নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা(PAY) প্রকল্পের অধীনে আমজনতার জন্য বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়ার কাজে হাত দিয়ে কার্যত দিকে দিকে দুর্নীতি আর বিক্ষোভের মুখোমুখি হতে হচ্ছে রাজ্য সরকারকে(West Bengal State Government)। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই অভিযোগ উঠছে যোগ্যদের বাদ দিয়ে এই রাজ্যের শাসক দলের নেতাদের আত্মীয় পরিজন বা ঘনিষ্ঠজনদের সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। এমন অনেক লোকের নাম সুবিধা প্রাপকদের তালিকায় উঠেছে যাদের আগে থেকেই পাকা বাড়ি আছে। কারও কারও বাড়িতে তো আবার কালার টিভি থেকে শুরু করে এসি, গিজার, ফ্রিজ, গাড়ি, মার্বেলে মোড়া মেঝেও রয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই যারা বাড়ি পাচ্ছেন না তাঁরা দিকে দিকে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। এই ঘটনা থেকেই শিক্ষা নিয়ে পাট্টা(Patta) বিলির ক্ষেত্রে ধীর ও সতর্ক পায়ে এগোতে চাইছে রাজ্য সরকার।
আরও পড়ুন ‘দুয়ারে ব্যাঙ্ক’, ৩০০০ পদে লোক নিচ্ছে মমতার সরকার
কিছুদিন আগে শেষ হওয়া দুয়ারে সরকার(Duyare Sarkar) কর্মসূচিতে জমির পাট্টা পাওয়ার জন্যও আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। সেই সব আবেদন গ্রহণও হয়েছে যথেষ্ট পরিমাণ সংখ্যায়। তবে পাট্টা বিলির আগে এবার সতর্ক পদক্ষেপ করছে নবান্ন। যেরা আবেদন করেছেন পাট্টার জন্য তাঁদের আবেদন পত্র খতিয়ে দেখার পাশাপাশি তাঁরা আদৌ পাট্টা পাওয়ার যোগ্য কিনা সেটাও দেখে নেওয়া হবে। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় জেলায় দুয়ারে সরকার শিবির থেকে এবার পাট্টা চেয়ে এখনও পর্যন্ত ৫০ হাজারের বেশি আবেদন জমা পড়েছে। রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আবেদনকারীদের প্রতিটি আবেদনের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট জমির চরিত্র, মালিকানা, পরিমাপ সহ একাধিক বিষয় সরেজমিনে খতিয়ে দেখা হবে। সম্পূর্ণ বিষয় যাচাই করে তবেই পাট্টা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। রাজ্যের ভূমিসংস্কার বিধিতে এই নিয়ম আগে থেকে থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে আবেদন জমা পড়ার পর সবকিছু ১০০ শতাংশ খতিয়ে দেখা হতো না। তবে এবার আর সেই পথে হাঁটতে চাইছে না নবান্ন।
আরও পড়ুন পার্ক স্ট্রিটে বড়দিনের ভিড় সামলাতে সাড়ে তিন হাজার পুলিশ নামছে রাস্তায়
উল্লেখ্য কিছু দিন আগেই শেষ হওয়া দুয়ারে সরকার শিবির থেকে জমির পাট্টা বিলির আবেদন পত্র দেওয়ার ঘোষণার পরেই সরাসরি বিরোধিতা করেছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী(Suvendu Adhikari)। এমনিতেই কেন্দ্রীয় আবাস যোজনা নিয়ে জেলায় জেলায় গুচ্ছ গুচ্ছ অভিযোগ জমা পড়ার পর এই ইস্যুটিকে আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে গেরুয়া শিবির প্রধান হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করবে, তা বলাই বাহুল্য। এমত অবস্থায় পাট্টা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে শুভেন্দু বলেছিলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী পাট্টা দেওয়ার আগে খাস জমির তালিকা ব্লকে ব্লকে টাঙানো উচিত। অভিযোগ থাকলে নিষ্পত্তির জন্য ১৫ দিন সময় দিতে হবে। কিন্তু দুয়ারে সরকারের শিবিরে পাট্টা দেওয়া শুরু হচ্ছে! এতে অশান্তি বাধবে। এই ধাপ্পাবাজির আমরা বিরোধিতা করছি।’ দুয়ারে পাট্টা বিলি নিয়ে যে বিরোধ বাঁধতে পারে, সেরকমটাই আঁচ করছেন নবান্নের আধিকারিকেরাও। তাই তার আগে পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই পর্ব সেরে ফেলতে চাইছে প্রশাসন। জেলায় জেলায় বন ও ভূমি স্থায়ী সমিতির মাধ্যমে পাট্টা দেওয়ার কাজ হয়। যে জমির পাট্টার জন্য আবেদন করা হয়েছে, সেই জমির চরিত্র, সঠিক মালিকানা, পরিমাপ, আইনগত বিষয় তা যাচাই করে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে গঠিত তিন সদস্যের একটি কমিটি। কমিটির সদস্যরা হলেন সংশ্লিষ্ট রেভিনিউ ইনসপেক্টর, স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য এবং পঞ্চায়েতের একজন কর্মী। ইতিমধ্যে এই জমি যাচাই করণের কাজ শুরু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।