নিজস্ব প্রতিনিধি: না খুব বেশিদিন নয়, মাত্র অল্প কিছুদিন হয়েছে তিনি ইন্ডাস্ট্রিতে। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই গোটা বাংলার বুকে নিজের একটা আলাদাই পরিচয় তৈরি করে নিয়েছিলেন মুর্শিদাবাদ বহরমপুরের সেই মেয়েটা। প্রেমিকের হাত ধরে শহরের এদিক ওদিক দাপিয়ে বেড়াতেন মেয়েটি, দিতেন গুচ্ছ গুচ্ছ ছবি। বাবা-দিদি ডাক্তার, মা নার্স, মেডিক্যাল পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও তিনি বরাবরই নিজেকে অভিনেত্রী হিসেবে দেখতে চেয়েছেন।
কলকাতায় এসে প্রথমেই ধারাবাহিকে নায়িকার সুযোগ পেয়ে যান, এরপরও আস্তে আস্তে ঝড়ের বেগে কেরিয়ারের উন্নতি, ওয়েবসিরিজে দাপিয়ে অভিনয়, সবটার মাধ্যমেই তিনি আস্তে আস্তে বড় পর্দার দিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন। কিন্তু সবটাই যেন মুহূর্তেই অস্থিরূপে গতকাল কুঁদঘাটে ভাসিয়ে দেওয়া হল। হ্যাঁ, ঐন্দ্রিলা শর্মা নামটার হয়তো আজ কোনো অস্তিত্ব নেই। কিন্তু তাঁর অভিনীত শিল্পের মাধ্যমে তিনি থেকে যাবেন চিরকাল মানুষের মনে। বিশেষ করে বিশেষ বন্ধু সব্যসাচী চৌধুরীর হাত ধরে তিনি যে ভালোবাসার আলপনা এঁকে গেলেন তা হয়তো ভালোবাসার একটি অনন্য সংজ্ঞা হয়েই রয়ে যাবে চিরকাল। ঐন্দ্রিলাদের দীর্ঘদিনের প্রতিবেশী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় তাঁর পাড়ার মিষ্টি মেয়েটির মৃত্যুর কথা শোনা মাত্রই আবেগে ভেঙে পড়েন। এবং বলেন, ‘‘২০১১ সাল থেকে আমি ওদের প্রতিবেশী। মিষ্টি বাড়ি আছে কি না কাউকে জিজ্ঞেস করতে হত না, অট্টহাসি আর চিল চিৎকার বলে দিত মিষ্টি এসে গেছে। এ রকম প্রাণোচ্ছ্বল, সদা-হাস্য একটি মেয়ে নিশ্চুপ হয়ে গেল ভাবতেই পারছি না।’’
গতকাল দীর্ঘ জীবনযুদ্ধে পরাস্ত হয়েছেন ঐন্দ্রিলা। একাধিক শারীরিক যন্ত্রনা থেকে শেষমেশ মুক্তি পেলেন অভিনেত্রী। এখনও অভিনেত্রীর বহরমপুরের বাড়িতে বড় বড় করে ঝুলছে অভিনেত্রীর নাম। বাড়ির সকল সদস্যদের সঙ্গে জ্বলজ্বল করছেন তিনি। বহরমপুরের ইন্দ্রপ্রস্থের সেই তিন তলা সাদা বাড়িটায় রবিবার থেকেই শুধুই নিস্তব্ধতা। সেই মিষ্টি, খিলখিলিয়ে হাসির মেয়েটা আজ আর নেই। শোনাও যাবে না তাঁর কণ্ঠ আর কোনদিনও। সে এখন মৃত্যুর পরপারের যাত্রী। গতকাল থেকেই তাঁর বাড়ি বহরমপুরের অন্ধকারে আচ্ছন্ন। সামনে দাঁড়িয়ে স্মৃতি হাতড়ে বেড়াচ্ছেন পাড়া প্রতিবেশীর।
বহরমপুর মোহনা বাস স্ট্যান্ড থেকে রানিবাগান মোড় হয়ে ইন্দ্রপ্রস্থের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএমের পাশেই ঐন্দ্রিলার বাড়ির গলি। সাদা রঙের তিন তলা বাড়িটার মধ্যে লোহার ফটকের উপর ঝুলছে উত্তম শর্মা, ঐশ্বর্য শর্মা, শিখা শর্মা, ঐন্দ্রিলা শর্মার নাম। সব শেষে বাড়ির ছোট মেয়ে অর্থাৎ ঐন্দ্রিলার নাম। ঐন্দ্রিলার মৃত্যুর কয়েক ঘন্টা পরেই অভিনেত্রীর দিদি ঐশ্বর্যা পাড়ায় কয়েক জনকে ফোন করে মৃত্যুসংবাদটা দেন। বলেন, ‘‘বোনকে আর ফেরাতে পারলাম না গো!’’ যা শোনা মাত্রই ভেঙে ঐন্দ্রিলার গোটা পাড়া। ঐন্দ্রিলার মৃত্যুর খবর শুনেই তাঁর বাড়ির সামনে ছুটে আসেন তাঁর দীর্ঘ দিনের নাচের শিক্ষক অভিজ্ঞান ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, যখনই বহরমপুরে আসতো নাচের স্কুলে রিহার্সালে চলে আসত ঐন্দ্রিলা। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা। নাচে, আঁকা সবেতেই ওস্তাদ ছিলেন তিনি।