নিজস্ব প্রতিনিধি: বাইরের কেউ নয়, ঘাতক পরিবারের সদস্যরাই। বর্ধমানের গ্রামে গিয়ে কলকাতার ব্যবসায়ী খুন হওয়ার ঘটনায় এমন অভিযোগই করলেন খোদ নিহত ব্যবসায়ীর বাবা। তাঁর দাবি, সম্পত্তিগত বিবাদের জেরেই তাঁর ভাই আর ভাইয়ের ছেলেরাই সুপারি কিলার দিয়ে তাঁর ছেলেকে খুন করেছে। আর এই অভিযোগের জেরেই ব্যবসায়ী খুনের ঘটনায় চাঞ্চল্যকর মোড় নিয়েছে। শুক্রবার রাতে পূর্ব বর্ধমান জেলার রায়না থানার দরিয়াপুর গ্রামে খুন হন কলকাতার হার্ডওয়ার ব্যবসায়ী সব্যসাচী মণ্ডল(৩৭)। সেই খুনের ঘটনাতেই এখন তাঁর বাবা দেবকুমার মণ্ডল দাবি করেছেন, এই খুনের ঘটনায় জড়িত তাঁর ভাই গৌরহরি মন্ডল ও তার দুই ছেলে দীনবন্ধু মণ্ডল ও সোমনাথ মণ্ডল। এমনকি এই ঘটনায় ভাতৃবধু পূর্ণিমা মন্ডলও জড়িত বলেই দাবি করেছেন তিনি।
সব্যসাচী শুক্রবার বিকালে কলকাতা থেকে গাড়ি নিয়ে দরিয়াপুর গ্রামে গিয়েছিলেন বিজয়া সারতে। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বন্ধু রাজবীর সিং, গাড়ির চালক ও এক রাঁধুনি। সব্যসাচী গ্রামে পৌঁছালে গ্রামের বন্ধুরা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন ও ঠিক হয় রাতে বাড়ির ছাদে পিকনিক হবে। সেই মতন রাতে রান্নার সময়েই সব্যসাচীর সঙ্গে বন্ধুদের গল্প চলাকালীন সময়েই গ্রামের একটি জমি নিয়ে বিবাদ বাঁধে তাঁদের মধ্যে। সেই সময়েই সব্যসাচীর গাড়ির চালক এসে জানায়, তাঁর সঙ্গে গ্রামের কয়েকজন দেখা করতে চাইছে। সেই কথা শুনে সব্যসাচী ছাদ থেকে নীচে নামতেই গুলিবিদ্ধ হন। সেই জায়গা থেকেই সব্যসাচীকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান তাঁর বন্ধু ও রাঁধুনি। যদিও রাতেই মারা যান সব্যসাচী। পুলিশ ঘটনার তদন্তে নেমে রাজবীরের পাশাপাশি সব্যসাচীর গাড়ির চালক ও রাঁধুনিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। তাঁদের ধারনা ছিল সুপারি কিলার দিয়েই সব্যসাচীকে খুন করানো হয়েছে। আর সেই খুনের ঘটনায় জড়িত ওই ৩জনই।
কিন্তু ঘটনা অন্যদিকে মোড় নেয় দিন সকালে সব্যসাচীর বাবা দেবকুমার মণ্ডল রায়না থানায় ভাই গৌরহরি মন্ডল, তার দুই ছেলে দীনবন্ধু মণ্ডল ও সোমনাথ মণ্ডল এবং ভাতৃবধু পূর্ণিমা মন্ডল খুনের অভিযোগ দায়ের করায়। পরে তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘আমার বাড়িতে অনেক ঝামেলা রয়েছে। ভাইয়ে ভাইয়ে সম্পত্তি নিয়ে এসব হয়েছে। আমার ছেলেটাকে সুপারি কিলার লাগিয়েই খুন করা হয়েছে। নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে তাঁকে। দোষীরা যাতে ধরা পড়ে আমি তার জন্য পুলিশকে আবেদন জানাবো। আমি আর সহ্য করতে পারছি না। সম্পত্তি নিয়ে ভাই ভাইয়ে ঝামেলা ছিল। আমার ছোট ভাইয়ের ছেলের এসব কাজ করেছে বলে মনে হচ্ছে। এটাই আমার আইডিয়া। এটা সুপারি কিলার দিয়েই করানো হয়েছে। আগেও আমার ভাইয়ের ছেলেরা আমার ছেলেকে মারধর করেছে। আমি ভাইয়ের পা ধরে বলেছিলাম, আমার ছেলেকে ছেড়ে দে… জুতো পরে লাথি মেরেছিল। সেটা ২০১৬ সালে মহালয়ার আগের দিনের ঘটনা। আমার এই ভাইপো দুটোই এই কাজ করেছে। দ্রুত অপরাধীরা শাস্তি পাক।’ পুলিশ এই দাবি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে।