানসোল(Asansol) আদালতে জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে(Jitendra Tiwari) পেশ করে পুলিশ(Police)। শুনানি শেষে আপাতত ৮ দিনের জন্য তাঁকে Police Custody-তে পাঠিয়েছে আদালত। যদিও সুপ্রিম কোর্টে আগামিকালই রয়েছে জিতেন্দ্র তিওয়ারির জামিন চেয়ে দায়ের হওয়া মামলার শুনানি। তাঁর অনুগামীরা আপাতত দেশের শীর্ষ আদালতের দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন যদি সেখান থেকে কোনও সুরাহা মেলে। যদিও খুব দ্রুত যে ছাড়া নাও পাওয়া যেতে পারে সেটা মনে করেই এদিন আদালতে ঢোকার মুখে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে জিতেন্দ্র দাবি করেন, ‘শেষ কথা তৃণমূল কংগ্রেস বলবে না। শেষ কথা পুলিশও বলবে না। শেষ কথা বলবেন আসানসোলের মানুষ ২০২৪ সালে।’ অর্থাৎ জিতেন্দ্র নিজেও বুঝে গিয়েছেন তাঁর মুক্তি খুব দ্রুত হচ্ছে না।
আরও পড়ুন ৮ লক্ষ পড়ুয়াকে ১৪০০ কোটির স্কলারশিপ দিচ্ছে মমতার সরকার
গতবছর ১৪ ডিসেম্বর আসানসোল পুরনিগমের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের রামকৃষ্ণডাঙাল এলাকায় একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে কম্বল বিলির ঘটনায় পদপিষ্ট হয়ে ৩জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। সেই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবার জিতেন্দ্রর স্ত্রী চৈতালী তিওয়ারি। আসানসোল পুরনিগমের প্রাক্তন মেয়র ও পাণ্ডবেশ্বর বিধানসভা কেন্দ্রের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক জিতেন্দ্র এবং তাঁর স্ত্রী সেই অনুষ্ঠানের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন বলেই পুলিশের দাবি। সেই সঙ্গে তাঁদের দাবি, ওই অনুষ্ঠানের জন্য পুলিশ তথা প্রশাসনের কোনও অনুমতিই নেওয়া হয়নি। এমনকি ওই অনুষ্ঠান যাতে সুষ্ঠ ভাবে হয় তার জন্য কোনও ব্যবস্থাও করা হয়নি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। তাঁরা মঞ্চ ছাড়ার পরে দুর্ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় সমালোচনার মুখে পড়েন সস্ত্রীক জিতেন্দ্র। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ একাধিক বার জিতেন্দ্র এবং তাঁর স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। কিন্তু তারপরেও অভিযোগ ওঠে তাঁরা তদন্তে সহযোগিতা করছেন না।
আরও পড়ুন মদ খেলেই দিতে হবে Cow-Cess, লাগু হিমাচলে
এরপরেই গত ১ মাস ধরে আর সেভাবে প্রকাশ্যে দেখা মিলছিল না সস্ত্রীক জিতেন্দ্রর। এমনকি তাঁদের বাড়িতেও তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এরপর পুলিশ বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারা যা (অনিচ্ছাকৃত খুনের ঘটনায় ব্যবহার করা হয় সেই ধারা সহ অনিচ্ছাকৃত খুনের চেষ্টার ৩০৮ ধারা এবং যৌথভাবে কোনও ঘটনা সংগঠিত করার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ৩৪ ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ। জিতেন্দ্র ও চৈতালী সেই ঘটনার জেরে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করলেও সেখান থেকে কোনও রক্ষাকবচ মেলেনি কিবা সিঙ্গেল বেঞ্চে কিবা ডিভিশন বেঞ্চে। এরপরেই কার্যত গা ঢাকা দেন তাঁরা। কিন্তু পুলিশ গোপনে তাঁর খবর রাখছিল। সেই সূত্রেই জানা যায় তিনি যোগীরাজ্য উত্তরপ্রদেশে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন। এরপর শনিবার অর্থাৎ গতকাল দিল্লির কাছে নয়ডায় যমুনা এক্সপ্রেসওয়ে থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে বাংলার পুলিশ। রাতেই তাঁকে দিল্লি থেকে বিমানে কলকাতায় এনে সড়কপথে আসানসোলে নিয়ে আসা হয়। রাতটুকু আসানসোল উত্তর থানায় রেখে এদিন সকালেই তাঁকে আদালতে তোলে পুলিশ।
আরও পড়ুন মমতার বাংলায় বাড়ছে RSS, ১ বছরেই নয়া ৫৮৩ শাখা
জিতেন্দ্রের গ্রেফতারির জেরে আসানসোলে বিজেপির কর্মী সমর্থকেরা পুরোপুরি দুই ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে। জিতেন্দ্র’র অনুগামীরা এদিন আদালত চত্বরে পুলিশের গাড়ি ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখালেও শহরের হেভিওয়েট বিজেপি নেতারা গোটা ঘটনায় বিন্দুমাত্র প্রতিবাদ করেননি এখনও পর্যন্ত। কার্যত জিতেন্দ্র বিরোধী বিজেপির নেতাকর্মীরা এই ঘটনায় মুখে কুলুপ আঁটলেও তাঁরা যে এই ঘটনায় বেশ খুশি তা তাঁদের ঘনিষ্ঠমহল সূত্রে জানা গিয়েছে। এমনকি যে রামকৃষ্ণডাঙাল এলাকায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল সেখানেও সেভাবে কোনও অভিব্যক্তির বহিঃপ্রকাশ দেখা যাচ্ছে না। এদিন আদালতে নিজের জন্য সওয়াল করতে গিয়ে জিতেন বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টে আগামিকাল এই মামলার শুনানি রয়েছে। সে জন্য পুলিশ হেফাজত দিন। কিন্তু ২ দিনের জন্য দিন। তারপরে সুপ্রিম কোর্টের রায় যা হবে তা দেখে প্রয়োজন হলে আরও ১২ দিন পুলিশ হেফাজত দিয়ে দেবেন। কিন্তু আজ ২ দিনের পুলিশ হেফাজত দিন।’ পুলিশ আবার তাঁকে ১১ দিনের হেফাজতে চেয়েছিল। বিচারক অবশ্য দু’পক্ষের সওয়াল জবাবের পর জিতেনকে ৮ দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।