নিজস্ব প্রতিনিধি: যতদিন তাঁরা তৃণমূলে(TMC) ছিলেন ততদিন মেদিনীপুরের(Midnapur) মাটি পরিচিত ছিল ‘অধিকারীদের গড়’ হিসাবেই। বাম জমানাতে এই পরিচিতি তৈরি না হলেও ২০০৯ সাল থেকেই এই পরিচিতি গড়ে ওঠে। কিন্তু তাঁরা ঘাসফুল ছেড়ে পদ্মফুলে ঝুঁকে পড়তেই এখন শুরু হয়ে গিয়েছে তাঁদের পায়ের নীচ থেকে মাটি সরে যাওয়ার পালা। মানে অধিকারীদের অধিকার ক্রমশই খর্ব হচ্ছে মেদিনীপুরের মাটিতে। তারই টাটকা সুবাস ছড়িয়ে পড়লে তাঁদের প্রধান ঘাঁটি তথা পূর্ব মেদিনীপুর জেলার অন্যতম মহকুমা শহর কাঁথিতে(Contai)। সেখানেই পদ্মপুখুরিয়া পদ্মশ্রী সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতিতে গোহারান হারলেন অধিকারীদের ঘনিষ্ঠজনেরা। অধিকারীদের ধাক্কা দিয়ে জয়ের মুখ দেখল তৃণমূল। ধাক্কা খেতে হল বিজেপিকেও। কেননা তাঁরা সেখানে খাতাই খুলতে পারেনি। আরও বড় কথা এই ভোট ছিল রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর খাস তালুকে। সেখানেই এই ভোট ধাক্কা তাঁকেও নাড়িয়ে দিল। ক্রমশ পরিষ্কার হচ্ছে যে কাঁথির মাটিও অধিকারীদের পায়ের তলা থেকে সরে যাচ্ছে দ্রুত হারে।
চলতি বছরে রাজ্যের যে শতধিক পুরসভায় ভোট হয়েছিল তাঁদের মধ্যে ছিক কাঁথিও। সেখানে ২১টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৮টি ওয়ার্ডেই জিতেছিল তৃণমূল। বিজেপি(BJP) পেয়েছিল মাত্র ৩টি আসন। তার মধ্যে ছিল শহরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডটি। একাধিকবার কাঁথির বুকে নানা সভায় শুভেন্দু এই ওয়ার্ডকেই শহরের মডেল ওয়ার্ড হিসাবে তুলে ধরেছিলেন। এই ওয়ার্ডের একটি এলাকা হল পদ্মপুখুরিয়া। সেখানেই রয়েছে পদ্মশ্রী সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি। সেই সমিতিতেই ৯টি পদে শনিবার ভোট গ্রহণ করা হয়। সমিতির মোট সদস্য সংখ্যা ৬৮১জন। শনিবার ভোটদান করেন ৬৩৪জন। রাতে ভোটগণনা হতে দেখা যায় ৯টি আসনেই জয়ী হয়েছে তৃণমূল সমর্থিত প্যানেল। অধিকারীদের ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিতরা যারা বিজেপির প্যালেন থেকে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁরা কেউ জয়ের মুখ দেখেননি। ওই নির্বাচনে বিজেপি বা অধিকারীদের তরফেও সেভাবে কোনও অভিযোগ তোলা হয়নি। ভোট হয় শান্তিপূর্ণ ভাবেই। সেখানেই দেখা যায় শুভেন্দু তথা অধিকারীদের মুখ পুড়িয়ে জয়ের মুখ দেখা তো দূর খাতাই খুলতে পারেনি বিজেপি।
অথচ মাস কয়েক আগে এই ১৮ নম্বর ওয়ার্ডেই জয়ের মুখ দেখেছিল বিজেপি। কিন্তু এই সমবায় সমিতির ভোটের ফল কার্যত চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, অধিকারীদের তো বটেই বিজেপিকেও আর পছন্দ করছেন না সেখানকার আমজনতা। ঘটনার জেরে রবিবার সরব হয়েছেন ওই ওয়ার্ডের প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর উত্তম মহাপাত্র। তিনি এদিন জানিয়েছেন, ‘বিজেপির মডেল ওয়ার্ডের তকমা কয়েকমাসেই খারিজ করে দিলেম এলাকার মানুষ। মানুষ আর বিজেপিকে কোনওভাবেই চাইছে না। সেটা ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে।’ যদিও সমবায় সমিতির এই নির্বাচনী ফলাফলকে গুরুত্ব দিতে চাইছে না গেরুয়া শিবির। বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুদাম পণ্ডিত জানান, ‘সমবায় নির্বাচন রাজনৈতিক বিশ্লেষণ করার জায়গা নয়। লোকসভা নির্বাচনেই প্রমাণ হবে এলাকার মানুষ কী চাইছেন।’