নিজস্ব প্রতিনিধি: মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়েছিল পঞ্চায়েত নির্বাচনের(Panchayat Election) গণনা। সেই গণনায় বাংলাজুড়ে নজর ছিল নন্দীগ্রামের দিকে। সেই নন্দীগ্রাম(Nandigram) যেখানে জমি আন্দোলনের জেরে বামেদের ক্ষমতা হারাতে হয়েছে। সেই নন্দীগ্রাম যেখানে একুশের ভোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) প্রার্থী হয়েছিলেন। এবারে সেখানে কী হয় তা দেখার জন্য সকলেই আগ্রহ হয়ে তাকিয়ে ছিলেন বাংলার অনেকেই। দেখা গেল প্রথম দিকে বিজেপি(BJP) জয় সামনে আসতেই তা নিয়ে নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক(বিতর্কিত জয়) তথা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী(Suvendu Adhikari) বেশ গর্বের হাসি হাসছিলেন। কিন্তু বুধবার সকালেই তাঁর সেই মুখের হাসি গিয়েছে উবে। কেননা চূড়ান্ত ফলাফল বলছে নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল(TMC) ১০ হাজার ৪৫৭টি ভোটে এগিয়ে গিয়েছে। এলাকার ২টি ব্লকের ৫টি জেলা পরিষদের ৫টি আসনের মধ্যে ৩টিতে জয়ী হয়েছে। ২টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে ১টি দখল করেছে এবং দুটি ব্লকের ১৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৮টি দখল করে নিয়েছে।
আরও পড়ুন উত্তরের ৮ লোকসভা কেন্দ্রেই জমিহারা বিজেপি
একুশের ভোটে মমতা নন্দীগ্রাম থেকে প্রথমে জয়ী হয়েছেন বলে ঘোষণাও করা হয়েছিল। তারপর হঠাৎ লোডসেডিং এবং তারপরই ১,৯৫৬ ভোটে শুভেন্দুর জয়। যদিও সেই জয় নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। সুপ্রিম কোর্টেও মামলা চলেছে। কিন্তু এখন নন্দীগ্রামের ফল বলে দিচ্ছে, সেখানকার মানুষ না বিজেপির সন্ত্রাস আর অত্যাচারের কাছে মাথা নত করেছেন, না শুভেন্দু অধিকারীর হুমকি ধমকির সামনে মাথা নত করেছেন। তাঁরা নিজেরা বুথে গিয়ে নিজেদের ভোট দিয়েছেন। আর তা শুভেন্দু ও বিজেপির বিরুদ্ধেই গিয়েছে। এই ফল উনিশের লোকসভা নির্বাচনের আগে শুধু যে শুভেন্দুর মাথা ব্যাথা আরও বাড়াবে তাই নয়, বিজেপিরও রাতের ঘুম কেড়ে নেবে। ফল বলছে নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের ৩টি জেলা পরিষদের আসনেই জিতেছে তৃণমূল। আবার নন্দীগ্রাম-২ ব্লকের ২টি জেলা পরিষদের আসনে জিতেছে বিজেপি। আর এই ৫টি জেলা পরিষদের আসনের এলেকা নিয়েই নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রের এলাকা। স্বাভাবিক ভাবেই রাজ্যের বিরোধী দলনেতার রক্তচাপ বাড়ার পক্ষে তা যথেষ্ট।
আরও পড়ুন অযোধ্যা পাহাড়ের কোলেও তৃণমূল ঝড়, কুপোকাত পদ্ম
এই ‘বিপর্যয়’ নিয়ে বুধবার নতুন করে আর শুভেন্দু কোনও মন্তব্য করেননি। তবে অস্বীকার করার উপায় নেই যে, নন্দীগ্রামের জনমতের কাছে হারতে হল শুভেন্দুকে, বিজেপিকেও। তৃণমূল এ বার নন্দীগ্রাম পুনরুদ্ধারকে কার্যত ‘মিশন’ হিসাবে নিয়েছিল। সেই ‘মিশন’ যাতে বিন্দুমাত্র অসফল না হয় তার জন্য সেখানে মাটি কামড়ে পড়েছিলেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তালপাটি খালের পাশের জনপদে প্রায় তাঁবু খাটিয়ে পড়েছিলেন। দু’বছরের মধ্যে পিছিয়ে-পড়া জায়গা থেকে অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া নিয়ে কুণাল এদিন জানিয়েছেন, ‘কথায় কথায় শুভেন্দু ১৯৫৬-এর ঔদ্ধত্য দেখাত। হলদি নদীর জলে তা ভাসিয়ে দিয়েছে নন্দীগ্রামের মানুষ। বিধানসভায় লোডশেডিং করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারিয়েছিল শুভেন্দু। মানুষ এ বার জবাব দিয়ে দিয়েছেন।’ সন্দেহ নেই, নন্দীগ্রাম ছিল শুভেন্দুর কাছে ‘সম্মানের লড়াই’।
আরও পড়ুন অপরূপার আরামবাগ ঘাসফুলের দখলে, বিধ্বস্ত বিজেপি
সেই কারণেই শুভেন্দুকে রাজনৈতিক ভাবে শায়েস্তা করতে নন্দীগ্রামকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিল শাসকদল। প্রচারেও একাধিক পদ্ধতির ব্যবহার করেছিল তৃণমূল। উঠোনে চাটাই পেতে ঘরোয়া বৈঠক। পাশাপাশি গঞ্জসভা, বাড়ি বাড়ি প্রচারেও ছিল বাড়তি গুরুত্ব। শাসকদলের দাবি, প্রচারে শুভেন্দু তথা বিজেপি যত কুৎসা এবং ব্যক্তি আক্রমণ করেছে, তৃণমূল তত বেশি বেশি করে রাস্তা, পানীয় জল, লক্ষ্মীর ভান্ডার, কন্যাশ্রী, সবুজ সাথীর কথা বলেছে। সরকারি পরিষেবা ও উন্নয়নও ছিল প্রচারের অভিমুখ। মমতার সরকারের আমলে সকলে যে ব্যক্তিগত স্তরেও সহায়তা পেয়েছেন, তা-ও ফলাও করে প্রচারে বলেছিল তৃণমূল।