নিজস্ব প্রতিনিধি: জমিদারের করা পুজো এখন বারোয়ারি পুজোতে পরিণত হয়েছে। সত্যি এই ঘটনায় ঘটেছে মুর্শিদাবাদে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে যেমন ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপুজো হয় জমিদার বাড়িতে। ঠিক তেমনই মুর্শিদাবাদের রানিনগরের সীমান্তবর্তী এলাকায় থাকা একটি গ্রাম রাধাকান্তপুরে একসময় জাঁকিয়ে আয়োজন হত দুর্গাপুজোর। সেখানকার দুর্গা-কালীমন্দিরে পুজো করত জমিদার বাড়ির লোকজন। কিন্তু কালক্রমে জমিদারদের জমানা ফুরিয়েছে। কিন্তু বন্ধ হয়নি দুর্গাপুজো। একই মেজাজে এলাকার মানুষদের হাতে করেই চলছে দেবীর আরাধনা। তাই জমিদার বাড়ির পুজো এখন পরিণত হয়েছে বারোয়ারির পুজোতে।
১৩২৫ সালে প্রথমে পুজো শুরু হয়েছিল খড়ের চালার মন্দিরে। পরবর্তীতে ১৩৬১ সালে জমিদার পূর্ণচন্দ্র বিশ্বাসের উদ্যোগে পাকা মন্দির নির্মাণ করা হয়। এখনও সেখানেই হয় পুজো। নিয়ম রয়েছে, ভাদ্র মাসে পুজোর কোনও কাজ হয় না। সেই কারণে শ্রাবন মাসেই দুর্গাপ্রতিমার কাঠামোয় মাটির প্রলেপের কাজ করা হয়। বাকি কাজ হয় আশ্বিন মাসে। বর্তমান পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা অর্ধেন্দু সরকার এই পুজোর বিষয়ে জানিয়েছেন, ‘শুরু থেকেই এই নিয়ম চলে আসছে। কেউ ব্যতিক্রম করতে পারেনি। পূর্ণচন্দ্র বিশ্বাসের বংশ ধরেরা কেউ এখানে থাকেন না। জানা যায়, বছর চল্লিশেক আগে একবার ঢাকি রাগ করে মায়ের পুজোয় ঢাক বাজাননি। পরের পুজো আসার আগেই তিনি পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়ে পড়েন। অনেক চিকিৎসা সত্ত্বেও বিশেষ লাভ হচ্ছিল না। তখন দেবীদুর্গা তাকে স্বপ্নাদেশে জানিয়েছিলেন, পুজোয় ঢাক বাজাতে। তারপরই সে অলৌকিক ভাবে সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। তবে সেই ঢাকি এখন আর নেই। কিন্তু তারপর থেকে তাঁর বংশধরেরাই ঢাক বাজাচ্ছেন। এমনকি পুরোহিত ও প্রতিমা তৈরির ক্ষেত্রেও একই নিয়ম।’ একই পুরোহিত কিংবা মৃৎশিল্পীদের বংশধরেরা দায়িত্ব পালন করে।
জানা গিয়েছে, জমিদার পূর্ণচন্দ্র বিশ্বাসের বংশধরেরা কেউ আর গ্রামে থাকেন না। তারা উদ্যোগ নেন না পুজোর ব্যাপারে। তবে বাড়ি ও মন্দির রয়েছে, আর সেখানেই হাত লাগিয়ে মায়ের পুজো করেন এলাকার বাসিন্দারা। তবে মণ্ডপ সজ্জা ও জাঁকজমক না থাকায় কেউ আর বেশি জমিদার বাড়িতে ভিড় করে না। আর্থিক সাহায্য কম পাওয়া যায়। এই বিষয়ে পুজোর বর্তমান আরেক উদ্যোক্তা মলয় সরকার জানিয়েছেন, ‘থিম আর জাঁকজমক সম্পন্ন মণ্ডপের যুগে একটা পুজো দেখে তো মন ওঠে না দর্শকদের। তাই এখন যা কিছু আয়োজন তা ওই যুগোপোযোগী হতে হবে। কিন্তু মন্দিরের পুজোয় সেসব করা নিয়ম নেই যে! তাই গ্রামের মানুষও ছুটে যায় একাধিক মণ্ডপে।’