নিজস্ব প্রতিনিধি: বিরল বললেও কম বলা হবে। কেননা স্মরণাতীত কালে বাংলার কোনও নির্বাচনে এমন ফল এসেছে কিনা সন্দেহ। সেই ফলেরই মুখে সোম সকালে দাঁড়াতে হল আসানসোলকে। কেননা সেখানে একটি ওয়ার্ডে দুইজন প্রার্থীর ভোট প্রাপ্তির সংখ্যা সমান সমান। ফলে কে জিতবেন আর কেই বা হারবেন তা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছিল না। শেষে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তরফে সেখানে থাকা আধিকারিক সিদ্ধান্ত নেন কে জয়ী হয়েছেন সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে টস করে। দুটি পৃথক পৃথক কাগজে দুই প্রার্থীর নাম লিখে একটি বড় স্বচ্ছ প্লাসটিকের ড্রামে তা রেখে ভালো করে ঝাঁকানো হয়। তারপর এক নির্বাচনী কর্মীকে দিয়ে যে কোনও একটি কাগজ বার করতে বলা হয়। সেই কর্মী যে কাগজ বার করেন তাতে দেখা যায় নাম রয়েছে তৃণমূল প্রার্থীর। ব্যাস সিদ্ধান্ত মতন তিনিই জয়ী হলেন। এহেন ঘটনা ঘটল আসানসোল পুরনিগমের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে।
গত শনিবার রাজ্যের ৪টি পুরনিগমে ভোটগ্রহণ করা হয়েছিল। ওই ৪টি পুরনিগমের মধ্যে ছিল আসানসোলও। সেখানে এদিন সকাল থেকেই শুরু হয় ভোট গণনার পালা। শুরু থেকেই সেখানে ওঠে তৃণমূল ঝড়। বিকাল ৪টে পর্যন্ত পাওয়া খবরে আসানসোলের ১০৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৯১টি ওয়ার্ডে তৃণমূল হয় জিতে গিয়েছে নাহয় এগিয়ে রয়েছে। বিজেপি এগিয়ে ও জিতে গিয়েছে এমন ওয়ার্ডের সংখ্যা ৭। কংগ্রেস পেয়েছে ৩টি আস্ন, বামেরা ২টি ও অনান্যরা পেয়েছে ৩টি আসন। এর মধ্যে ফল নির্ধারণের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা যায় শহরের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে। সেখানে তৃণমূল এবং বামপ্রার্থী দু’জনেই সমসংখ্যক ভোট পেয়েছিলেন। তৃণমূল প্রার্থী আশা প্রসাদ ও বামপ্রার্থী তনুশ্রী রায় উভয়েই ২,৩৫৮টি করে ভোট পান। তাঁদের দু’জনের অনেকটা পিছনে বিজেপি প্রার্থী রেখাকুমারী শর্মা। তিনি পান ১,০০২ ভোট। এই অবস্থায় ওই আসনের ভাগ্য নির্ধারণে টস প্রথার মাধ্যমে ফলাফল নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।
এরপরেই দু’টি কাগজে দুই প্রার্থীর নাম লেখা হয়। প্রার্থীদের নাম লেখা ওই কাগজের টুকরো দু’টি একটি স্বচ্ছ ছোট ড্রামে রাখা হয়। তারপর এক জন গণনাকর্মীকে বলা হয় ড্রাম থেকে যে কোনও একটি কাগজ তুলে নিতে। ই কর্মী যে কাগজের টুকরোটি তোলেন তাতে তৃণমূল প্রার্থীর নাম লেখা ছিল। তাঁকেই জয়ী বলে ঘোষণা করে কমিশন। অন্য দিকে, আসানসোলেরই ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বুথে ফের ভোটগ্রহণের সম্ভাবনা দেখা গিয়েছে। কারণ কমিশন সূত্রে খবর, ইভিএম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় একটি বুথের ফল ঠিকমতন মিলছে না। ওই ইভিএম জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে পরীক্ষা করানো হয়েছে। কমিশন জানিয়েছে, ইভিএম ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তার ভিতরে তথ্য রয়েছে। ওই ইভিএম গণনার কাজ তাই এদিন আর হয়নি। নতুন ইভিএমে কত ভোট পড়েছে এবং এগিয়ে থাকা প্রার্থীর সঙ্গে নিকটবর্তী প্রতিদ্বন্দ্বীর ব্যবধান কত তা বিশ্লেষণ করা হবে। নতুন ইভিএমে এগিয়ে থাকা প্রার্থী যা ভোট পেয়েছেন সেই ভোট যদি ক্ষতিগ্রস্ত ইভিএমে জমা পড়া মোট ভোটের থেকে বেশি হয় তবে পুনরায় গণনা হবে না। নতুন ইভিএমের জয়ী প্রার্থীকেই জয়ী বলে ঘোষণা করা হবে।