নিজস্ব প্রতিনিধি: মাত্র ৮ দিন আগে বদল হয়েছেন পুলিশ কমিশনার। মনোজ ভার্মার জায়গায় এসেছেন অজয় ঠাকুর। কিন্তু এলাকার ছবিটা মোটেও বদলাছে না। খুনোখুনি, বোমাবাজি লেগেই রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা(North 24 Pargana) জেলার ব্যারাকপুর(Barracpur) পুলিশ কমিশনারেট এলাকায়। পুলিশ কমিশনার পদে বদল আনা হলেও এলাকার ছবি যে বিন্দুমাত্র বদলায়নি সেটা শুক্রবার সন্ধ্যায় চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে জগদ্দলে(Jagaddal) ভর সন্ধ্যায় প্রকাশ্য এক শ্রমিক নেতা খুনের(Murder) ঘটনায়। সেই খুনের ঘটনার পরে পরেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে জগদ্দলের একাধিক এলাকা। বোবাবাজির পাশাপাশি চলে ব্যাপক হারে ভাঙচুর, বোমাবাজি ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা। শনিবার সকালেও সেই ছবি খুব একটা কিছু বদলায়নি। সাত সকালেই ঘটেছে যথেচ্ছ বোমাবাজির ঘটনা। তার জেরে পুলিশ(Police) পিকেটের পাশাপাশি র্যাফও(RAF) মোতায়েন করা হয়েছে। কিন্তু ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা চলছেই। সেই সঙ্গে জগদ্দলের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বন্ধ রয়েছে দোকানপাট, বাজারহাট। রাস্তায় লোক চলাচল নগণ্য। যানবাহনও কম চলছে। কার্যত এক অঘোষিত বনধে্র ঘেরাটোপে চলে গিয়েছে জগদ্দল এলাকা।
শুক্রবার সন্ধ্যায় জগদ্দলে ঘোষপাড়া রোডের ওপরে বড় মসজিদের সামনে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হয়ে গিয়েছেন মহম্মদ টিঙ্কু ওরফে রিজওয়ান আলি(২৬) নামে এক যুবক। পেশায় জুটমিল শ্রমিক হলেও রীতিমত শ্রমিক নেতা হয়ে উঠেছিলেন তিনি। ঘটনার সময় তিনি একটি চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলেন। সেই সময় ৪-৫জন দুষ্কৃতী এসে তাঁকে মারধর করতেই তিনি পালাবার চেষ্টা করেন। কিন্তু বিফল হন। খুন কাছ থেকে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে তাঁকে গুলি করে দুষ্কৃতীরা। গুলিবিদ্ধ মহম্মদ টিঙ্কুকে ভাটপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল নিয়ে গেলে সেখানেই তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। গোটা ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ এদিন সামনে এসেছে। সব থেকে বড় কথা যেখানে এই গুলি চালনা ও খুনের ঘটনা ঘটেছে সেখান থেকে ৩০০ মিটার দূরে জগদ্দলের তৃণমূল বিধায়ক সোমনাথ শ্যামের বাড়ি এবং ৫০০ মিটার দূরে ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংয়ের বাড়ি। এইরকম হাইপ্রোফাইল এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেন এত ঢিলেঢালা তা নিয়েই এখন প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। সেই সঙ্গে দুষ্কৃতীরা কীভাবে এত সাহস পেয়ে যাচ্ছে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
গতকাল সন্ধ্যার ঘটনার পরে পরেই গোটা এলাকায় তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। সমস্ত দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হয়। তারপর শুরু হয় বোমাবাজি। সাত-আটটি বোমা পড়ে, একটি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ কমিশনার অজয় ঠাকুর বিশাল বাহিনী নিয়ে এসে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিছুক্ষণ বাদেই ঘটনাস্থলে পৌঁছন সাংসদ অর্জুন সিং। তিনি জানন, ‘এটা দুষ্কৃতীদের নিজেদের মধ্যে গণ্ডগোল। আমার বাড়ির কাছেই ঘটনা ঘটেছে। যাকে খুন করা হয়েছে এবং যে খুন করেছে দু’জনেই অসামাজিক কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত। দু’জনের মধ্যে পুরনো শত্রুতা ছিল। এর আগেও এরা একে অপরকে মারধর করেছিল। দু’জনে আগে গ্রেপ্তারও হয়েছিল। পুরনো শত্রুতা থেকেই এই খুন বলেই ধারণা।’ শোনা যাচ্ছে যে খুন করেছে তার নাম গানুয়া ওরফে গণেশ। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, যারা এই কাণ্ড ঘটিয়েছে, তারা এলাকারই ছেলে। ব্যক্তিগত শত্রুতা থেকেই এই ঘটনা বলে মনে হচ্ছে। যেখানে শ্যুট আউট হয়েছে, সেখানে বেশ কয়েকটি সিসি ক্যামেরা থাকায় সেই সব ফুটেজ খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এ প্রসঙ্গে বারাকপুরের পুলিশ কমিশনার অজয় ঠাকুর বলেন, ‘পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। এলাকা শান্ত করা হয়েছে। খুন ও বিশৃঙ্খলা ছড়ানোর ঘটনায় জড়িতরা ধরা পড়ে যাবে খুব তাড়াতাড়ি।’