নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা: চিকিৎসকদের যাবতীয় চেষ্টা ব্যর্থ করে না ফেরার দেশে চলে গেলেন দেশের রাজনীতিতে ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিত সিরাজুল আলম খান ওরফে দাদা ভাই। শুক্রবার দুপুর আড়াইটা নাগাদ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে বয়স ছিল ৮২ বছর।
বার্ধক্যজনিত সমস্যার কারণে গত ২০ মে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের প্রতিষ্ঠাতা তথা ষাটের দশকের দাপুটে ছাত্র নেতা সিরাজুল আলম খানকে। শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটায় আইসিইউতে স্থানান্তরিত করা হয় তাঁকে। গতকাল রাতে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটায় লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম যোদ্ধার মৃত্যুতে রাজনৈতিক মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মৃত্যুর খবর পেয়েই হাসপাতালে ছুটে এসেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে সিরাজুল আলম খানের অনুরাগীরা।
কলেজে পড়ার সময়েই ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন সিরাজুল আলম খান। ১৯৬১ সালে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৩ সালে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। স্বাধীনতার লক্ষ্যে ছাত্রলীগের দুই সহযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদকে নিয়ে গড়ে তোলেন গোপন সংস্থা ‘নিউক্লিয়াস’। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সতীর্থদের সঙ্গে নিয়ে গড়ে তোলেন মুজিব বাহিনী। এই বাহিনীর প্রধান ছিলেন শেখ ফজলুল হক মনি, আর উপ-প্রধান ছিলেন সিরাজুল আলম খান। দেশ স্বাধীনের পরে ঘনিষ্ঠ সহযোগী তথা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে বিরোধের জেরে ছাত্রলীগ ছেড়ে নতুন রাজনৈতিক দল জাসদ প্রতিষ্ঠা করেন। বঙ্গবন্ধুর শিষ্য হিসেবে পরিচিত সিরাজুল আলম খান কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশের জাতির পিতার প্রধান রাজনৈতিক বিরোধী হয়ে ওঠেন। ১৯৬৫ সাল থেকেই লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান। তার পর থেকে তাঁকে জনসমক্ষে দেখা যায়নি। আড়ালে থেকে তৎপরতা চালাতেন বলে তিনি বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন।