নিজস্ব প্রতিনিধি: শনিবার সকাল থেকেই একটু একটু করে তেতে উঠছিল খড়দহ। ভোটগ্রহণের শেষ লগ্নে সেখানেই কার্যত কুরুক্ষেত্রের জন্ম হল। বিজেপি প্রার্থী জয় সাহার ব্যক্তিগত দেহরক্ষীদের হাতে আক্রান্ত হলেন এলাকারই প্রয়াত বিধায়ক কাজল সিনহার ছেলে আর্যদীপ সিনহা। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এই ঘটনার প্রতিবাদ করতে গেলে তৃণমূল কর্মী ও সমর্থকদের ওপরে ব্যাপক লাঠিচার্জ করে। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন তৃণমূলের প্রার্থী তথা রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তিনি সাফ জানিয়েছেন, ‘বিজেপি এখানে জিততে পারবে না বলে সকাল থেকেই ভোটারদের ভোট দিতে বাধা দিচ্ছে। অনেককেই ভোট দিতে দেওয়া হয়নি, বুথেও ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আর এখন তো কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দিয়ে পিটিয়ে বুথ থেকে ভোটারদের তাড়িয়ে দিচ্ছে। বিনা প্ররোচনায় কাজলের ছেলেকে মেরেছে।’
এদিন রাজ্যের যে ৪টি কেন্দ্রে ভোট হয়েছে তার মধ্যে সব থেকে কম ভোট পড়েছে খড়দহে। আবার এই কেন্দ্রেই সব থেকে বেশি অশান্তির ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরপেক্ষতা নিয়েও। তবে সব থেকে বড় অশান্তির ঘটনা ঘটে বিকাল বেলায় বন্দিপুর আইডিয়াল অ্যাকাডেমির সামনে। অভিযোগ বিজেপি প্রার্থী জয় সাহা ব্যক্তিগত দেহরক্ষীদের সঙ্গে নিয়ে ওই স্কুলের বুথ দখল করতে আসেন। সেই সময় ওই ঘটনার প্রতিবাদ করেন কাজল সিনহার ছেলে আর্যদীপ সিনহা। এরপরেই জয়ের সঙ্গে থাকা তাঁর ব্যক্তিগত দেহরক্ষীরা তাঁকে বেধড়ক মারধর করে। সেখানে থাকা তৃণমূলের কর্মী ও সমর্থকেরা এই ঘটনার প্রতিবাদ করলে তাঁদের ওপরেও চড়াও হয় ওই দেহরক্ষীরা। পাশাপাশি ওই স্কুলে মোতায়েন থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরাও ব্যাপক হারে লাঠিচার্জ করে ওই স্কুলের সবকটি বুথ থেকে ভোটারদের মেরে বের করে দেয়। সেই ঘটনায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাশে দাঁড়িয়ে জয় সাহা আবার অভিযোগ করে বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারীদের এনে তৃণমূল ছাপ্পা ভোট করাচ্ছে। ভোট লুট করেছে তৃণমূল।’
উল্লেখ্য একুশের বিধানসভা নির্বাচনে খড়দহে তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন স্থানীয় পুরপ্রধান কাজল সিনহা। কিন্তু ভোটের ফলাফল বার হওয়ার আগেই কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মারা যান কাজলবাবু। ভোটের ফল বার হতে দেখা যায় কাজলবাবুই জয়ী হয়েছেন খড়দহে। কিন্তু তিনি মারা যাওয়ায় ফের এই কেন্দ্রে উপনির্বাচন করানোরর প্রয়োজন হয়ে পড়ে। তার জেরে এদিন ভোটগ্রহণ করতে হয়েছে খড়দহে। সেই কাজলবাবুর ছেলের ওপর কেন্দ্রীয় বাহিনীর লাঠিচার্জের ঘটনা একদমই ভাল মনে মেনে নিতে পারেনি খড়দহবাসী। কার্যত ভোট শেষ হওয়ার আগেই বিজেপি প্রার্থীকে ঘিরে এই ঘটনার জেরে ‘গো ব্যাক’ শ্লোগান দিতে থাকেন তৃণমূলকর্মীরা। পালটা স্লোগান দেয় বিজেপিও। তার জেরে দু’পক্ষের মধ্যে বচসা থেকে মারপিট পর্যন্ত বেঁধে যায়। তৃণমূল কর্মীদের দাবি, এখানে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চলছিল। বিজেপি প্রার্থী এসে গন্ডগোল পাকিয়েছে। ঘটনার জেরে শোভনদেববাবুও জানান, ‘বুথে বুথে তৃণমূলের এজেন্টদের বসতে বাধা দিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্যের ওপর বিজেপির কর্মীরাই হামলা করেছে। আমরা সেই ঘটনার তীব্র নিন্দ করছি। এই দুটি ঘটনার জেরে হামলার প্রতিবাদে কমিশনে অভিযোগ জানানোর কথাও জানিয়েছেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। কথা বলেছেন ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনার মনোজ বার্মার সঙ্গেও। এদিন বিকেল ৫টা পর্যন্ত খড়দহে ভোট পড়েছে ৬৩.৯০ শতাংশ।