এই মুহূর্তে




ধান্যকুড়িয়ার গাইন বাড়ির ইতিহাস জ্বলজ্বল করলেও দুর্গাপুজোর জৌলুস অনেকটাই ফিকে




সুব্রত রায়, বসিরহাট: উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বসিরহাটের ধান্যকুরিয়ার ঐতিহ্যবাহী ইতিহাস ও গাইন রাজবাড়ি(Gain Rajbari) এবং তার স্থাপত্য নিয়ে রয়েছে এক বড় নজির বিহীন প্রেক্ষাপট।ধান্যকুরিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা জেলার এক প্রাচীন গ্রাম। যা একসময় সুন্দরবনের(Sundarban) অন্তর্ভুক্ত ছিল। বর্তমানে তা বসিরহাট সাব ডিভিশনের অন্তর্গত। কথিত আছে, ১৭৪২ সালে জগন্নাথ দাস তার পরিবার নিয়ে এই গ্রামে এসে বসবাস শুরু করেন। সে সময় মারাঠা বর্গিরা বাংলায় আক্রমণ করলে অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ধান্যকুরিয়ায় চলে আসেন। এই সময়েই মণ্ডল, সাঊ, গাইন এবং বল্লভ পরিবারও এখানে এসে স্থায়ী বসবাসকারী হয়ে ওঠেন । তাদের বেশিরভাগই ছিলেন ব্যবসায়ী ও কৃষক। পরে সেন, লাহা, রায় এবং ভট্টাচার্য পরিবারেরাও এই গ্রামে বসবাস শুরু করেন ধীরে ধীরে।

এ সমস্ত সফল ব্যবসায়ীরা ধান্যকুরিয়ায় ইউরোপীয় স্থাপত্যের আদলে দৃষ্টিনন্দন প্রাসাদ তৈরি করেন। করিন্থিয়ান ও আয়নীয় স্তম্ভ, মিনার এবং নানা মূর্তি দিয়ে শোভিত এই বাড়িগুলো আজও তাদের তৎকালীন অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সাক্ষ্য বহন করছে আজও। শুধু প্রাসাদ নয়, তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন। বিশেষত গাইন, সাঊ এবং বল্লভ পরিবারগুলোই গ্রামটির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ধান্যকুরিয়া একসময় ব্যবসা ও স্বাস্থ্যসেবার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল। মার্টিন বার্ন কোম্পানির রেলওয়ের হাসনাবাদ-শ্যামবাজার লাইনে ধান্যকুরিয়া স্টেশনে ট্রেন থামত, যা গ্রামটির গুরুত্বকে প্রমাণ করে।

১৮২০ সালে রামকিশোর গাইন ধান্যকুরিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তার সাথে সাঊ এবং বল্লভ পরিবার মিলে ঘি, চিনি, পাট ও গুড়ের ব্যবসা শুরু করেন। এর ফলে গ্রামটি সমৃদ্ধি লাভ করে এবং তাদের লাভের টাকাতে জমিজমা ও অন্যান্য ব্যবসায় বিনিয়োগ করা শুরু হয়।
আজকের দিনে ধান্যকুরিয়া পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় একটি স্থান হয়ে উঠেছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলিকে পর্যটনের জন্য উন্নত করতে উদ্যোগী হয়েছে। এই গ্রামে অনেক প্রাসাদ এখনও অক্ষত অবস্থায় রয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো গাইন বাগান বাড়ি। এটি টাকি রোড(Taki Road) সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত এবং প্রায় ৩০ একর জমির উপর বিস্তৃত। এটি ১৯ শতকের মাঝামাঝি সময়ে তৈরি হয় এবং তখনকার ধনী ব্যবসায়ী মহেন্দ্রনাথ গাইন ও ফনি গাইন ব্রিটিশ ব্যবসায়ীদের বিনোদনের জন্য এটি নির্মাণ করেছিলেন।গাইন বাগান বাড়ি বা গাইন ক্যাসেল, ইউরোপীয় দুর্গের অনুকরণে তৈরি হয়। বর্তমানে কিছুটা ধ্বংসপ্রাপ্ত হলেও আজও এর স্থাপত্যশৈলী পর্যটকদের মুগ্ধ করে। ১৯৬০-এর দশকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার(Westbengal Goverment) এটি অধিগ্রহণ করে এবং সেখানে একসময় একটি অনাথ আশ্রমও পথ চলা শুরু করে।

