নিজস্ব প্রতিনিধি: মানসিক ভারসাম্যহীনতার(Mental Disbalanced) সুযোগ নিয়ে ঝাড়গ্রাম(Jhargram) জেলার বেলপাহাড়ি(Belpahari) থানা এলাকায় গত ২৭ জুলাই এক মহিলাকে গণধর্ষণ করে কিছু দুষ্কৃতী। সেই ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে চলতি মাসে। যদিও দোষীদের এখনও চিহ্নিত করতে পারেননি পুলিশের (Police) আধিকারিকেরা। কেননা ওই নির্যাতিতা এখনও এটা বলতে পারেননি যে, ঘটনার সময় ঠিক কতজন দুষ্কৃতী সেখানে ছিল, কতজন তাঁর ওপর অত্যাচার চালিয়েছে এবং তাদের তিনি চেনেন কিনা। একই সঙ্গে এলাকায় গিয়ে বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও দোষীদের চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে এখনও কোন সূত্র পাননি পুলিশ আধিকারিকেরা। সব থেকে বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল নির্যাতিতার শারীরিক যন্ত্রণা। কেননা গণধর্ষণের জেরে নির্যাতিতার গোপনাঙ্গ রীতিমত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই অবস্থায় কলকাতা থেকে ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে( Super Speciality Hospital) যাচ্ছেন একটি বিশেষ মেডিকেল টিম। তাঁরা নির্যাতিতাকে পরীক্ষা করে তাঁর গোপনাঙ্গে প্লাস্টিক সার্জারি করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন বলে ঝাড়গ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।
জানা গিয়েছে, নির্যাতিতা ছোট থেকেই মানসিক ভারসাম্যহীন। কয়েক বছর আগে তাঁর বাবা ও মা দু’জনেই মারা যান। তাঁর এক দিদি তাঁকে দেখাশোনা করতেন। কিন্তু এবছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সেই দিদিও মারা যান। বর্তমানে তাঁর এক দাদা ও বউদির কাছে তিনি থাকেন। মানসিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় তাঁকে নানা সমস্যার মুখে পড়তে হতো। এলাকায় বিভিন্ন কটূক্তিও শুনতে হত। এই অবস্থায় গত ২৭ জুলাই রাত ৯টা নাগাদ ওই নির্যাতিতাকে তাঁর বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে যায় বেশ কিছু দুষ্কৃতী। কিন্তু সেই ঘটনা কারোরই চোখে পড়েনি। বাড়ি থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরে রাস্তার পাশের মাঠে নিয়ে গিয়ে তাঁকে গণধর্ষণ করা হয়। এর জেরেই তাঁর গোপনাঙ্গে আঘাত লাগে। রাত ১১টা নাগাদ নির্যাতিতা রক্তাক্ত অবস্থায় বাড়িতে ফিরে আসেন ও গোটা ঘটনার কথা জানান। যদিও সেই সময়ও তিনি এটা বলতে পারেননি যে দোষীরা তাঁর চেনাজানা কিনা বা তাঁরা সংখ্যায় কতজন ছিল। ঘটনার পরে ওই নির্যাতিতার দাদা ও বৌদি সামাজিক বিড়াম্বনার ভয়ে ঘটনার কথা কাউকে জানাননি। কিন্তু নির্যাতিতা ক্রমশ অসুস্থ হয়ে পড়লে ও যন্ত্রণায় চিৎকার শুরু করলে বিষয়টি এলাকার বাসিন্দারা জানতে পারেন।
এরপর পাড়ার কয়েকজন বাসিন্দা নির্যাতিতা ও তাঁর দাদাকে নিয়ে ১ আগস্ট প্রথমে বেলপাহাড়ি হাসপাতালে যান। সেখানে মেডিকেল টেস্টে গণধর্ষণের প্রমাণ মেলে। কিন্তু ঘটনার জেরে নির্যাতিতার গোপনাঙ্গ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তাঁকে ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি করার কথা বলেন চিকিৎসকেরা। সেই সঙ্গে বেলপাহাড়ি থানাতেও ঘটনাটি জানান চিকিৎসকেরা। পরের দিন অর্থাৎ ২ আগস্ট বেলপাহাড়ি থানায় এফআইআর দায়ের হয়। সেইদিনই নির্যাতিতাকে ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখনও সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার অর্থাৎ এদিন কলকাতা থেকে ঝাড়গ্রামে যাচ্ছে একটি বিশেষ মেডিকেল টিম। তাঁরা এদিন নির্যাতিতাকে পরীক্ষা করে দেখবেন। সেক্ষেত্রে আগামিকাল ওই নির্যাতিতার গোপনাঙ্গে প্লাস্টিক সার্জারির সম্ভাবনা থাকছে। রাজ্যে সাম্প্রতিককালে গণধর্ষণের শিকার হওয়া কোনও নির্যাতিতার গোপনাঙ্গে প্লাস্টিক সার্জারি হতে চলেছে। তবে এসবের থেকেই তদন্তকারীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে দোষীদের খুঁজে বের করার বিষয়টি। কেননা কোনওভাবেই তাঁরা কোনও সূত্র পাচ্ছেন না যে এই নারকীয় কাণ্ডে ঠিক কতজন জড়িত ছিল আর তারা কারা? যদিও স্থানীয় বাসিন্দাদের ধারনা, দুষ্কৃতীরা বহিরাগত। যদিও পুলিশ আধিকারিকদের ধারনা দোষীরা ওই মহিলাকে আগে থেকে চিনত তারপর আঁটঘাট বেঁধেই এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে।