নিজস্ব প্রতিনিধি: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) এই বছরও রাজ্যের ৪৩ হাজার পুজো কমিটিকে ৬০ হাজার টাকা প্রদান ও বিদ্যুৎ বিলে ৬০ শতাংশ ছাড় দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন গত ২২ তারিখের সভা থেকে। সেদিন কলকাতা ও রাজ্যের পুজো কমিটি গুলির সঙ্গে ছিল তাঁর বৈঠক। মুখ্যমন্ত্রীর সেই ঘোষণার পরে পরেই আশঙ্কা দানা বেঁধেছিল যে এই বিষয়ে কলকাতা হাইকোর্টে(Calcutta High Court) জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হতে পারে। হয়েওছে তাই। এক আধটা নয়, তিন তিনটে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার সকালেই তৃতীয় মামলাটি দায়ের হয়েছে। আগামীকাল অর্থাৎ শুক্রবার এই মামলার শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে। মহার্ঘ ভাতা না দিয়ে কেন অনুদান, এই প্রশ্ন তুলেই মামলা দায়ের হয়েছে। এই অনুদান কোন বৃহত্তর জনস্বার্থে লাগবে? অবিলম্বে রাজ্যকে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের নির্দেশ দিক আদালত। এমনই আবেদন জানিয়ে, হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন মামলাকারী। তবে বিষয়টি নিয়ে রাজ্য প্রশাসনে উদ্বিগ্নতা ছড়িয়ে পড়লেও বাংলার শাসক শিবির মোটেও উদ্বিগ্ন নয়।
রাজ্য প্রশাসন কেন উদ্বিগ্ন? নবান্নের আধিকারিকদের হিসাব, পুজো(Durga Puja) কমিটিগুলিকে সরাসরি আর্থিক অনুদান(Financial Help) দিতে খরচ পড়বে ২৫৮ কোটি। বিদ্যুৎ বিলে ৬০ শতাংশ ছাড়পত্র দেওয়ার পর তা ৩০০ কোটিতে গিয়ে দাঁড়াবে। এই টাকাটা অবশ্যই কম নয়। কিন্তু রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের এক বছর ১ শতাংশ মহার্ঘভাতা দিতে দরকার ৭১১ কোটি টাকা। ষষ্ঠ বেতন কমিশনের পরে ২.৫৭ গুণ বেতন বেড়েছে। ফলে ১ শতাংশ মহার্ঘভাতা দেওয়াটাই অনেক টাকার বিষয়। বকেয়া মহার্ঘভাতার দাবি মেটাতে আরও অনেক টাকার প্রয়োজন। সেই বাড়তি টাকা কোথা থেকে আসবে? গত বছরও একই ভাবে মামলা হয়েছিল। তখন আদালতে সরকারের পক্ষে জানানো হয়েছিল, কোভিড মোকাবিলায় পুজো কমিটিগুলিকে সাহায্য করা হচ্ছে। এবারে রাজ্যে কোভিড খুবই কম। এবারেও রাজ্য সরকার যদি একই যুক্তি দেয় তাহলে তা আদালত মানবে তো? আর যদি সেই যুক্তি না দেওয়া হয় তাহলে কোন যুক্তি দেবেন রাজ্যের আইনজীবীরা? একই সঙ্গে ডিএ মামলায় আদালত সরাসরি প্রশ্ন তুলতেই পারে, পুজো কমিটিগুলিকে ৩০০ কোটি টাকা অনুদান দেওয়ার টাকা রাজ্য সরকারের থাকলে কেন আদালতের নির্দেশ মেনে বকেয়া ডিএ মেটানো হচ্ছে না? সেক্ষেত্রে রাজ্য সরকার যদি টাকা না থাকার যুক্তি দেখায় তা খারিজ করে দিতে পারে আদালত। অর্থাৎ সিঙ্গেল বেঞ্চের রায়ের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে রাজ্য সরকার যে আবেদন করেছে তা খারিজ হয়ে যেতে পারে।
তবে তৃণমূল(TMC) সূত্রে খবর এই সব মামলা নিয়ে তাঁরা বিন্দুমাত্র উদ্বিগ্ন নন। কেননা তাঁদের দাবি, এই ধরনের কোনও ঘটনা ঘটলে আদতে তা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির ভোট ব্যাঙ্কেই ধাক্কা দেবে। কিন্তু কেন? এই মামলার সঙ্গে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির ভোট জড়িয়ে কী ভাবে? তৃণমূলের নেতাদের যুক্তি, মুখ্যমন্ত্রী যে ৪৩ হাজার পুজো কমিটিকে অনুদান দেবেন বলে ঘোষণা করেছেন, তার বড় অংশই গ্রামাঞ্চল এবং মফস্বলে। ওই সব এলাকায় পুজোর খরচ ৬০ হাজার টাকা মানে অনেক টাকা। ওই সব এলাকায় কালনার ১০ হাজার টাকার প্রতিমা আনা হয়। প্যান্ডেল খরচে মেরেকেটে ১৫ হাজার আর আলোর পিছনে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়। এর পরে বড় খরচ বলতে ঢাকি হাজার ৫-৬ টাকা। প্রতিমা মণ্ডপে আনা এবং বিসর্জন বাবদ খরচ মোটামুটি আরও ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা। মানে সব মিলিয়ে ৪৫ হাজার টাকা। তারপরেও যে হাজার ১৫ টাকা থাকে তা দিয়ে লক্ষ্মী পুজো আর কালি পুজোও হয়ে যায়। কোথাও কোথাও ওই টাকায় সরস্বতী পুজোও হয়ে যায়। তাই ওই সব এলাকায় এখন আর সে ভাবে চাঁদা তোলা হয় না। সরকারের অনুদানের টাকা, ক্লাবের ছেলেদের বৃত্তি, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সাহায্য দিয়েই পুজো হয়ে যায়। সরকারি অনুদান চালুর পরে দুর্গাপুজোর সংস্কৃতিটাই অনেক বদলে গিয়েছে গ্রাম আর মফস্বলে। আগে জোর করে মানুষের থেকে চাঁদা তোলা হত। সেটা এখন বন্ধ। পুজোয় সবাই আনন্দ করছে। সরকারও সবাইকে সমান চোখে দেখছে। সরকার অনুদান বন্ধ করে দিলে সমস্যা হয়ে যাবে। তার থেকেও বড় বিষয় মানুষের বদ্ধমূল ধারণা এই সব মামলা করছে বাম-বিজেপি আর কংগ্রেস। তাঁরা পিছন থেকে তৃণমূলের সমর্থনে ধাক্কা দিতে এইসব করছে। কিন্তু আদালতের নির্দেশে অনুদান বন্ধ হলে বাংলার বুকে কয়েক হাজার পুজোন বন্ধ হয়ে যাবে। চাঁদার হুজ্জোতি ফিরবে। আর আমজনতার ক্ষোভ তখন বিরোধীদের ওপরেই আছড়ে পড়বে। সামনেই পঞ্চায়েত ভোট। সেখানেই এর রেশ সব থেকে বেশি পড়বে।