নিজস্ব প্রতিনিধি: নবান্নের(Nabanna) শীর্ষস্তরে বসে থাকলেও অবরহ তাঁর নজর থাকে রাজ্যের নীচুতলা পর্যন্ত। তাঁকে না জানিয়ে রাজ্য প্রশাসনে কোনও সিদ্ধান্তই নেওয়া হয় না। অথচ রাজ্য পর্যটন দফতরের লোগো বদলে গেল তাঁকে না জানিয়েই। বিশ্বের পর্যটন(Tourism) মানচিত্রে পশ্চিমবঙ্গকে(West Bengal) তুলে ধরতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) যে লোগো চালু করেছিলেন তাতে বড় বড় করে লেখা থাকত ‘এক্সপেরিয়েন্স বেঙ্গল: দি সুইটেস্ট পার্ট অব ইন্ডিয়া’। যার অর্থ, বাংলাই যে ভারতের মধুরতম অংশ। কিন্তু অতি সম্প্রতি সেই লোগো(Logo) বদলে ফেলা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর পছন্দের বার্তাটুকু নতুন লোগো’য় রাখা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু তা রয়েছে বড়ই গুরুত্বহীনভাবে। বরং এমন একটি ছবি সামনে আনা হয়েছে, যা অনেকটাই ফিকে করে দিয়েছে পর্যটনের উজ্জ্বলতা। সেই লোগো ইতিমধ্যেই ঠাঁই পেয়েছে দপ্তরের নিজস্ব ওয়েবসাইট সহ অন্যত্র। সব থেকে বড় কথা নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, গোটা বিষয়টি ঘটেছে মুখ্যমন্ত্রীকে অন্ধকারে রেখে। যদিও এখনও পর্যন্ত সেই লোগো মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদন পায়নি বলেই নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন সব ধরনের পরিচয়পত্রেই বাধ্যতামূলক KYC, উদ্যোগী মোদি
এই ঘটনার জেরে এখন সব থেকে বড় প্রশ্ন যেটা উঠেছে তা হল, রাজ্য প্রশাসনের ওপর কী আর কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়য়ের? নাকি তাঁকে অন্ধকারে রেখে, তাঁর সম্মতি ছাড়াই রাজ্যের কোনও একটি দফতরের কোনও বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী এমন কারোর হস্তক্ষেপ ঘটছে রাজ্য প্রশাসনে? নবান্ন সূত্রে দাবি, এই গোটা ঘটনা যার মস্তিষ্কপ্রসূত ইতিমধ্যেই তাঁকে চিহ্নিত করা হয়েছে ও নবান্নের কাছে তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার আর্জিও জানানো হয়েছে। সেই ‘মাথা’ পর্যটন দফতরেরই এক আধিকারিক, যিনি আদতে গেরুয়া শিবিরের হয়ে কাজ করে চলেছিলেন। শুধু দফতরের লোগো পরিবর্তনই নয়, দফতরের প্রয়োজনীয় কোনও কাজের জন্য দরপত্র ডাকা ছাড়াও নানা কাজকর্ম এবং গেরুয়া নেতাদের ‘বায়নাক্কা’ মেটানোর জন্য আধিকারিকদের বাড়তি তৎপরতার নির্দেশ দিচ্ছিলেন তিনি। এবার তাঁর ডানা ছাঁটার কাজ শুরু করে দিয়েছে নবান্ন।
আরও পড়ুন গঙ্গা-পদ্মার ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন, মোদিকে চিঠি মমতার
বাংলাকে বিশ্বের পর্যটন মানচিত্রে তুলে ধরে আয় বাড়ানোর দিকে বিশেষ ভাবে নজর দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মূল লক্ষ্য ছিল রাজ্যে আরও বেশি সংখ্যায় দেশী-বিদেশী পর্যটক টেনে আনা, রাজ্যের পর্যটনস্থলগুলির উন্নয়ন এবং অবশ্যই এই পর্যটন শিল্পকে আঁকড়ে ধরে কর্মসংস্থানে জোয়ার আনা। সেই লক্ষ্যেই পর্যটন দফতরকে গত এক দশকে ধাপে ধাপে ঢেলে সাজিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলিউডের বাদশা শাহরুখ খানকে যেমন রাজ্যের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর করা হয়েছে তেমনি পর্যটনের ক্ষেত্রে অনলাইন পরিষেবাতেও জোর দেওয়া হয়েছে। গজলডোবাকে কার্যত আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্রের রূপান্তরিত করা হয়েছে। সেই সূত্রেই মুখ্যমন্ত্রী ২০১৫ সালে রাজ্য পর্যটন দফতরের লোগো বদলে দেন। কিন্তু দিন সাতেক হল সেই লোগো বদলে গিয়েছে পর্যটন দফতরের ওয়েবসাইটে। নতুন লোগোটিতে যে ত্রিমাত্রিক বা ‘থ্রিডি লুক’ দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে, তা নিতান্তই জৌলুসহীন, বলছেন অনেকেই। পাশাপাশি আনা হয়েছে নতুন ‘ক্যাপশন’ও। ‘সি টু স্কাই’ কথাটি ব্যবহার করা হয়েছে সেখানে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে যেখানে বাংলার পর্যটনের কথা বলতে গিয়ে বারবার বলেন সমুদ্র থেকে পাহাড়ের কথা, সেখানে কেন ‘সাগর থেকে আকাশ’-এর কথা বলা হল, তাও কারও বোধগম্য হচ্ছে না।
আরও পড়ুন বাংলার মানুষের উন্নয়নে কাজ করব, জানালেন নয়া রাজ্যপাল
নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, গেরুয়া শিবিরের এক প্রভাবশালী প্রাক্তন সাংসদ পর্যটন দফতরের ওই ‘মাথা’ তথা আধিকারিককে নির্দেশ দিয়ে এই সব কাজ করাচ্ছেন। আর তার জেরেই কোনওরকম দরপত্র ছাড়াই, মুখ্যমন্ত্রীকে অন্ধকারে রেখে এই লোগো বদলে ফেলা হয়েছে। এমনকি এটাও জানা গিয়েছে, দরপত্র ছাড়া কাজের বিষয়ে দফতরের অন্য কর্তারা ওজর-আপত্তি করলেও, তা নাকি ধোপে টেকেনি ওই আধিকারিকের নির্দেশের কাছে। বরং আপত্তি করায় ‘ভর্ৎসনা’র মুখে পড়তে হয়েছে কয়েকজনকে। এবার সেই আধিকারিকের বিরুদ্ধেই পদক্ষেপ করতে চলেছে নবান্ন।