নিজস্ব প্রতিনিধি: বয়স তাঁর মাত্র ৩৬। অথচ প্রথম থেকেই দেশের বিপদসংকুল স্থানে পোস্টিংই ছিল পছন্দের। দেশবাসীর সুরক্ষার গুরুদায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিতে বিন্দুমাত্র পিছুপা হতেন না তিনি। অথচ তাঁকেই প্রাণ হারাতে হল সহকর্মীর গুলিতে। তিনি রাজীব মণ্ডল। সোমবার সকালে ছত্তীসগঢ়ের সুকমা জেলার মারাইগুড়ি থানার সিআরপিএফ ক্যাম্পে গুলিচালনার যে ঘটনা ঘটে তাতে যে ৪জন জওয়ান প্রাণ হারান তাঁদের মধ্যে রয়েছেন আমাদের বাংলার নদিয়া জেলার দেবগ্রাম থানার যমপুকুর এলাকার বাসিন্দা রাজীব মণ্ডলও। এদিন বেলার দিকেই সেনাবাহিনী থেকে ফোন করে এই খবর দেওয়া হয়েছে তাঁর পরিবারকে। আর তারপরেই এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। কান্নায় ভেঙে পড়েছে পরিবার। কার্যত মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে তাঁদের।
২০১০ সালে আধা সামরিক বাহিনীতে যোগ দেন রাজীব। পরীক্ষা, ইন্টারভিউ, ট্রেনিং পর্ব পেরিয়ে সিআরপিএফে যোগদান। ২০১৩ সালে বিয়ে, দুই কন্যাসন্তানের বাবা তিনি। চলতি বছরই রাজীবকে সুকমার ৫০ নং ব্যাটেলিয়ানে ট্রান্সফার করা হয়। তাঁর ঠিকানা হয়, সুকমার মারাইগুড়ি থানার সিআরপিএফ ক্যাম্প। পুজোর সময় নদিয়ার বাড়িতেও ফিরেছিলেন রাজীব। আনন্দে মুখর হয়ে উঠেছিল গোটা পরিবার। ছুটি শেষে রাজীব ফিরে যান সুকমার সিআরপিএফ ক্যাম্পে। ছত্তিশগড়ের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে ঠিকমতো নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না বলে ফোনে কথা খুব কম হতো। কান্নাভেজা গলায় জানাচ্ছেন অসুস্থ মা। জানিয়েছেন, ‘চারদিন আগেও ফোনে কথা হয়েছিল। বলছিল, মা চিন্তা করো না। আমি ভাল আছি। তোমার জন্য টাকা পাঠাচ্ছি। ভাল করে ডাক্তার দেখিও।’ অসুস্থ মায়ের জন্য চিন্তা রাজীব সবসময় চিন্তিত থাকতেন। দূরে থেকেও চেষ্টা করতেন, যাতে মায়ের চিকিৎসা হয় ঠিকমতো।
সোমবার সকালে বাড়িতে তাঁর মৃত্যু সংবাদ যখন, তখন স্ত্রী সুলেখা ছিলেন না বাড়িতে। বাপের বাড়ি থেকে ছুটতে ছুটতে আসেন সুলেখা। কান্নায় ভেঙে পড়ে গোটা পরিবার। কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছেন না তারা। তারপর থেকেই একটানা কেঁদে চলেছেন রাজীবের স্ত্রী। দুই সন্তানকে নিয়ে এখন কীভাবে দিন কাটাবেন এই প্রশ্নই মাথায় ঘুরছে বারবার। ছেলের মৃত্যু সংবাদ শুনে বারবার অজ্ঞান হয়ে পড়েছেন রাজীবের মাও। কীভাবে এমনটা সম্ভব বুঝেই উঠতে পারছেন না তিনি। শোকে কাতর গোটা পরিবার। রাজীবের তিন বছর ও পাঁচ বছর বয়সী দু’টি মেয়ে রয়েছে। এখন তাঁদের ভবিষ্যতও বিশ বাঁও জলে।