নিজস্ব প্রতিনিধি: বঙ্গ বিজেপির(Bengal BJP) গোষ্ঠীকোন্দল আবারও নেমে এল রাজ্যের রাজপথে। এবার দলেরই সাংসদের বিরুদ্ধে ২৪’র লোকসভা নির্বাচনে(General Election 2024) প্রার্থী হওয়ার কথা ঘোষণা করে দিলেন বিজেপিরই এক বিধায়ক। আর সেটাও এমন একটা সময়ে যখন আর কিছুদিন পরেই উত্তরবঙ্গ(North Bengal) সফরে যেতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। স্বাভাবিক ভাবেই দলের বিক্ষুব্ধ বিধায়ককে ঘিরে এখন বঙ্গ বিজেপির শ্যাম রাখি না কুল রাখি দশা। যে বিধায়ক দলের সাংসদের বিরুদ্ধে ২৪’র ভোটে প্রার্থী হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং জেলার(Darjeeling District) কার্শিয়াং বিধানসভা কেন্দ্রের(Kurseong Assembly Seat) বিজেপি বিধায়ক(BJP MLA) বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা(Bishnu Prasad Sharma। তিনি যে বিজেপি সাংসদের(BJP MP) বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি আবার পাহাড়েরই বিজেপি সাংসদ। মানে দার্জিলিংয়ের(Darjeeling Constituency) বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা(Raju Bista)। আর এই ঘটনায় এখন চূড়ান্ত অস্বস্তি ছড়িয়ে পড়েছে বঙ্গ বিজেপির অন্দরে।
ঠিক কী বলেছেন বিষ্ণুপ্রসাদ? তিনি জানিয়েছেন, ‘আমি গোর্খা জনজাতি, গোর্খাল্যান্ড ইস্যু নিয়ে সরব হয়েছি। পাহাড়ে শিক্ষক নিয়োগের অনিয়ম নিয়ে CBI তদন্তের দাবি করেছি। এসব ব্যাপারে রাজু বিস্তা সহযোগিতা করেননি, বরং, বাধা দিয়েছেন। গোর্খাল্যান্ডের দাবি নিয়ে পাহাড়বাসীর ভাবাবেগে আঘাত করেছেন সাংসদ। এবার সংসদের শীতকালীন অধিবেশনেও বিষয়টি স্থান পায়নি। এজন্যই প্রতিজ্ঞা করেছি- দলের যে কর্মসূচিতে রাজু বিস্তা থাকবেন, সেখানে যোগ দেব না। তাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে সম্মান করলেও, সেই সভায় যাইনি। কারণ, সেখানে সাংসদ ছিলেন। এবার লোকসভা ভোটে দল দার্জিলিং কেন্দ্রে কোনও বহিরাগতকে দাঁড় করালে, আমি নিজেই তাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থী হব। এবার দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্র থেকে কোনও বহিরাগতকে প্রার্থী করা যাবে না। বিষয়টি দলের রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতাদের জানানো হয়েছে। তাই কোনও বহিরাগত প্রার্থী হলে, আমি নিজে এই কেন্দ্র থেকে ভোটে দাঁড়াব। দলও ত্যাগ করব না। দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়াই করব। তবে, শারীরিক অসুস্থতার কারণে বিধানসভায় দলীয় বিধায়কদের বিক্ষোভে যোগ দিতে পারিনি।’
ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, বিষ্ণুপ্রসাদ বহিরাগত বলে কার্যত রাজু বিস্তাকেই বোঝাতে চেয়েছেন। দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপি ২০০৯ সাল থেকে টানা জিতে আসছে। ২০০৯ সালে যশবন্ত সিং, ২০১৪ সালে সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া ও ২০১৯ সালে রাজু বিস্তা জিতেছেন এই কেন্দ্র থেকে। কিন্তু ৩জনই বহিরাগত। কোনও প্রয়োজনে বা আপদে বিপদে বিজেপির কর্মীরাই এদের সন্ধান পান না তো আমজন্তা তাঁদের নাগাল পাবেন একথা ভেবে নেওয়াটাই বাতুলতা। বিষ্ণুপ্রসাদ কার্যত দলের এই ক্ষোভকে, পাহাড়বাসীর এই ক্ষোভকেই খুঁচিয়ে জাগিয়ে দিয়েছেন। এমনিতেই তিনি এখন বঙ্গ বিজেপি থেকে বেশ দূরত্ব রেখেই চলেছেন। পঞ্চায়েত ভোটের আগে তিনি ময়দানে নামেননি। কয়েক মাস আগে শিলিগুড়িতে চা শ্রমিকদের নিয়ে আয়োজিত জনসভাতেও তিনি শামিল হননি। শাহি সভায় যোগ দেননি। বিধানসভা অধিবেশনেও যোগ দেননি। উল্টে পাহাড়ে বসেই বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দেগে চলেছেন। এখন দেখার বিষয় বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব বিষ্ণুপ্রসাদের দাবি মেনে নেয় নাকি তাঁকে আরও কোনঠাসা করে দেয়।