এই মুহূর্তে




মাতৃগর্ভে নয়, পিতার বীর্য ভরা পাত্র থেকে জন্মেছিলেন মহাভারতের অস্ত্র গুরু

পৃথ্বীজিৎ চট্টোপাধ্যায় : হিন্দু পৌরাণিক কাহিনিতে নানা রহস্যময় জন্মগাঁথা বর্তমান। সেই সমস্ত কাহিনিতে বহু খ্যাতনামা চরিত্র রয়েছেন, যাঁরা গর্ভে জন্মগ্রহণ করেননি। তাই তাঁদের অযোনিজ বা গর্ভবিহীন জন্মগ্রহণকারী বলা হয়। আজকাল আধুনিক বিজ্ঞানের তত্ত্বানুসারে মানব শুক্রাণুকে কয়েক দশক ধরে সংরক্ষণ করা যেতে পারে, যা পরবর্তীকালে সন্তান উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা যায়। তবে জানেন কী, প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ অনুসারে মহামুনি ভরদ্বাজের সংরক্ষিত বীর্যের পাত্র থেকে জন্ম হয়েছিল এক প্রতাপশালী শিশুর ?

জনশ্রুতি মতে, মহাভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চরিত্র ও অদ্বিতীয় অস্ত্রগুরু দ্রোণাচার্যের জন্মরহস্য আধ্যাত্মিকতা এবং প্রাচীন জ্ঞানের এক অনন্য সংমিশ্রণ। তিনি জন্মেছিলেন এমন এক অপূর্ব পদ্ধতিতে, যা সাধারণ মানবজন্মের ধারা বহির্ভূত। এই রহস্যময় জন্মকাহিনীই তাঁকে করে তুলেছিল আরও অলৌকিক।

পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, দ্রোণ জন্মগ্রহণ করেছিলেন মহর্ষি ভরদ্বাজের বংশে—যিনি সপ্তর্ষিদের একজন এবং প্রাচীন ভারতের মহান তপস্বী,  ও দার্শনিক ছিলেন। ভরদ্বাজ ছিলেন বৃহস্পতির পুত্র ও কুবেরের মাতামহ। তিনি আয়ুর্বেদ, ব্যাকরণ, সামরিক-বিদ্যা ও অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎজ্ঞান—এই সর্ব ক্ষেত্রেই পারদর্শী এক অসামান্য ঋষি ছিলেন। রামায়ণ থেকে মহাভারত—এই দুটি যুগেই তাঁর প্রভাব ছিল অত্যন্ত সুস্পষ্ট।

ঘৃতাচী অপ্সরা ও এক অলৌকিক জন্ম

পৌরাণিক ইতিহাস থেকে জানতে পৰ যায়, একদা মহর্ষি ভরদ্বাজ হতির্ধান অঞ্চলে গঙ্গাস্নানে গিয়েছিলেন। ঠিক সেই সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন এক অসামান্যা সুন্দরী অপ্সরা ঘৃতাচী, যিনি কশ্যপ ঋষি ও প্রধার কন্যা হিসেবে পরিচিত। পতিতপাবনী গঙ্গার প্রবাহে তাঁর বক্ষ ও কোটি আচ্ছাদন সরে গেলে নগ্ন রূপে তাঁকে দেখে মহর্ষির মন অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়ে। সেই আকস্মিক উত্তেজনা থেকে তাঁর বীর্যপাত ঘটে যায়।

ভরদ্বাজ তাঁর বীর্যের অসামান্য শক্তি সম্পর্কে অবগত ছিলেন আর তাই তিনি সেটিকে একটি কলসে সংরক্ষণ করে নেন। কিছু সময় পর কলসের সংরক্ষিত বীর্য থেকেই এক বিস্ময়কর শিশু জন্ম নেয়—যাঁর নাম হয় দ্রোণ। ‘দ্রোণ’ শব্দের অর্থই হলো ‘কলস’, আর সেই কলস-জাত বলেই তাঁর এমন নামকরণ হয়। এই অলৌকিক প্রক্রিয়ার কারণে দ্রোণাচার্যকে অপ্রাকৃত জন্মের অধিকারী বলা হয় এবং ঘৃতাচীকে তাঁর মাতৃরূপে সম্মান করা হয়।

শৈশব, শিক্ষা ও দ্রুপদের সঙ্গে বন্ধুত্ব

দ্রোণের জন্মের পর ভরদ্বাজ মুনি তাঁকে নিয়ে আশ্রমে ফিরে আসেন এবং কঠোর তপস্যা ও বিদ্যার্জনের পরিবেশে তাঁর লালন-পালন করেন। এই  একই সময়ে পেষ্ট রাজ্যের রাজপুত্র দ্রুপদও ভরদ্বাজের আশ্রমে শিক্ষাগ্রহণে লিপ্ত ছিলেন। ফলত দু’জনের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে এই সম্পর্কই মহাভারতে এক গুরুত্বপূর্ণ নাটকীয় মোড় সৃষ্টি করে।

দ্রোণ : অস্ত্রগুরু, কৌশলবিদ ও মহাযোদ্ধা

যৌবনে পৌঁছে দ্রোণ বেদ, বেদাঙ্গ, যুদ্ধকৌশল, ব্যুহরচনা এবং দিব্যাস্ত্রে পারদর্শী হয়ে ওঠেন। তাঁর প্রতিভা দেখে তাঁকে রাজা ধৃতরাষ্ট্রের রাজসভায় রাজঅস্ত্রগুরু হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। তিনি কুরু-বংশের সব শিশু—পাণ্ডব ও কৌরব—উভয়েরই শিক্ষক হন। তাঁর শিক্ষাদানে অর্জুন অসামান্য ধনুর্ধর হয়ে ওঠেন।

অস্ত্রসেনাপতি ও তাঁর মহাভারতীয় ভূমিকা

কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে দ্রোণাচার্য ছিলেন কৌরব সেনার দ্বিতীয় সেনাপতি। তিনি ১১তম থেকে ১৫তম দিন পর্যন্ত যুদ্ধ পরিচালনা করেন এবং তাঁর ব্যুহ, রণকৌশল ও ব্রহ্মাস্ত্রবিদ্যা যুদ্ধক্ষেত্রে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।

অতএব নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, দ্রোণাচার্য শুধুমাত্র এক মহাযোদ্ধা নন; তিনি ছিলেন রহস্যময় জন্মকাহিনি ও শিক্ষার মহিমায় পরিপূর্ণ এক কিংবদন্তী। কলসজাত এই ঋষিপুত্রের জন্মকথা আজও ভারতীয় মহাকাব্যের অন্যতম আকর্ষণ এবং প্রাচীন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক।

Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

শখ করে KTM-এর নাম রেখেছিলেন ‘লায়লা’, সেই বাইক দুর্ঘটনাতেই বলি তরুণ ব্লগার

শ্বেতশুভ্র বরফে গড়ে উঠল রঙিন ঘর, ফিনল্যান্ডে ভারতীয় পরিবারের কীর্তিতে উচ্ছ্বসিত সোশ্যাল মিডিয়া

চলতি বছরে অক্সফোর্ড ডিকশনারির সেরা শব্দ কি জানেন?

সঞ্চার সাথী অ্যাপ বাধ্যতামূলক নয়, স্পষ্ট জানালেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া

দিটওয়ারের চোখ রাঙানি অব্যাহত, চেন্নাইতে জারি রেড অ্যালার্ট

অবশেষে জয়! জিআই ট্যাগ পেল দার্জিলিংয়ের কমলা

Advertisement
এক ঝলকে
Advertisement

জেলা ভিত্তিক সংবাদ