নিজস্ব প্রতিনিধি: একটা রেললাইন। আর তার পাশে একে একে গড়ে উঠেছে ৮টি পুরসভা ও ১টি পুরনিগম এলাকা। আছে ৩০-৪০টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাও। সব মিলিয়ে বসবাস প্রায় ১০ লক্ষ মানুষের। অথচ এই সুবিশাল অংশের সঙ্গে রাজ্যের রাজধানী কলকাতার সড়ক পথে যোগাযোগ রাখার কোনও বাস রুটই নেই। যেটুকুও বা আগে ছিল, বছর ৪-৫ আগেই তা গুটিয়ে গিয়েছে। এলাকার তাই একমাত্র লাইফলাইন ট্রেন। আরও বলা ভাল লোকাল ট্রেন। কিন্তু কোভিডকালে সেই লোকাল ট্রেন বন্ধ হতেই কার্যত গোটা এলাকার অর্থনীতিতে বড়সড় ধাক্কা নেমে এসেছে বারে বারে। কোভিডের প্রথম ঢেউ হোক কী দ্বিতীয় ঢেউ, যখনই লোকাল ট্রেন বন্ধ হয়েছে তখনই তা ধাক্কা দিয়েছে হুগলি শিল্পাঞ্চলের জনজীবনে। এবার আসছে কোভিডের তৃতীয় ঢেউ। সঙ্গে দোসর ওমিক্রন। সেই প্রেক্ষাপটেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানুয়ারি মাস থেকেই লোকাল ট্রেন চালানোর ওপর কিছু বিধিনিষেধ আরোপের কথা বলেছেন। আর এখানেই ফের ভয় নেমে এসেছে হুগলি শিল্পাঞ্চলের বাসিন্দাদের মধ্যে। তাঁদের এখন একটাই আর্তি, ট্রেন কম চলুক ক্ষতি নেই, ব্যান্ডেল লোকাল যেন বন্ধ না হয়।
পূর্ব রেলের হাওড়া-বর্ধমান মেন লাইনের উত্তরপাড়া থেকে ব্যান্ডেল পর্যন্ত পর পর রয়েছে ৮টি পুরসভা ও ১টি পুরনিগম। এগুলি হল – উত্তরপাড়া-কোতরং, কোন্নগর, রিষড়া, শ্রীরামপুর, চাঁপদানি, বৈদ্যবাটি, ভদ্রেশ্বর, চন্দনগর ও হুগলি-চুঁচুড়া। এই ৯টি পুরসংস্থা এলাকায় খুব কম করেও ৮ লক্ষ মানুষের বসবাস। আবার হাওড়া-ব্যান্ডেল মেন লাইনের আশেপাশে থাকা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাগুলির বাসিন্দাদের সংখ্যা খুব কম করেও ২ লক্ষ। এই সব এলাকার বেশির ভাগ মানুষকেই নিত্যদিন কলকাতায় আসতে হয় কর্মসূত্রে। পূর্ব রেলের হিসাবই বলছে ব্যান্ডেল ও উত্তরপাড়ার মধ্যেকার স্টেশনগুলি থেকে নিত্যদিন হাওড়ার দিকে প্রায় ৫ লক্ষ মানুষ যাতায়াত করেন। অথচ ওই এলাকার সঙ্গে কলকাতার সরাসরি দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থা বলে কার্যত কিছুই নেই। লোকাল ট্রেনই সেখানকার লাইফলাইন। কোভিডের প্রথম ঢেউ এর সময় থেকেই এই সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে। দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, নদিয়া, দুই মেদিনীপুর প্রভৃতি জেলা থেকেও নিত্যদিন কলকাতায় অনেক মানুষ আসেন কর্মসূত্রে। কিন্তু এদের বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থাও রয়েছে। কলকাতার সঙ্গে সরাসরি বাস যোগাযোগ রয়েছে। হুগলি শিল্পাঞ্চলের ক্ষেত্রে তা নেই।
কোভিডের প্রথম ঢেউয়ের সময়ে লোকাল ট্রেন না চলার কারনে এই এলাকার মানুষের যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল তা অনেকেরই মনে আছে। কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়েও সেই একই ক্ষোভ দেখা গিয়েছিল। এবার যখন তৃতীয় ঢেউ আসছে তখন মুখ্যমন্ত্রী কোভিড ঠেকাতে লোকাল ট্রেন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা যায় কিনা তা খতিয়ে দেখতে বলছেন। এখনই যাতে ট্রেন কমানো না হয় তিনি সেই বিষয়েও জোর দিয়েছেন। যদিও জানিয়ে দিয়েছেন গঙ্গাসাগর মেলা শেষ হলেই লোকাল ট্রেন নিয়ন্ত্রণ করা হবে। আর এখানেই ভয় হুগলি শিল্পাঞ্চলের মানুষদের। তাই তাঁদের একমাত্র দাবি, লোকাল ট্রেন নিয়ন্ত্রণ করা হোক, কিন্তু ব্যান্ডেল লোকাল যেন চালানো হয়। নাহলে আবারও লক্ষাধিক মানুষের ঘরসংসারে নামবে আঁধার।