নিজস্ব প্রতিনিধি: একুশের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের শ্লোগান ছিল, ‘বাংলা নিজের মেয়েকে চায়।’ সেই মেয়ে যে তৃণমূলসুপ্রিমো তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেটা আর বলে দেওয়ার অপেক্ষা রাখে না। তবে তৃণমূল তথা বাংলার অগ্নিকন্যার লক্ষ্য যে বাংলার প্রতিটি মহিলাকে স্বনির্ভর করে তোলা সেটা স্পষ্ট হয়ে যায় বিধানসভা নির্বাচনের আগেই ঘোষিত ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পের মাধ্যমে। আর নির্বাচন মিটতেই বাংলাজুড়ে জেলায় জেলায় দুয়ারে সরকার কর্মসূচীর মাধ্যমে শুরু হয়ে যায় বাংলায় মহিলাদের এই প্রকল্পের মাধ্যমে সরাসরি আর্থিক সহায়তা দেওয়ার পালা। বাংলার এই সরকারি প্রকল্প দেশজুড়ে তো বটেই বিশ্বজুড়েই প্রশংসিত হয়েছে। এবার সেই প্রকল্পেই একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম চালু করে দিল রাজ্য সরকার। এবার থেকে এই প্রকল্পে আবেদন করতে গেলে আবেদনকারীর নিজের নামে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।
রাজ্য সরকারের পরিসংখ্যান বলছে, বাংলার প্রায় ১ কোটি ৬০ লক্ষ মহিলা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের আওতায় এসেছেন। প্রতি মাসের ৩ তারিখের মধ্যে আবেদনকারী তফসিলি জাতি ও উপজাতি মহিলাদের কাছে ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সরাসরি চলে যায় এক হাজার টাকা। অন্যান্যরা পান ৫০০ টাকা করে। তবে এয়াব্র থেকে সেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট কেবলমাত্র আবেদনকারীর নামেই থাকতে হবে, এমনই নির্দেশ দিচ্ছে নবান্ন। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে আবার রাজ্যজুড়ে ‘দুয়ারে সরকার’ ও ‘পাড়ায় সমাধান’ কর্মসূচি শুরু হতে চলেছে রাজ্যজুড়ে। সেখানেই আবারও জমা নেওয়া হবে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের আবেদন। সেই সময় আবেদনকারীদের কাছ থেকে সিঙ্গল নেম অ্যাকাউন্ট চাওয়া হবে। অর্থাৎ আবেদনকারীর নিজের নামে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকা বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে জয়েন্ট অ্যাকাউন্টকে গ্রাহ্য করা হবে না। এবার আর জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট থাকলেও আবেদন করা যাবে না। শুধুমাত্র সিঙ্গল অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে। তবেই আবেদন করা যাবে।
নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন যারা লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের আওতায় এসেছেন তাঁদের অনেকেরই নিজেদের নামে কোনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ছিল না। তাঁরা এই প্রকল্পের সুবিধা নেওয়ার জন্য জয়েন্ট অ্যাকাউন্টের তথ্য দিয়েছিলেন। দেখা যায় সেই সব অ্যাকাউন্ট আবেদনকারীর সঙ্গে তাঁর স্বামী, বা বাবা, পুত্র বা অন্য কোনও আত্মীয়ের সঙ্গে রয়েছে। এর ফলে একাধিক সমস্যা তৈরি হয়। সেই জটিলতা কাটাতেই এখন নতুন নিয়ম লাগু করা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে এমনটাও দেখা যাচ্ছে, জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট থাকায় মূল আবেদনকারী টাকা তোলার আগেই পরিবারের অন্য কেউ সেই টাকা তুলে নিচ্ছে। ফলে যে লক্ষ্যে এই প্রকল্প চালু করা হয়েছে সেই লক্ষ্য অপূরণ থেকে যাচ্ছে। তাই আবেদনকারীর নামে যেমন সিঙ্গল ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকা এই প্রকল্পের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে তেমনি ওই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টকে আধার সংযুক্তিকরণের ওপরেও বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
