নিজস্ব প্রতিনিধি: কেন্দ্রের কাছে আবারও বাড়ল নবান্নের গুরুত্ব। শেষ হাসি হাসলেন সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। রাজ্যের দীর্ঘদিনের দাবি কার্যত মেনেই নিল মোদি সরকার। আর এই সিদ্ধান্তের জেরেই বাংলার সংখ্যালঘু সমাজের মাথার ওপর ঝুলে থাকা খাঁড়া সরেও গেল। পাশাপাশি মতুয়া সমাজের মানুষও লাভের মুখ দেখতে চলেছেন তাঁদের নাগরিকত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে। আর এই সবটাই হল রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে। কেন্দ্র-রাজ্য বিরোধ এখন অতীত। বরঞ্চ কেন্দ্রের কাছে এখন ক্রমশ কদর বাড়ছে মমতার। মেনে নেওয়া হচ্ছে তাঁর বেশ কিছু দাবি যা তিনি দীর্ঘদিন ধরে করে আসছেন। কেন্দ্র সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবার থেকে আধারকার্ড আসল না নকল তা খতিয়ে দেখবে রাজ্য সরকারই। সেখান থেকে সরে যাচ্ছে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ।
আরও পড়ুন সাদা নীলের শহরে আকাশ নীলের মুর্ছনা, মাঝরাতে অকাল দেওয়ালি
ভুয়ো তথ্য দিয়ে আধার কার্ড বাগিয়ে অনুপ্রবেশকারীরা জাঁকিয়ে বসছে ভারতে, এমন একাধিক অভিযোগ সামনে এসেছে গত কয়েক বছরে। পাশাপাশি ভুয়ো আধার কার্ডকে ব্যবহার করে প্রতারণার ঘটনাও দেশজুড়ে বিস্তর ঘটছে। অথচ রাজ্যের কাছ থেকেই হোক কী কেন্দ্রের কাছ থেকে আমজনতাকে সরকারি পরিষেবা নিতে হলে সেই আধারের মাধ্যমে আবেদন জানাতে হচ্ছে। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বেশিরভাগ জনমুখী প্রকল্পের সুবিধা মেলে আধার কার্ডের মাধ্যমে। আধারের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে সাধারণ মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, প্যানের মতো গুরুত্বপূর্ণ এবং ব্যক্তিগত গোপনীয় তথ্য। ‘লিঙ্ক’ না করালে একাধিক পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে তাঁদের। কিন্তু দেখা যাচ্ছে সেই আবেদন জানাতে গিয়েই কেউ কেউ প্রতারণার খপ্পরে পড়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি প্রায় ৭ লক্ষ জাল আধার কার্ড বাতিল করেছে আধার নিয়ন্ত্রক ও পরিচালন সংস্থা ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অব ইন্ডিয়া বা ইউআইডিএআই। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, এটি হিমশৈলের চূড়ামাত্র। ভুয়ো আধার কার্ডের শিকড় আরও গভীরে। সারা দেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গেও চলছে এই কারবার। ভুয়ো নথি জমা করে আধার কার্ড বাগিয়ে নেওয়ার ঘটনা এখানেও ক্রমশ বাড়ছে।
আরও পড়ুন পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সাড়ে ১৩ লক্ষ নতুন ভোটার রাজ্যে
সিএএ ও এনআরসি নিয়ে মোদি সরকার যে পদক্ষেপ করছিল তার জেরে দেশজুড়ে সব থেকে বেশি আপত্তি তুলেছিল সংখ্যালঘু সমাজ। মোদি সরকারের সেই পদক্ষেপের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ছিলেন মমতাও। রাজপথে নেমে আন্দোলন শুরু করেন তিনি। কার্যত মমতার চাপেই বিজেপি এই দুটি আইন নিয়ে তড়িঘড়ি করে না এগোনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আবার মতুয়ারা যে নাগরিকত্ব চাইছে সেই বিষয়েও বিজেপি তাঁদের কাছে প্রতিশ্রুতি ভিন্ন আর কিছুই দিতে পারেনি। এই অবস্থায় নবান্নে বসেছিল পূর্বাঞ্চলীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক। তাতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ(Amit Shah) ছাড়াও ছিলেন মমতাও। সেই বৈঠকের কেন্দ্র-রাজ্য সমন্বয় বাড়ানোর ওপর যেমন জোর দেওয়া হয় তেমনি কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত বলবৎ করার ক্ষেত্রে রাজ্যের সহযোগিতাও চাওয়া হয়। সেখানেই মমতা আধার সংক্রান্ত বেশ কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরেন। তারপরেই এখন দেখা যাচ্ছে আধার কার্ডের আসল বা নকলের বৈধতা ঠিক করার বিষয়টি রাজ্য সরকারের হাতেই ছেড়ে দিল মোদি সরকার। ঠিক করা হয়েছে, এবার থেকে আধার সংক্রান্ত যাবতীয় নথির সত্যতা, আধারের আবেদনকারীর পরিচয় সংক্রান্ত তথ্য যাচাই করবে রাজ্য প্রশাসনই। এ বিষয়ে রাজ্যস্তরে একটি কমিটি থাকবে। সেই সঙ্গে প্রতিটি জেলায়ও একটি করে কমিটি থাকবে। তার শীর্ষে থাকবেন জেলাশাসক। রাজ্যস্তরের কমিটির প্রধান হিসেবে থাকবেন মুখ্যসচিব। কমিটিগুলির আওতায় প্রশাসনিক কর্তারা আধার যাচাইয়ের কাজ করবেন।
আরও পড়ুন পঞ্চায়েতের আগে ধাক্কা পদ্মতে, ১০০ বিজেপি নেতাকর্মী ধরলেন জোড়াফুল
এতদিন রাজ্য প্রশাসনের আধার যাচাইয়ের ক্ষেত্রে কোনও ভূমিকা ছিল না। ফলে জাল নথি দিয়ে আধার কার্ড জোটানো অনেকটাই সহজ ছিল। এভাবেই কারচুপির মাধ্যমে দেশে অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করেছে। অথচ এই সব অনুপ্রবেশকারীকে চিহ্নিত করার মতো পরিকাঠামো কেন্দ্রের হাতে নেই। পর্যাপ্ত লোকবলের অভাব যেমন রয়েছে, তেমনই স্থানীয়ভাবে তথ্য যাচাইয়ের ক্ষেত্রেও সমস্যা রয়েছে কেন্দ্রের। কিন্তু রাজনৈতিক ভাবে এই অনুপ্রবেশ নিয়েই বিজেপির নেতারা লাগাতার তৃণমূলকে আক্রমণ শানিয়ে যাচ্ছেন বাংলার মুখে। অথচ সেই অনুপ্রবেশকারীদের ঠেকানো বা তাঁদের চিহ্নিত করার কোনও ক্ষমতাই ছিল না রাজ্য সরকারের। সংখ্যালঘু সমাজের মানুষদেরও সারাক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকতে হত। কিন্তু এখন আধার যাচাইয়ের কাজ রাজ্য সরকারের হাতে এসে যাওয়ায় এই সমস্যার অনেকটাই সমাধান হবে বলে মনে করা হচ্ছে। মতুয়াদেরও আর নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য কেন্দ্রের আইনের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না। তাঁরাও যথাযথ পদ্ধতি মেনে আধার কার্ড করিয়ে নিতে পারবেন।