-273ºc,
Friday, 2nd June, 2023 9:07 pm
নিজস্ব প্রতিনিধি: দেশের প্রধানমন্ত্রী(Prime Minister) হওয়ার আগে নরেন্দ্র মোদি(Narendra Modi) প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন দেশবাসীকে যে সব কালো টাকা তিনি উদ্ধার করে আনবেন। সেই সঙ্গে দেশের প্রত্যেক বাসিন্দার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা করে ঢুকে যাবে। সেই টাকা দেশের একজন নাগরিকও আজও পাননি। সেই ভাঁওতাবাজির মতোই এবার ভাঁওতা প্রতিশ্রুতি দেখতে পাচ্ছেন উত্তরবঙ্গের(North Bengal) কোচবিহার(Coachbehar) জেলার শীতলকুচি(Sitalkuchi) মীরাপাড়ার ১৪টি পরিবার। য়ার এই ঘটনাই এখন পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে রীতিমত মুখ পোড়াচ্ছে বিজেপির(BJP)।
আরও পড়ুন ছেলে-বউমার চাকরির জন্য ১০ লক্ষ টাকা ঘুষ বিজেপি নেতার
গতবছর ৩১ জুলাই জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ির জল্পেশ মন্দিরে শিবের মাথায় জল ঢালতে যাচ্ছিল কোচবিহার জেলার শীতলকুচির মিরাপাড়ার কয়েকজন যুবক। তাঁরা প্রথমে পায়ে হেঁটে রওয়ানা দিলেও পরে তাঁদের ভাড়া করা ট্রাকে উঠে পড়েন। সেই রাতে ব্যাপক বৃষ্টি হচ্ছিল। ট্রাকে রাখা ছিল সাউন্ড সিস্টেম ও জেনারেটর। মেখলিগঞ্জের চ্যাংরাবান্ধায় সেই জেনারেটরের শর্ট সার্কিটের জেরে মারা যায় ১০ জন যুবক। আহত হন ১৪ জন। আহতরা বেশ কয়েকদিন জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর বাড়িতে ফেরেন। সেই ঘটনায় কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন মোদি সরকার মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ২ লক্ষ টাকা এবং আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল। মৃতদের পরিবার ২ লক্ষ টাকা করে পেয়ে গেলেও আহতরা কেন্দ্রের প্রতিশ্রুতিমতো ক্ষতিপূরণ আজও হাতে পাননি। এদিকে ঘটনার পরে ৮ মাস পার হয়ে যাওয়ায় তাঁরা এখন রীতিমতো হতাশ হয়ে গিয়েছেন। তাঁদের মনে হচ্ছে কেন্দ্র সরকার তাঁদের সঙ্গে সেই ১৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার মতোই মিথ্যা প্রতিশ্রুতি শুনিয়েছে।
আরও পড়ুন রবিবার হাওড়া কর্ড লাইনে বন্ধ সব লোকাল ট্রেন
আহতদের পরিবারের দাবি, দুর্ঘটনার পর অনেকেই ধারদেনা করে চিকিৎসার টাকা সংগ্রহ করেছিলেন। কেন্দ্রীয় সরকার ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় সেই ধারের টাকা মেটানোর প্রত্যাশা করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু, এখনও পর্যন্ত টাকা না মেলায় হতাশ তাঁরা। ওই দুর্ঘটনায় আহত হর্ষজিৎ বর্মন বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। আমরা প্রয়োজনীয় নথিপত্রও এজন্য জমা দিয়েছিলাম। আমি কিছুটা সুস্থ হলেও, এখনও পুরোপুরি সুস্থ নই। আমার মতো অনেকেই ধারদেনা করে চিকিৎসা করান। সেই ধারের টাকা শোধ করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি।’ মিরাপাড়ার অপর বাসিন্দা সতীনাথ বর্মন বলেন, ‘আমার ছেলেও দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিল। অনেক টাকা ধার করে চিকিৎসা করিয়েছি। কেন্দ্রীয় সরকার ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় আশা ছিল সেই টাকা দিয়ে ধার মিটিয়ে দেব। কিন্তু, কই কোনও ক্ষতিপূরণ আজ পর্যন্ত পাইনি।’
আরও পড়ুন মমতার উদ্যোগে ‘ধ্রুপদী ভাষা’র তকমা পেতে চলেছে বাংলা
আর কেন্দ্রের এই প্রতিশ্রুতি না রাখার ঘটনাকে ঘিরেই এখন বিজেপির ভাঁওতাবাজির ছবি তুলে ধরে রীতিমত হাওয়া গরম করতে শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। ওই দুর্ঘটনার পর রাজ্য সরকার নিহতদের পরিবার পিছু ২ লক্ষ টাকা দিয়েছিল। সেই ঘটনা তুলে ধরে তৃণমূল(TMC) প্রচার শুরু করেছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) যা বলেন সেটা তিনি করে দেখান। কিন্তু মোদি সরকার মানুষকে ভাঁওতা প্রতিশ্রুতি ছাড়া আর কিছুই দিতে পারে না। প্রতিশ্রুতি দিয়ে এভাবে আশাহত করা উচিত নয়। এই ঘটনায় এখন রীতিমত মুখ পুড়ছে বিজেপির। তার জেরে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে শীতলকুচিতে এখন রীতিমত ব্যাকফুটে চলে গিয়েছে বিজেপি। একেই এই বিধানসভা কেন্দ্রের ৫জন যুবককে একুশের বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে বিনা কারণে গুলি করে মারার ঘটনা বিজেপিকে কাঠগড়ায় তুলে রেখেছে। তার সঙ্গে এবার যোগ হয়েছে প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করার ঘটনাও। তাই বেশ কোনঠাসা হয়ে শীতলকুচির বিজেপি বিধায়ক বরেনচন্দ্র বর্মন বেশ নরম সুরেই জানিয়েছেন, ‘আহতদের নথিপত্র কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। নিশ্চয় তাঁরা ক্ষতিপূরণ পাবেন। আমি এ ব্যাপারে ফের খোঁজখবর নেব। আশা করছি, শীঘ্রই আহতরাও টাকা পেয়ে যাবেন।’