নিজস্ব প্রতিনিধি: আগামী ১৮ জুলাই অর্থাৎ সামনের সোমবার দেশের রাষ্ট্রপতি পদের নির্বাচন(Presidential Election)। সেখানেই এনডিএ শিবিরের প্রার্থী হয়েছেন দ্রৌপদী মুর্মু। বিরোধীরা দাঁড় করিয়েছে যশোবন্ত সিনহাকে। অঙ্কের হিসাবে দ্রৌপদীর জয় কার্যত সুনিশ্চিত। কিন্তু এনডিএ শিবিরেই আশঙ্কা রয়েছে ব্যাপক হারে ক্রশ ভোটিং হতে পারে এই নির্বাচনে। কেননা এই নির্বাচনে এবারে কোনও দলই তাঁদের সাংসদ ও বিধায়কদের ওপরে কোনও হুইপ জারি করতে পারবে না। তারওপর ভোট হবে গোপন ব্যালট পেপারে। এই অবস্থায় নতুন করে শুক্রবার জল্পনা বাড়িয়ে দিয়েছেন তমলুকের তৃণমূল সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী(Dibendu Adhikari)। তিনি জানিয়েছেন, ইউপিএ প্রার্থী যশোবন্ত সিনহাকে তিনি ভোট দেবেন। আর সেটাও দিল্লি গিয়ে। শারীরিক অসুস্থতার কারণে ভোট না দিতেও যেতে পারেন তাঁর বাবা তথা কাঁথির তৃণমূল সাংসদ শিশির অধিকারী(Sishir Adhikari)। আর এই ঘটনা ঘিরেই তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের(Kunal Ghosh) প্রতিক্রিয়া, ‘ডাম মে কুছ কালা হ্যায়’।
শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল(TMC) ছাড়ার পরে পরেই অধিকারী পরিবারের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে তাঁদের। কার্যত দুই তরফে কোনও যোগাযোগ নেই বললেই চলে। প্রকাশ্যে দিব্যেন্দু অবশ্য দলবিরোধী কোনও কার্যকলাপ না করলেও প্রায় সবাই ধরে নিয়েছেন তিনি বিজেপির(BJP) দিকেই পা বাড়িয়ে দিয়েছেন। শিশিরবাবু একুশের বিধানসভা নির্বাচনের সময় বিজেপির সভায় শুধু যে হাজির হয়েছিলেন তাই নয়, মঞ্চেও উঠেছিলেন। সেই ঘটনাকে তুলে ধরেই তৃণমূলের তরফে তাঁর সাংসদ পদ খারিজের আবেদন জানানো হয় লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার কাছে। যদিও সেই বিষয়টি এখনও ঝুলে আছে। কিন্তু দিব্যেন্দুকে নিয়ে সে রকম কোনও পদক্ষেপ এখনও নিতে পারেনি তৃণমূল। এই অবস্থায় দিব্যেন্দু জানিয়েছেন, দল তাঁকে বিধানসভায় এসে ভোট দেওয়ার কোনও নির্দেশ দেয়নি। কোনও নোটিসও পাঠায়নি। কিন্তু তিনি দলের সমর্থিতপ্রার্থী যশোবন্ত সিনহাকেই ভোট দেবেন। তবে সেটা দিল্লি গিয়ে। তাঁর বাবাকে চিকিৎসকেরা দিল্লি গিয়ে ভোট দেওয়ার অনুমতি এখনও দেয়নি। তবে শিশিরবাবু একান্তেই যেতে চাইলে তিনি বাবার সঙ্গে দিল্লি যাবেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে হঠাৎ করে দিব্যেন্দুর এই ভোলবদল কেন? কুণাল ঘোষ জানিয়েছেন, ‘উনি বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন সেতা সবাই ধরেই নিয়েছেন। উনি যে বিজেপির প্রার্থীকেই ভোট দেবেন সেটাও সবাই জানেন। এখন আর যশোবন্ত সিনহাকে ভোট দেওয়ার গল্প দিয়ে কোনও লাভ হবে না। ওনার যদি সত্যি করেই যশোবন্ত সিনহাকে ভোট দেওয়ার থাকে তাহলে রাজ্য বিধানসভায় এসে ভোট দিন। সেই সঙ্গে ১৭ জুলাই কাঁথি শহরে একুশে জুলাইয়ের সমাবেশের যে প্রস্তুতি সভা হবে সেখানে আসুন। এগুলো আদতে আই ওয়াশ যাতে সাংসদ পদ বাতিল না হয়।’ ওয়াকিবহাল মহলের ধারনা দিব্যেন্দু তাঁর সাংসদ পদ ধরে রাখা নিয়ে চিন্তিত। ২০২৪ সালে তাঁকে যে বিজেপি টিকিট দেবে এমন কোনও নিশ্চয়তা তিনি পাননি। কেননা বিজেপি মুখে পরিবারতন্ত্রের বিরোধিতা করায় চট করে দিব্যেন্দুকে চিঠি দিতে পারবে না। আর টিকিট দিলেও দিব্যেন্দু যে জিতবেন সে নিশ্চয়তাও নেই। বরঞ্চ কাঁথি ও তমলুক দুই লোকসভা কেন্দ্রেই একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পরে খুব ভাল অবস্থায় আছে তৃণমূল। এই অবস্থায় দিব্যেন্দু সম্ভবত চাইছেন তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে তুলতে। বর্ধমান পূর্বের সাংসদ সুনীল মণ্ডল বিজেপিতে গিয়েও তৃণমূলে ফিরে এসেছেন। এবার দেখার বিষয় দিব্যেন্দুর ক্ষেত্রে কী হয়। অনেকেই মনে করছেন, অধিকারীদের সঙ্গে তৃণমূলের বিরোধ আগামী দিনে কমতে পারে। কেননা এটা অধিকাড়ীরাও বুঝছেন ২০২৪ এর নির্বাচনে বিজেপি জিতলেও বাংলায় তাঁদের ভাল ফল করার কার্যত কোনও সম্ভাবনাই নেই। তাই বিজেপিতে পড়ে থেকে তাঁদের বিড়াম্বনা আরও বাড়বে বৈকি কমবে না, এটা তাঁরা নিজেরাও বোঝেন। সম্ভবত সেই ঘর ওয়াপ্সির তাস হয়ে উঠতে চলেছেন দিব্যেন্দু অধিকারী।