নিজস্ব প্রতিনিধি: অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময়ের অপেক্ষা। এবার সেই অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে। ফের জুড়তে চলেছে দুই বাংলা(Bengal)। তাও রেলপথে। যাত্রীবাহী ট্রেনের হাত ধরে। বাংলাদেশ(Bangladesh) আর উত্তরবঙ্গ। কার্যত এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণের সাক্ষী থাকতে চলেছেন দুই বাংলার মানুষ আগামী ২৬ মার্চ। কেননা সেদিনই ৫৮ বছর পর চিলাহাটি(Chilahati) সীমান্ত দিয়ে আন্তর্জাতিক যাত্রীবাহী ট্রেনের চাকা ফের আরও একবার গড়াতে চলেছে দুই বঙ্গের মধ্যে। ওইদিনই হলদিবাড়ির(Haldibari) চিলাহাটি হয়ে ভারতে প্রবেশ করতে পারে বহুকাঙ্ক্ষিত ঢাকা-নিউ জলপাইগুড়ি মিতালি এক্সপ্রেস(Mitali Express)। ২০২১ সালে উদ্বোধন হওয়ার ঠিক এক বছরের মাথায় চিলাহাটি হয়ে ঢাকা থেকে নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত যাত্রীবাহী ট্রেনের চাকা গড়াতে চলেছে। ওই দিনটিকে সামনে রেখে ইতিমধ্যে জোর তৎপরতা শুরু হয়ে গিয়েছে বিভিন্ন মহলে। যাত্রীবাহী আন্তর্জাতিক ট্রেন চলাচলের প্রস্তুতি নিতে বৈঠকে বসতে চলেছেন বিভিন্ন দফতরের উচ্চপদস্থ কর্তারা।
দোলের ঠিক একদিন আগে বৃহস্পতিবার সকালে কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ মহকুমার হলদিবাড়ি ব্লকের খালপাড়ায় অবস্থিত আন্তর্জাতিক সীমান্তের রেলগেটের সামনে আয়োজিত হয় এক বৈঠক। তাতে যোগ দেন কাস্টমস, ইমিগ্রেশন, বিএসএফ ও রেলের উচ্চপদস্থ কর্তারা। পাঁচ দশকেরও বেশি সময় পর প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে যাত্রীবাহী ট্রেন পরিষেবা চালুর তৎপরতা শুরু হওয়ার খবরে খুশির হওয়া দুই বাংলার মানুষের মধ্যে। ছিটমহল বিনিময় চুক্তি হওয়ার পর ভারত-বাংলাদেশ রেল যোগাযোগ আরও সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে অগ্রসর হয়েছে দুই দেশ। ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করেন হলদিবাড়ি-চিলাহাটি রেল রুটের। শুরু হয় পণ্যবাহী ট্রেন পরিষেবা। এরপর ২০২১ সালের ২৭ মার্চ ভার্চুয়ালি দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী যাত্রীবাহী মিতালি এক্সপ্রেসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। করোনার কারণে দু’বছর পর্যটন ভিসা দেওয়া বন্ধ রেখেছিল ভারত। সেই কারণে উদ্বোধন হলেও ট্রেনটি সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের মাটিতে আর আসেনি। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় ট্রেনটি চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুই দেশের রেলমন্ত্রক।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, ২৬ মার্চ ট্রেনটি বাংলাদেশের ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে যাত্রী নিয়ে নীলফামারি, ডোমার, চিলাহাটি স্টেশন হয়ে ভারতের হলদিবাড়ি স্টেশনে এসে পৌঁছাবে। বাংলাদেশের ইঞ্জিন সহ লোকো-পাইলটরা হলদিবাড়ি স্টেশনে থেকে যাবেন। হলদিবাড়ি থেকে ভারতীয় ইঞ্জিনে ট্রেনটিকে নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত নিয়ে যাবেন এদেশের লোকো পাইলটরা। ফেরার সময় ঠিক একইভাবে বাংলাদেশের ইঞ্জিন সহ লোকো-পাইলটরা ট্রেনটি সেদেশে নিয়ে যাবেন। রেল সূত্রে খবর, মিতালি এক্সপ্রেসের টিকিট কাটার জন্য বৈধ ভিসা এবং পাসপোর্ট প্রয়োজন। বাংলাদেশের ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশন এবং এদেশের নিউ জলপাইগুড়ি রেলস্টেশন থেকে সেই টিকিট পাওয়া যাবে। আপাতত ঠিক হয়েছে, ট্রেনটি উভয় দেশ থেকে সপ্তাহে দুইদিন করে চলাচল করবে। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে রবিবার ও বুধবার। অন্যদিকে, বাংলাদেশ থেকে সোমবার ও বৃহস্পতিবার ট্রেনটি যাত্রা করবে। ট্রেনটিতে মোট যাত্রীবাহী কোচ থাকবে ৮টি। ৪টি কেবিন কোচ ও ৪টি এসি চেয়ার কোচ। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, ট্রেনটিতে চিলাহাটি স্টেশনের জন্য দুটি পৃথক কোচ বরাদ্দ থাকবে। চিলাহাটি স্টেশনে ট্রেনটি ৩০ মিনিট দাঁড়াবে। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সব্যসাচী দে মিতালি এক্সপ্রেস চালুর কথা স্বীকার করলেও বৃহস্পতিবারের বৈঠকের আলোচ্য বিষয় প্রসঙ্গে কিছু জানাতে চাননি।