নিজস্ব প্রতিনিধি: সোমবার রাতে বীরভূম(Birbhum) জেলার রামপুরহাট(Rampurhat) থানার বাগটুই(Boktui) গ্রামে দুষ্কৃতীদের ছোঁড়া গুলিতে খুন হন স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তথা তৃণমূল নেতা ভাদু শেখ(Bhadu Sheikh)। ঘটনার সময় ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে বকটুই গ্রামে চায়ের দোকানে বসেছিলেন ভাদু শেখ। সেই সময় খুব কাছ থেকে তাঁকে লক্ষ্য করে পর পর বোমা ছোঁড়ে দুষ্কৃতীরা। তার জেরে কার্যত ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। সেই মৃত্যুর পরেই বকটুই গ্রামে বেশ কিছু বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ভাদুর অনুগামীরাই গ্রামে হামলা চালিয়ে ব্যাপক বোমাবাজি করে ও বাড়িতে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটায়। তার জেরেই একাধিক গ্রামবাসীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা ৮ হলেও গ্রামবাসীরা বুধবার সকালেও দাবি করেছেন ১৮জনের মতো মৃত্যু হয়েছে। অধিকাংশের দেহই রাতের মধ্যে লোপাট করা হয়েছে বলেই তাঁদের দাবি। যদিও পুলিশ সেই দাবিকে মান্যতা দেয়নি এখনও। তবে এদিন বীরভূম জেলা পুলিশ(Police) প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে দুটি ঘটনা মিলিয়ে গ্রেফতারির(Arrest) সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৩।
বকটুই গ্রামের ঘটনায় ইতিমধ্যেই সিট গঠন করেছে রাজ্য সরকার। সিট গতকালই তাঁদের তদন্ত শুরু করেছে এবং প্রাথমিক ভাবে জানিয়েছে, বাইরে থেকে আগুন লাগানো হয়েছে একাধিক বাড়িতে। আর সেই সূত্রেই প্রশ্ন উঠেছে বেছে বেছে কিছু বাড়িতে আগুন লাগানো হয়েছে কিনা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সিট এখন এটাই খতিয়ে দেখছে যে দুটি ঘটনার অভিযুক্তরা একই কিনা। ভাদু শেখকে খুন করার অভিযোগ উঠেছে সোনা শেখ, লোটন শেখ ও পলাশ শেখের বিরুদ্ধে। সিট এখন এটাই খতিয়ে দেখছে যে এরাই অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছে কিনা। যদিও এই অভিযুক্তরা এখনও কেউ ধরা পড়েনি। পুলিশ অবশ্য এদের সন্ধানের কাজ শুরু করে দিয়েছে। এমনিতেই মঙ্গলবার থেকে রাজ্যের শাসক দলের তরফে অভিযোগ তোলা হয়েছে বারংবার যে, রাজ্যে অস্থিরতা তৈরির লক্ষ্যে, উন্নয়নের গতি স্তব্ধ করতে, রাজ্যের ভাবমূর্তি খারাপ করার লক্ষ্যে, বাংলাকে ও তৃণমূলকে বদনাম করার লক্ষ্যে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। গোটা ঘটনাটি বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের বহিঃপ্রকাশ। রাজ্যের দৈনন্দিন প্রশাসনিক কাজকর্ম ও আইনশৃঙ্খলার ওপর কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ চাপানোর লক্ষ্য নিয়েই এই কাজ করা হয়েছে বলে দাবি তৃণমূল তথা রাজ্য সরকারের। তবে তার মধ্যেও কিছু প্রশ্ন উঠছে।
গতকাল রাতেই পুলিশের উপস্থিতিতে বকটুই গ্রামে মৃত ৮জনের দেহ সৎকার করা হয়। কিন্তু মৃতদের পরিবারের একাধিক সদস্যের অভিযোগ, তাঁরা দেহ চেয়েছিলেন প্রশাসনের কাছ থেকে। সেই দেহ তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয়নি। দেহ পাওয়ার জন্য পুলিশ থেকে প্রশাসনিক আধিকারিক মায় বিধায়কদের বলা হলেও দেহ মেলেনি। শুধু তাই নয়, অভিযোগ উঠেছে দেহগুলির শনাক্তকরণের জন্যও তাঁদের ডাকা হয়নি। গ্রাম্বাসীদের দিয়ে দেহ শনাক্ত করে তা রাতারাতি সৎকার করে দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন অবশ্য এই অভিযোগের কোনও জবাব দেয়নি। তবে তাঁরা জানিয়েছেন ভাদু শেখের খুনের ঘটনায় ৩জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে ও বকটুই গ্রামে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ২০জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সবাইকে বুধবার রামপুরহাট মহকুমা আদালতে তোলা হবে। অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ধৃতদের মধ্যে ভাদু শেখের এক দাদাও রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।