নিজস্ব প্রতিনিধি: দীর্ঘ বছর পর মৌনতা ভাঙল রবি ঠাকুরের (RABINDRANATH TAGORE) পিয়ানো। পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ বিদ্যাপীঠের (PURULIA RAMAKRISHNA VIDYAPITH) তিন প্রাক্তনীর সৌজন্যে আবারও সুর উঠল ঐতিহ্যবাহী পিয়ানোতে। এতে আপ্লুত বিদ্যাপীঠ, শিক্ষার্থী থেকে পুরুলিয়াবাসী। এই পিয়ানো যে রবি ঠাকুরের স্পর্শে ধন্য। শিলং বেড়াতে গিয়ে এই পিয়ানো বাজিয়েছিলেন বাঙালির প্রাণের ঠাকুর। এই পিয়ানো উপহার হিসেবে আসে বিদ্যাপীঠে।
বিদ্যাপীঠ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিশ্বকবি শিলং ভ্রমণে গিয়ে এই পিয়ানো বাজিয়েছিলেন। সালটা ১৯১৯ বা ১৯২৩। সেই পিয়ানো পেয়েছিলেন প্রখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সন্তোষকুমার সেনগুপ্ত। তাঁর অত্যন্ত কাছের ছিলেন স্বামী হিরণ্ময়ানন্দ। তিনি ছিলেন পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ বিদ্যাপীঠের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। জানা গিয়েছে, ষাটের দশকের শেষের দিকে সন্তোষকুমার সেনগুপ্ত এই পিয়ানো উপহার দিয়েছিলেন স্বামী হিরণ্ময়ানন্দকে।
জানা গিয়েছে, ১৯৬৫- ১৯৬৬ সাল নাগাদ এই পিয়ানো আসে বিদ্যাপীঠে। ১৯৬৭ সালে বেলুড় মঠ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে স্বামী হিরণ্ময়ানন্দ সম্পাদকের দায়িত্ব তুলে দেন স্বামী চন্দ্রানন্দের হাতে। বিদ্যাপীঠের বর্তমান সম্পাদক স্বামী শিবপ্রদানন্দ বলেন, তখন আত্মপ্রকাশ করেছিল নিবেদিতা কলামন্দির। বিদ্যাপীঠের নিবেদিতা কলামন্দিরের আবহের জন্যই বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী সন্তোষকুমার সেনগুপ্ত এই পিয়ানো উপহার দিয়েছিলেন সম্ভবত। তখন এখানে তালিম দিতেন বেনারস ঘরানার প্রবীণ সঙ্গীত বিশারদ তুলসী দাস ভট্টাচার্য। তিনি দিতেন শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও ভজনের তালিম। সঙ্গীতশিল্পী সব্যসাচী গুপ্ত শেখাতেন রবীন্দ্রসঙ্গীত। রবীন্দ্রসঙ্গীতের পাঠ দিতেন বিশিষ্ট শিক্ষক সুকেশ জানা। আরও বলেন, এস্রাজ, পোখোয়াজ, তবলাও শেখানো হত। এই আবহেই পিয়ানো উপহার দিয়েছিলেন সন্তোষকুমার সেনগুপ্ত।
জানা গিয়েছে, শতাব্দী প্রাচীন এই পিয়ানো নষ্ট হতে শুরু করেছিল প্রায় আড়াই বছর আগে। তখনই এগিয়ে আসেন ৩ প্রাক্তনী সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়, সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় এবং তাপস নিয়োগী। তা সারানো হয় কলকাতার মার্কাস স্ট্রিটের একটি বাদ্যযন্ত্রের দোকানে। আর তারপরেই ফের সুর ঝরে পড়ছে রবি ঠাকুরের স্পর্শধন্য এই পিয়ানো থেকে। প্রাক্তনীরা জানিয়েছেন, বর্তমান সম্পাদক আশা প্রকাশ করেছিলেন এই পিয়ানো সারানোর। তারপরেই উদ্যোগ নেন ৩ প্রাক্তনী। আপাতত সুরে ও ঐতিহ্যে মুখর বিদ্যাপীঠ।