নিজস্ব প্রতিনিধি: যারা একসময় বলেছিল, ‘ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায়’ তাঁরা আজও নিজেদের সব কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে না স্বাধীনতা দিবসে বা সাধারনতন্ত্র দিবসে। তবে নিয়ম করে মে দিবসে পার্টির পতাকা তুলতে তাঁরা কার্পণ্যবোধ করেন না। তাই স্বাধীনতার ৭৫তম দিবসেও রাজ্যের কোনও সিপিআই(এম)(CPIM) কার্যালয়েই জাতীয় পতাকা কেউ তোলেননি। তবে এই ছবিটাই একটু ব্যতিক্রম হয়ে গেল পশ্চিম বর্ধমান জেলার(Paschim Burdhwan) দুর্গাপুর মহকুমার পাণ্ডবেশ্বর(Pandabeshwar) ব্লকে। সেখানকার নবগ্রাম(Nabagram) এলাকায় সিপিআই(এম) এর কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন স্থানীয় তৃণমূল(TMC) বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী(Narendranath Chakrabarty)। বামেদের কার্যালয়ে তৃণমূল বিধায়কের এই জাতীয় পতাকার উত্তোলনের ঘটনা মুহুর্তের মধ্যেই ভিডিও হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে নানা সোশ্যাল মিডিয়াতে। সেই ভিডিও ভাইরাল হতেও বেশি দেরী হয়নি।
সোমবার পাণ্ডবেশ্বরের নবগ্রাম এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলেন তৃণমূল বিধায়ক। সেই সময় তাঁর চোখে পড়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন সিপিএম কর্মী-সমর্থকরা। প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন বাম সমর্থকেরা বোধহয় রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখানোর তোড়জোড় করছেন। কিংবা তাঁকে ঘেরাও করে বিক্ষোভের আয়োজন করছে। কিন্তু পরে তাঁর স্বেই ভুল ভাঙে। সিপিএম কর্মী-সমর্থকরা বিধায়কের গাড়ি দাঁড় করিয়ে তাঁকে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে অনুরোধ করেন। সিপিএম কর্মীদের সেই অনুরোধে সাড়া দেন তৃণমূল বিধায়ক। তিনি গাড়ি থেকে নেমে সিপিএমের দলীয় দফতরে গিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এর পর বিধায়ক জানান, ‘যাঁরা এখানে সিপিএম করেন তাঁরা আমার ছোট ভাই। পতাকা তোলা হয়নি, তাই তাঁরা দাঁড়িয়েছিলেন। আমাকে ডাকলেন ওঁরা। আমি এসে পতাকা তুললাম। আজ স্বাধীনতা দিবস। আজ কোনও রাজনৈতিক ভেদাভেদ নেই। আমরা সকলে ভারতবাসী। এটা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুল ইসলাম, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিক্ষা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এক সময় চুলের মুঠি ধরে মহাকরণ থেকে বার করে দেওয়া হয়েছিল। আবার সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পর বামনেতাদের ফিশ ফ্রাই খাইয়ে আপ্যায়িত করেছিলেন।’
বাংলার বুকে সিপিএমের কার্যালয়ে গিয়ে তৃণমূল বিধায়কের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করার ছবি কার্যত বেনজির। তৃণমূল বিধায়কের পতাকা উত্তোলনের সময় দলীয় দফতরে উপস্থিত থাকা সিপিএমের নবগ্রাম শাখার সম্পাদক নেতা হাবিবুল শেখ অবশ্য এই ঘটনাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁর দাবি, ‘আজ একটা আলাদা দিন। বিধায়ক জাতীয় পতাকা তুলেছেন। সে জন্য আমরা ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আজকের দিনে কোনও রাজনীতি নয়। এর মধ্যে দোষের কিছু দেখছি না। গ্রামে সকলে মিলেমিশে থাকেন। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করাটা কোনও ভুল নয়। এটা অপরাধ নয়। উনি সকলের বিধায়ক।’