নিজস্ব প্রতিনিধি: একুশের বিধানসভা নির্বাচনে হেরে বিন্দুমাত্রও লজ্জা লাগেনি মোদি-শাহ-নাড্ডাদের। কলকাতার পুরনির্বাচনে দুরমুশ হয়ে এখন তাঁদের খোয়াব হয়েছে আসানসোল আর শিলিগুড়ি পুরনিগম দখল করার। তাই বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এবার কড়া বার্তা দিয়েছে বঙ্গ বিজেপির বর্তমান সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষকে। যদিও সেই লক্ষ্য ছুঁতে না পারলে দুই নেতা কোন শাস্তির মুখে পড়বেন তা অবশ্য জানা যায়নি। কিন্তু ঘটনা এটাই রোগ নির্ধারণ না করেই যেভাবে বিজেপি নেতৃত্ব দাওয়াত বাতলে দিচ্ছেন তাতে করে বঙ্গ বিজেপি আগামী দিনে আদৌ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কিনা তা নিয়েই এবার প্রশ্ন উঠে গিয়েছে দলেরই অন্দরে।
রাজ্য নির্বাচণ কমিশন কলকাতা হাইকোর্টে হলফনামা দিয়ে জানিয়েছে রাজ্যের বকেয়া পুরনির্বাচনগুলি তাঁরা আগামী জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে সেরে ফেলতে চান। আগামী ২২ জানুয়ারি ও ২৭ ফেব্রুয়ারি সেই নির্বাচন হতে চলেছে। ২২ তারিখ নির্বাচন হবে পুরনিগমগুলিতে। এই তালিকায় থাকছে বিধাননগর, হাওড়া, চন্দননগর, আসানসোল ও শিলিগুড়ি। বাকি পুরসভায় ভোট হবে ২৭ ফেব্রুয়ারি। এখন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আবদার জুড়েছেন, যেনতেন ভাবে আসানসোল ও শিলিগুড়িতে দলকে জিততেই হবে। ওই দুই পুরনিগম দখল করতেই হবে। এটা ঘটনা যে বিজেপি ২০১৪ ও ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে আসানসোল থেকে জয়ী হয়েছে। তবে একুশের বিধানসভা নির্বাচনে সেই আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের ৭টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৫টিতেই হারতে হয়েছে তাঁদের। আবার ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন ও ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে শিলিগুড়ি থেকে জয়ের মুখ দেখেছে বিজেপি। সেই সূত্রেই এই দুই পুরনিগমকে পাখির চোখ করেছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কিন্তু এটাও ঘটনা যে একুশের বিধানসভা নির্বাচন পরবর্তী ৭ মাসে বাংলার রাজনীতি আমূল বদলে গিয়েছে। বিরোধী পরিসরে আবারও ফিরে আসছে বামেরা। সেখানে বিজেপি ক্রমশ প্রান্তিক শক্তিতে রূপান্তরিত হতে চলেছে।
এই অবস্থায় এই দুই পুরনিগমে বিজেপি জিতবে এহেন আশা বঙ্গ বিজেপির কোনও নেতাকর্মীই করেন না। বরঞ্চ সম্ভাবনা বাড়ছে এই দুই পুরনিগমের বিরোধী ভোট ভাগাভাগি হয়ে তৃণমূলের জয়ের রাস্তাই প্রশস্ত হবে। কিন্তু এই যুক্তি মানতে পারছেন না বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তাঁরা এটা বুঝতে পারছেন না যে বাংলার দখল নেওয়ার জন্য তাঁরা যেভাবে হামলাবাজি চালিয়ে গিয়েছেন বাংলার কৃষ্টি, সভ্যতা, সংস্কৃতির ওপর – যেভাবে গুলি করে মারার হুমকি অকাতরে বিলিয়ে গিয়েছেন, তা দেখে বাঙালি আর তাঁদের ধারে কাছেও ঘেঁষতে চাইছে না। কেননা বিজেপির উগ্রবাদ বাঙালির উদার মনোভাবের সঙ্গে খাপ খায় না। তাই অতি বড় মমতা বা তৃণমূল বিরোধীরাও বিজেপি থেকে মুখ ঘোরাতে শুরু করে দিয়েছেন। আর সেই মুখ ঘোরানোর রেজাল্টই কলকাতার পুরনির্বাচনে ধরা পড়েছে। বিজেপিকে পিছনে ফেলে উঠে এসেছে বামেরা। আসানসোল আর শিলিগুড়িতেও এই ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা যথেষ্টই। শিলিগুড়িতে তো বামেরা রীতিমত জেতার মতো অবস্থাতেও রয়েছে। এই অবস্থায় দিলীপ-সুকান্তের ওপর বাড়তি চাপ বাড়ালেও কাজের কাজ কিছু হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে বঙ্গ বিজেপির অন্দরেই।