দুইশ বছরের পুরনো গাইন রাজবাড়ি ধান্যকুরিয়ার একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থাপনা। এর ২১টি বিশাল স্তম্ভ এই প্রাসাদের রাজকীয় বৈশিষ্ট্য ধরে রেখেছে আজও। বর্তমানে এই বাড়িতে শুধু মনজিত গাইন ও তার পরিবার বসবাস করেন। প্রাসাদে মোট ৬০টি কক্ষ রয়েছে এবং বাগানের এক পাশে ঠাকুর দালান এবং শ্যামসুন্দর জিউ মন্দির অবস্থিত। ১৮২১ সালে নির্মিত এই মন্দিরটি এল-আকৃতির এবং গোলাপি রঙে রঞ্জিত।গাইন রাজবাড়ি বহু বাংলা, হিন্দি এবং বিদেশি চলচ্চিত্রে প্রদর্শিত হয়েছে । এই বাড়িতেই মহানায়ক উত্তম কুমার শুটিং করতে গিয়েছিলেন। সেখানে জনপ্রিয় চলচ্চিত্র সত্যম্বেষী, সাহেব বিবি গোলাম ,সূর্যতপা সহ একাধিক বাংলা সিনেমার শুটিং হয়।এটি বর্তমানে শুটিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। শুটিং থেকে প্রাপ্ত অর্থ প্রাসাদ রক্ষণাবেক্ষণের কাজে ব্যয় করা হয়। তবে দর্শনার্থীদের এই বাড়ির অভ্যন্তরে প্রবেশের অনুমতি নেই।গাইন রাজবাড়ির বামদিকে একটি সুন্দর তিনতলা মিনার রয়েছে, যা নজর মিনার নামে পরিচিত। এর স্থাপত্যশৈলীতে ইসলামী এবং ইউরোপীয় শৈলীর মিশ্রণ স্পষ্টভাবে দেখা যায়। এই সমস্ত স্থাপনাগুলি ধান্যকুরিয়াকে আজও পর্যটকদের কাছে একটি আকর্ষণীয় ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়। এই বাড়ির মূল ফটকে দুটি সিংহ ছিল। একটি আগে চুরি হয়ে যায়। অপরটি বর্তমান ওই বাড়ির প্রজন্মরা বিক্রি করে দেয়। তারপর মুড়ি ফটোকে দুপাশে দুটি কৃত্রিম গম্বুজ তৈরি করা হয়। ২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই গাইন বাড়িতে নিয়ম মেনে দুর্গাপুজো(DurgaPuja) হচ্ছে। তবে পুজোর জৌলুস অনেক ফিকে হয়ে এসেছে। এখন আর গ্রামের মানুষজন সেখানে পাত পেরে বসে খায় না। মা দুর্গাকে বৈষ্ণব মতে পুজো করা হয়। মূলত ফল ও নৈবদ্য দিয়ে মায়ের পূজোর আয়োজন করা হয়। রাজ্যের পর্যটন দপ্তরের পক্ষ থেকে পুজোর কদিন বহু মানুষকে বসে করে এই গাইন বাড়িতে দুর্গা পুজো দেখানোর আয়োজন করে থাকে পরিবহন দপ্তর(Transport Department)।




Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

কোলের শিশুকে বিক্রি করতে এসে সাধারণ মানুষ ও পুলিশ হাতে ধরা পড়ল এক দম্পতি

ফের ভুয়ো শিক্ষক নিয়োগের ঘটনায় সিআইডির হাতে গ্রেফতার প্রধান শিক্ষক

সাংসারিক অশান্তির জেরে স্ত্রীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করে আত্মহত্যা করলেন স্বামী

বীরভূমের মুরারইয়ে পাথরের লরির তলায় চাপা পড়ে মৃত্যু আদিবাসী বালকের, লরিতে ও রাজস্ব অফিসে আগুন

দুদিন ধরে মায়ের লাশ আগলে ছেলে, রবিনসন স্ট্রিটের ছায়া এবার আলিপুরদুয়ারে  

ট্রেনের গরমে অবহেলায় মৃত্যু বৃদ্ধার, সহযাত্রীরা দেখেও মুখ ঘুরিয়ে চলে গেলেন

Advertisement




এক ঝলকে
Advertisement




জেলা ভিত্তিক সংবাদ

দার্জিলিং

কালিম্পং

জলপাইগুড়ি

আলিপুরদুয়ার

কোচবিহার

উত্তর দিনাজপুর

দক্ষিণ দিনাজপুর

মালদা

মুর্শিদাবাদ

নদিয়া

পূর্ব বর্ধমান

বীরভূম

পশ্চিম বর্ধমান

বাঁকুড়া

পুরুলিয়া

ঝাড়গ্রাম

পশ্চিম মেদিনীপুর

হুগলি

উত্তর চব্বিশ পরগনা

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

হাওড়া

পূর্ব মেদিনীপুর