নিজস্ব প্রতিনিধি: যে যক্সা ব্যাখাই দিক না কেন, তাতে সন্তুষ্ট নন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী নিজে এখনও অনড় Push from Behind তত্ত্বে। আর তাই তিনি জানতে চান ঠিক কী হয়েছিল বৃহস্পতিবার রাতে। শুক্র সন্ধ্যায় কলকাতার পুলিশ(Kolkata Police) কমিশনার বিনীত গোয়েল(Vineet Goyal) মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কালিঘাটের বাড়িতে দেখা করেন। সূত্রের দাবি, সেখানে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই জোর দেন পেছন থেকে ধাক্কা লাগার বিষয়ে। আর তাই তিনি জানতে চান সেদিন ঠিক কী হয়েছিল। আর মুখ্যমন্ত্রীর সেই ইচ্ছার কথা জানতে পেরেই গঠিত হয়েছে ৩ সদস্যের বিশেষ তদন্ত কমিটি(Enquiry Committee)। তাতে গোয়েল ছাড়াও থাকছেন কলকাতা পুলিশের DC South এবং কালিঘাট থানার IC।
বৃহস্পতিবার রাতেই কলকাতার SSKM Hospital’ত তরফে সেখানকার অধিকর্তা মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় সবার আগে সংবাদমাধ্যমকে জানান, মুখ্যমন্ত্রী নিজেই জানিয়েছেন, তাঁর মনে হয়েছে কেউ তাঁকে পিছন থেকে জোরে ধাক্কা মেরেছিল, সেই ধাক্কা সামলাতে না পেরে তিনি পড়ে যান। তাতেই লাগে মাথায়, কপালে ও নাকে আঘাত। আর সেই বিবৃতির জেরে গতকাল সকাল থেকেই শুরু হয় তীব্র জল্পনা। প্রশ্ন ঘুরতে শুরু করে রাজ্য তথা দেশজুড়ে। প্রশ্ন একটাই, ‘ধাক্কা দিল কে?’ পরে বিতর্ক বাড়লে মণিময় গতকাল সকালে নতুন করে ফের বিবৃতি দিয়ে জানান, ‘আমার কথার ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। অনেক সময় মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার সময়ে এমন পিছন থেকে ধাক্কার অনুভূতি হতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী সম্ভবত সেই সময় বলতে চেয়েছিলেন যে পড়ে যাওয়ার সময়ে পিছন থেকে ধাক্কার অনুভূতি তাঁর হয়েছিল, কিন্তু তার মানে এই নয় যে কেউ তাঁকে ধাক্কা দিয়েছিল।’ পরে তৃণমূলের তরফেপ শুক্র দুপুরে কার্যত একই ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। পেশায় চিকিৎসক এবং রাজ্যের শিল্প তথা নারী-শিশু-পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা জানান, ‘বিষয়টা সিনকোপ। অনেক সময় হঠাৎ করে মূর্ছা যাওয়ার ঘটনা ঘটে। এর সঙ্গে কেউ ধাক্কা দেওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই। শরীরের মধ্যে একটা অস্থিরতা দেখা দেয়। মনে হতে পারে কেউ ধাক্কা দিচ্ছেন।’
কিন্তু সূত্রের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী নিজে মাথা ঘুরে যাওয়ার তত্ত্ব বিশ্বাস করছেন না। আর তাই তিনি নিজে ঘটনাটি গোয়েলকে তদন্ত করে দেখতে বলেছেন। আর তারপরে পরেই গঠিত হয়েছে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি যার নেতৃত্বে থাকছে গোয়েল নিজে। উল্লেখ্য, ২০২২ সালে জুলাই মাসে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে কড়া নিরাপত্তা পেরিয়ে প্রবেশের চেষ্টা করে এক যুবক। হাফিজুল মোল্লা নামে ওই যুবক কী ভাবে প্রবেশ করেছিল মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির মধ্যে, তা নিয়ে উঠছিল প্রশ্ন। সারারাত ঘাপটি মেরে থেকে পরে তাকে রড হাতে দেখতে পেয়ে গ্রেফতার করে পুলিশ। জেরায় হাফিজুল জানিয়েছিল, মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির পাঁচিল টপকে ভিতরে যায় সে। এরপরে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির নিরাপত্তা আরও আঁটসাঁট করা হয়। চিকিৎসকদের তরফে এখন মুখ্যমন্ত্রীকে যেহেতু বিশ্রামের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে তাই দলের বিধায়ক, নেতা-মন্ত্রীদের এখনই কালীঘাটে ভিড় না করার অনুরোধ জানিয়েছে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। একই সঙ্গে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার দুর্ঘটনার সময় মুখ্যমন্ত্রীর জেড-প্লাস ক্যাটিগরির দেহরক্ষীরা কোথায় ছিলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আবার এটাও শোনা যাচ্ছে, মণিময় পুলিশের কাছে জানিয়েছেন, আচমকা রক্তচাপ কমে যাওয়ায় কিছুক্ষণের জন্য ‘ব্ল্যাকআউট’ হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর। মাথা ঘুরে পড়েই তিনি জখম হন।