নিজস্ব প্রতিনিধি: একুশের ভোটে হারের জ্বালা এখনও মেটেনি দিল্লির প্রভুদের। তাই পদে পদে বাংলা আর বাংলার মানুষকে বঞ্চিত করার পথে হেঁটে চলেছেন তাঁরা। তাই যাবতীয় নিয়মনীতি লঙ্ঘণ করে তাঁরা বাংলার মানুষের প্রাপ্য ১০০ দিনের কাজের(100 Days Work Project) টাকা আটকে রেখে দিয়েছেন। প্রায় দেড় বছর ধরে কেন্দ্রের শাসক বাংলার ১০০ দিনের কাজের টাকা শুধু যে আটকে রেখেছে তাই নয়, নতুন করে সেই কাজের বরাত দেওয়াও বন্ধ রেখেছে। এই টাকার ওপরেই নির্ভরশীল ছিল গ্রাম বাংলার(Rural Bengal) খেটে খাওয়া গরিব মানুষের একাংশ। তা সত্ত্বেও গ্রামের প্রান্তিক মানুষের মাথাপিছু খরচ বেড়েছে। সুখে স্বচ্ছন্দে জীবনযাপন করছেন তাঁরা। সৌজন্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’(Lakhir Bhandar)। এমনই তথ্য উঠে এসেছে রাজা নরেন্দ্রলাল খান মহিলা মহাবিদ্যালয়ের(Raja Narendralal Khan Mahila Mahavidyalaya) ভূগোল বিভাগের ক্ষেত্র সমীক্ষায়।
আরও পড়ুন্ন বাংলার ৭ লক্ষ আবাস উপভোক্তার নামই নেই কেন্দ্রের পোর্টালে
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা রাজা নরেন্দ্রলাল খান মহিলা মহাবিদ্যালয়টি মেদিনীপুর শহরেই। কলেজ মহিলাদের জন্য। সেই কলেজেরই ভূগোল বিভাগের অধ্যাপক প্রভাতকুমার শীটের তত্ত্বাবধানে সমীক্ষক দলটি গত ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসে সমীক্ষা চালিয়েছিল জঙ্গলমহলের(Junglemahal) বুকে। মূলত পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম এই দুই জেলায় সমীক্ষা চালানো হয়। সেই সমীক্ষাতেই উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। দুই জেলার ২২০টি গ্রামের ৩২০০টি পরিবারের ওপর সমীক্ষা করা হয়েছিল। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল জঙ্গলমহল অঞ্চলে সাধারণ মানুষের জীবন জীবিকা, জঙ্গলের ওপর নির্ভরশীলতা ও সরকারি সুযোগ-সুবিধার প্রভাব। বিশেষ করে ১০০ দিনের কাজ ও ‘লক্ষী ভাণ্ডার’র সুফল নিয়ে। সমীক্ষার রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, ৪০ শতাংশ সাধারণ মানুষের সংসারে চলত ১০০ দিনের কাজের টাকায়। কিন্তু গত প্রায় দেড় বছর কোনও কাজ পাননি বাসিন্দারা। সেই ক্ষতে প্রলেপ দিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’।
আরও পড়ুন শ্রমিকদের জন্য ২টি নতুন বিমা প্রকল্প আনছে মোদি সরকার
একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে মাসে সাধারণ পরিবারের মহিলারা ৫০০ এবং আদিবাসী ও তফসিলিরা ১ হাজার টাকা করে পাচ্ছেন। সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে, অভাবের সংসারে ১ হাজার টাকার ক্রয়ক্ষমতা অনেক। আশ্চর্যজনকভাবে যে মুদির দোকানদাররা একসময় মহিলাদের ধার দিতে চাইতেন না, তাঁদের মনোভাবও বদলে গিয়েছে। সমীক্ষকদের দাবি, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা ঢুকছে জানলে মুদির দোকানে ধারে তেল-নুন দিচ্ছে। দোকান থেকে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে না। এই ভরসাটা কিন্তু কম কথা নয়। আসলে ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’, ‘কন্যাশ্রী’ কিংবা ‘বিধবা ভাতা’র মতো প্রকল্প মহিলাদের স্বীকৃতি দেয়, পায়ের তলার মাটি শক্ত করতে সাহায্য করে। তাঁদের ভরসা ও সাহস জোগায়। তাই ওই টাকার মূল্য মেয়েদের কাছে অনেক। তাই বিরোধীরা যতই মুখ্যমন্ত্রীকে গালিগালাজ দিক না কেন, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারকে যতই ভিক্ষার টাকা বলুক না কেন, গ্রাম বাংলার গরিব মানুষদের কাছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই সাক্ষাৎ মা লক্ষ্মী হয়ে উঠেছেন।
আরও পড়ুন রাজ্যে অনলাইন জন্ম-মৃত্যুর সংশাপত্র ১৬ লক্ষর বেশি দেওয়া হয়েছে
সমীক্ষকদের আরও দাবি, আগে জঙ্গলমহলের মানুষের মাথাপিছু মাসিক ব্যয় ছিল ১৭৮৪টাকা। এখন ১০-১২ শতাংশ বেড়ে ১৯৪০ টাকা হয়েছে। খরচের উত্স খুঁজতে গিয়ে দেখাঁ যাচ্ছে, ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। যা গ্রামাঞ্চলের আর্থসামাজিক উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক। সমীক্ষায় জঙ্গলমহলের মানুষকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, এই মুহূর্তে তাঁদের প্রধান চাহিদা কী? সিংহাভাগের সম্মিলিত উত্তর ছিল, ভালো রাস্তা, পানীয় জল, শিক্ষা ব্যবস্থা, সরকারি পরিষেবা, ফসলের নায্য দাম ও কাজ। সেই সঙ্গে তাঁরা চান সম্মান। পঞ্চায়েতে, ব্লক অফিসে বড়বাবুদের ধমক খেয়ে অপমানিত হয়ে যেন ফিরতে না হয়, এটুকুই তাঁদের চাওয়া।