নিজস্ব প্রতিনিধিঃ সদ্য মাথার ওপর থেকে সরেছে বাবার ছায়া। গত বুধবারের যে ভয়ংকর কপ্টার দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে দেশের প্রথম এবং একমাত্র চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়াত এবং তাঁর স্ত্রী মধুলিকা রাওয়াতের সেই কপ্টারের চালক ছিলেন উইং কম্যান্ডার পৃথ্বী সিং চৌহান। এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তিনিও। হাসাপাতাল সূত্রে খবর, এই দুর্ঘটনায় মৃতদের শরীর এতটাই পুড়ে গিয়েছে যে ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া অন্য কোনও উপায়েই তাঁদের শনাক্ত করা সম্ভব নয়। ফলত চিহ্নিত হওয়ার পরে শনিবার পৃথ্বী সিং চৌহানের দেহ যখন তাঁর বাড়ি আগ্রায় পৌঁছায় তখন বাবার মুখটাও শেষবারের জন্য দেখতে পায়নি তাঁর ১২ বছরের মেয়ে আরাধ্যা এবং ৭ বছরের ছেলে অভিরাজ। কিন্তু বাবাকে চিরতরে হারানোর শোকের মধ্যেই তাঁর মৃতদেহের সামনে দাঁড়িয়ে কঠিন প্রতিজ্ঞা মেয়ের, ‘আমিও বাবার মতোই ভারতীয় বায়ুসেনায় যোগ দিতে চাই।’
শনিবার উইং কম্যান্ডার পৃথ্বী সিং চৌহানের মৃতদেহ তাঁর আগ্রার বাড়িতে পৌঁছানোর পরেই দ্রুত সেটি সৎকারের ব্যবস্থা করা হয় তাজগঞ্জের শ্মশানে। ভাই অভিরাজের সঙ্গে পৃথ্বী সিংয়ের মেয়ে আরাধ্যাও বাবার মুখাগ্নি করে। গোটা পরিবারের উপস্থিতিতেই এদিন শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় উইং কম্যান্ডার পৃথ্বী সিং চৌহানের। ১২ বছরের আরাধ্যা বর্তমানে সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী। সামনে পড়ে রয়েছে গোটা একটা জীবন। বাকি বহু কঠিন পথ চলা। কীভাবে এই দুই শিশু বাবার আশ্রয় ছাড়া বড় হবে সেটাই এখন সবথেকে বড়ো চিন্তা গোটা পরিবারের কাছে। তার মধ্যেই ছোট্ট আরাধ্যা জানাল, সে বাবার দেখানো রাস্তাতেই চলতে চায়। বড়ো হয় বাবার মতোই যোগ দিতে চায় ভারতীয় বায়ুসেনায়। তাঁর কথায়, ‘বাবা সবসময় বলত পড়াশোনায় বেশী মন দাও নম্বরের ওপর মন না দিয়ে। তুমি যদি মন দিয়ে পড়াশোনা কর তাহলে তোমার নম্বর এমতিতেই বাড়বে।’ বাবার এই উপদেশই আগামী দিনে তার পথ চলার একমাত্র অনুপ্রেরণা। আর বাবার দেখানো সেই পথে হেঁটে দেশের সেবায় নিয়োজিত হওয়াই এখন একমাত্র লক্ষ্য ছোট্ট আরাধ্যার।