নিজস্ব প্রতিনিধি: আর ঠিক ৮ দিন। তারপরেই ১১ ডিসেম্বর বসতে চলেছে টেটের(TET) আসর। মানে রাজ্যের প্রাথমিক সরকারি স্কুল ও সরকার পোষিত স্কুলগুলিতে শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগের জন্য পরীক্ষা। ১১ হাজার শূন্যপদের জন্য ইতিমধ্যেই আবেদনকারীর সংখ্যা প্রায় ৭ লক্ষ। গত ৩০ নভেম্বর থেকে সেই পরীক্ষার জন্য অ্যাডমিট কার্ড(Admit Card) দেওয়ার পালা শুরু হয়েছে। কিন্তু সেই অ্যাডমিট কার্ড নিয়েই এবার বড়সড় দুর্নীতির(Corruption) অভিযোগ উঠে গেল। এবারের টেট পরীক্ষা যাতে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ভাবে হয় তার জন্য রাজ্য সরকার(West Bengal State Government) শুধু ৭০ কোটি টাকা খরচ করছে তাই নয়, নানা দুর্নীতির কারণে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদও(West Bengal Primary Education Board) এবার স্বচ্ছতা ব্জায় রেখে পরীক্ষা নিতে চাইছে। কিন্তু এখন ভুয়ো অ্যাডমিট কার্ডের ইস্যুটি সামনে চলে আসায় পরীক্ষার্থী থেকে আমজনতার মধ্যে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, এবারের পরীক্ষা ঘিরেও কী দুর্নীতির জাল ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে? এবারেও কী পরীক্ষা না দিয়েও বা তাতে পাশ না করেও চাকরি পেয়ে যাবেন অযোগ্যরা?
আরও পড়ুন চোখের ছবি মিলিয়ে এবার রেশন দেওয়া হবে বাংলায়
এখনও পর্যন্ত ঠিক আছে ১১ হাজার শূন্যপদের জন্য টেটে পাশ করা পরীক্ষার্থীদের ইন্টারভিউ নেওয়া হবে। তারপরেই চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। রাজ্য। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষকতার জন্য এই নিয়োগ করা হচ্ছে। যেহেতু নিয়োগ দুর্নীতির কারণে রাজ্য সরকার, রাজ্যের শাসক দল এবং প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ বেশ চাপের মধ্যে আছে তাই প্রশাসন মরিয়া স্বচ্ছভাবে পরীক্ষা আয়োজন করতে। যেজন্য নেওয়া হচ্ছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য। আয়ের চেয়ে প্রায় দশগুণ বেশি খরচ হলেও, স্বচ্ছতার স্বার্থে ৭০ কোটি টাকা খরচ করছে রাজ্য সরকার। সহস্রাধিক পরীক্ষাকেন্দ্রে থাকছে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সশরীরে নজরদারির পাশাপাশি সিসি ক্যামেরা এবং হ্যান্ড হেল্ড মেটাল ডিটেক্টর থাকছে। পরীক্ষাকেন্দ্রে কেউ যাতে অসাধু উপায় অবলম্বন না করতে পারেন, সেজন্য প্রযুক্তির সাহায্য নিচ্ছে পর্ষদ। বাছাই করা কিছু কেন্দ্রে থাকবে ইন্টারনেট জ্যামার। পরীক্ষাকেন্দ্রে স্মার্ট ওয়াচ, মোবাইল, ক্যালকুলেটর সহ সব ধরনের বৈদ্যুতিন সামগ্রীর উপর নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়েছে। এছাড়া, প্রশ্নপত্র ছাপা, তা পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া, উত্তরপত্র বয়ে আনা, পরীক্ষকদের সাম্মানিক, যাঁরা খাতা দেখবেন তাঁদের ফি বাবদ খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। সঙ্গে যোগ হয়েছে পরীক্ষাকেন্দ্রের নিরাপত্তার খরচ। এখানেই শেষ নয়, যাঁরা টেট পাস করবেন তাঁদের নিয়োগের আগে হবে ইন্টারভিউ। গোটা সাক্ষাৎপর্ব ভিডিওগ্রাফি হবে। সেই খাতেও হবে বাড়তি খরচ।
আরও পড়ুন অভিষেকের সভার আগে ভূপতিনগরে বিস্ফোরণ, মৃত ৩
কিন্তু এত কিছুর পরেও সামনে এসেছ ভুয়ো অ্যাডমিট কার্ডের বিষয়টি। গতকালই পরীক্ষার্থীদের অ্যাডমিট কার্ড হিসেবে দাবি করে কিছু ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, কারও পরীক্ষাকেন্দ্র দুবাইতে তো কারও বাংলাদেশ বা পাকিস্তানে। তবে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করে দিয়েছে, সবটাই ভুয়ো। এরকম একটিও অ্যাডমিট কার্ড তাঁরা ইস্যু করেনি। তাই কে বা কারা এই কাজ করেছে, তা জানতে তাঁরা কলকাতা পুলিশের সাইবার ক্রাইম শাখার দ্বারস্থ হয়েছেন। পর্ষদের দাবি, তাঁদের ওয়েবসাইট থেকে অ্যাডমিট কার্ড ডাউনলোড করছেন পরীক্ষার্থীরা। এই ভুয়ো অ্যাডমিট কার্ডগুলির ক্ষেত্রে ডাউনলোড করার পরই তা বিকৃত করা হয়েছে। তবে এসবের জেরে ইতিমধ্যেই পর্ষদের তরফে পরীক্ষার্থীদের জন্য নতুন একটি বিধিনিষেধের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে পর্ষদ। সেখানে বলা হয়েছে স্মার্টওয়াচ, মোবাইল তো বটেই, ছাত্রীরা কোনও গয়না পরেও পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকতে পারবেন না। প্রত্যেকের বায়োমেট্রিক উপস্থিতি পরীক্ষা করা হবে। পরীক্ষাকেন্দ্রগুলির বাইরে ১৪৪ ধারা জারির পাশাপাশি পুলিশ যাতে সক্রিয় থাকে, তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে রাজ্য প্রশাসনকে।