নিজস্ব প্রতিনিধি: জন্ম থেকেই নেই তাঁর হাত। একটা নয়, নেই দুটি হাতই। জন্মের পর তাই তাঁর নাম রাখা হয়েছিল জগন্নাথ। তিনি জগন্নাথ বাউড়ি। পেশায় প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক। পা দিয়েই শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেন এলাকায়। পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের বেলুটি গ্রামের বাসিন্দা তিনি। দিনমজুর পরিবারে বিশেষভাবে সক্ষম অবস্থায় জন্মগ্রহণ করার পর থেকে প্রাথমিক শিক্ষক হওয়ার লড়াইয়ে জয় ছিল, শুধুমাত্র অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও অধ্যাবসায়।
জয় কৃষ্ণপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তিনি। পরিবার বলতে দিনমজুর বাবা, মা, স্ত্রী এবং তাঁদের দুই সন্তান। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, দিদির মৃত্যুর পরে দিদির দুই সন্তানের দায়িত্বও নিয়েছেন তিনি। তবে ছেলের জোরাজুরিতে বর্তমানে মজুরির কাজ ছেড়েছেন বাবা।
কৃতী ও অদম্য জেদের অধিকারী জগন্নাথের বাবা-মা জানিয়েছেন, অসম্ভব জেদ ও অধ্যাবসায় হার মানিয়েছে সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে। কখনো প্রতিবন্ধকতা বা আর্থিক অনটনকে বাধা হিসেবে মনে করেননি জগন্নাথ। জানা গিয়েছে, ছোট থেকে পায়েই পেনসিল ধরে অক্ষর পরিচয় হয়েছিল তাঁর। তারপর ক্লাস বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পেন্সিলের জায়গায় উঠে এসেছে পেন।
জানা গিয়েছে, ২০১০ সালে প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক হিসেবে চাকরি পেয়েছিলেন তিনি। তারপর পায়ে চক আর ডাস্টার তুলেই পড়ুয়াদের মধ্যে ছড়িয়ে দেন শিক্ষার আলো।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিশেষভাবে সক্ষম জগন্নাথ শিক্ষক হয়ে ঠিকঠাক ভাবে আদৌ শিক্ষা দিতে পারবেন কি না। সন্দেহের বশে স্থানীয় মানুষ ও অভিভাবক- অভিভাবিকারা উঁকি মেরে দেখতেন পড়ানো। তাতেই বুঝে যান, জগন্নাথ অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী। শিক্ষার আলো সঠিক ভাবে ছড়িয়ে দিতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। সহকর্মীরাও তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। এতটাই দায়িত্বশীল জগন্নাথ, যে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হয়েছেন তিনি। তাঁকে কুর্নিশ ডব্লু ডব্লু ডব্লু ডট এই মুহূর্তে ডট কমের পক্ষ থেকে।