নিজস্ব প্রতিনিধি: পঞ্চায়েত নির্বাচনের(Panchayat Election) আগে গ্রাম বাংলার বুকে সাড়ে ১১ হাজার কিলোমিটার রাস্তা সারাই ও নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার(West Bengal State Government)। তার জন্য ‘রাস্তাশ্রী’(Rastasree) প্রকল্পের কথা ঘোষণা করা হয় চলতি মাসে পেশ হওয়া রাজ্য বাজেটে। সেখানে ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে এই প্রকল্পের জন্য ৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ঠিক করা হয়েছে গ্রাম বাংলায়(Rural Bengal) ছড়িয়ে থাকা প্রায় ৯ হাজার রাস্তা আগামী ২ মাসের মধ্যেই তৈরি করে ফেলা হবে ওই প্রকল্পের মাধ্যমে। সেই হিসাবে জেলা থেকে আসা রাস্তা তৈরির প্রস্তাব এক এক করে অনুমোদন দিচ্ছে রাজ্য পঞ্চায়েত দফতর। আর সেই অনুমোদন দিতে গিয়েই চক্ষু চড়কগাছ পঞ্চায়েত দফতরের আধিকারিকদের। কেননা দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন জেলা রাস্তার যে তালিকা পাঠিয়েছে, তার মধ্যে ১,২৬৬টি রাস্তার খোঁজই মিলছে না। এই ঘটনায় রীতিমতো অবাক নবান্নও। কেন এমনটা হল, সেই কৈফিয়ত চাওয়া হচ্ছে ওই সব জেলা প্রশাসনের কাছে। যে সব রাস্তার খোঁজ মেলেনি, তার একটি আলাদা তালিকাও তৈরি করেছেন পঞ্চায়েত দফতরের আধিকারিকেরা। আর সেটাও তাঁরা করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। তিনি এই ঘটনা জানার পরে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন, ওই রাস্তাগুলি সংস্কারের কাজ হবে না।
আরও পড়ুন বাংলার সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় BJP’র পতাকা লাগানোরও কেউ নেই
তবে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ঘটনার পিছনে দুর্নীতির ঘটনা লুকিয়ে থাকতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী কার্যত রাজ্য প্রশাসনের আধিকারিকদের স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন যে, দু’মাসের মধ্যে এই কাজ শেষ করতে গিয়ে যেন টাকা নয়ছয় না হয়। তাই সেদিকেও বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে নবান্ন থেকে। রাস্তা সারাইয়ের এই কাজ শেষ করতে প্রতিটি জেলায় নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে পঞ্চায়েত দফতরের তরফে। তাতে বলা হয়েছে, রাস্তা তৈরির খরচ সব জায়গাতেই কম-বেশি এক রাখার কথা। তবে অনেক ক্ষেত্রেই একই ব্লকে একই দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের রাস্তা তৈরির এস্টিমেটে বিস্তর ফারাক দেখা যাচ্ছে। যা রাজ্যের বেঁধে দেওয়া খরচের তুলনায় অনেক বেশি। ফলে অতিরিক্ত খরচের কারণ লিখিতভাবে দর্শাতে হচ্ছে জেলা প্রশাসনকে। জেলার সেই তথ্য পর্যালোচনার পরেই ওই সমস্ত রাস্তা তৈরির খরচ ঠিক হবে।
আরও পড়ুন TMC বিধায়কের বিরুদ্ধে ১০০ কোটির মানহানি মামলা হাইকোর্টে
প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, রাস্তাস্রী প্রকল্পের মাধ্যমে ১ কিলোমিটার রাস্তার জন্য ২৫ লক্ষ এবং পিচ রাস্তার জন্য গড়ে ৩০ লক্ষ টাকা খরচ বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তার থেকে কিছুটা বেশি হলেও অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই তা ৪৫ থেকে ৫০ লক্ষ টাকায় পৌছে যাচ্ছে। আবার কিছু ক্ষেত্রে ১ কিলোমিটার রাস্তার জন্য ৫৫ লক্ষ টাকা খরচের কথাও বলা হয়েছে। এর জন্য মৌখিকভাবে অনেকেই অনেক কারণ তুলে ধরেছেন। যেমন, রাস্তার দু’দিকে পুকুর থাকলে পার বাঁধানো বা পাইলিংয়ের খরচ, আবার কোথাও রাস্তা তৈরির জন্য মাটি কাটার খরচ। রাজ্য সরকার চাইছে, যুক্তিসঙ্গত খরচ হোক। তাই কাজের শুরুতেই জেলা প্রশাসনের আধিকারিকেরা তা দেখে নিতে চাইছেন। আর এইসবের মাঝে যখন ১,২৬৬টি রাস্তার খোঁজই মিলছে না তখন অনেকেরই ধারনা এই রাস্তার কাজ দেখিয়ে বড় অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করার ষড়যন্ত্র চলছিল যা ঠিক সময়ে ধরা পড়ে গিয়েছে।