নিজস্ব প্রতিনিধি: সর্ষের ভেতর ভূত! অন্তত এই আশঙ্কাই ছড়িয়ে পড়েছে রাজ্য প্রশাসনের অন্দরে। গত রবিবার সন্ধ্যায় মাও (Maoist) যোগ সন্দেহে ধরা পড়েছে ৩ জন। তাঁদের মধ্যে ১ জন স্পেশাল হোমগার্ড ও ২ জন এসপিও। এই ঘটনাতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে পুলিশ মহলে। তবে কি চর ঢুকেছে রক্ষী সেজেই? না কি পুলিশে (Police) থেকেই মাও যোগসাজোগ!
রবিবার সন্ধ্যা ৭ টা নাগাদ গোপনসূত্রে খবর পেয়ে অভিযান চালায় পুলিশ। মাও পোস্টার সমেত হাতেনাতে ধরা পড়ে ১ জন স্পেশাল হোমগার্ড ও ২ জন এসপিও। তাঁদের কাছ থেকে মাওবাদী ও পিএলজিএ পোস্টার উদ্ধার করা হয়েছে। উল্লেখ্য, মোট ৩ টি পোস্টার উদ্ধার করা হয়েছে। ধৃতদের নাম তারু পাতর (৩৩), সনাতন মাহাতো (৪৩) ও শিবরাজ মানা (২৮) ওরফে কালু। লালগড় থেকে আমগড় যাওয়ার রাস্তায় ১ টি কালভার্টের ওপর বসে ছিলেন ওই ৩ জন। তাঁদের আমডাঙা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পোস্টার সহ হাতেনাতে ধরে লালগড় থানার পুলিশ। যথাক্রমে শিবরাজ ও সনাতনের বাড়ি লালগড়ের ধরমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কৃষ্ণনগর গ্রাম এবং পূর্ণপানির বনিশোল গ্রামে। অপর ধৃত তারুর বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের গুড়গুড়িপালের ধেড়ুয়ার ছেঁড়াবনি গ্রামে।
ধৃত শিবরাজ পুলিশে চাকরি পেয়েছিলেন জঙ্গলমহলে উত্তাল সময় মাওবাদী আমলে। স্বজনহারা পরিবারের পক্ষ থেকে চাকরি পেয়েছিলেন তিনি। বাকি ২ জন ধৃত পুলিশের ইনফর্মার! তাঁদের হাতের পোষ্টারে (Poster) লেখা ছিল, ‘পুলিশের দালাল টিএমসি নেতারা হুঁশিয়ার’। এরপরেই লেখা সিপিআই (মাওবাদী)। বাকি দুটি পোস্টার পিএলজিএ নামাঙ্কিত। তাতে লেখা, জঙ্গলমহলের আদিবাসী মূলনিবাসী মানুষের অধিকার রক্ষা করার জন্য যুবসমাজ চলমান জনযুদ্ধে সামিল হন। অন্য পোস্টারে লেখা, সৌরভ রায় সহ বালি মাফিয়াদের গণআদালতে বিচার হবে।
জানা গিয়েছে, ধৃতদের মধ্যে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করা হলেও তাঁদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হয়নি। ধৃতদের সোমবার ঝাড়গ্রাম আদালতে (Court) তোলা হয়। এসিজেএম বিচারক সুপ্তি সরকারের এজলাসে তোলা হলে পুলিশ তাঁদের ১৪ দিনের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানায় কিন্তু বিচারক ৩ দিনের আবেদন মঞ্জুর করেন। তাঁদের শুনানি হবে ফের ৫ মে। পরবর্তী শুনানিতে কেস ডায়েরি-ও তলব করেছেন বিচারক। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এর পেছনে আরও কে বা কারা জড়িত তা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
তবে পুলিশকর্মী ও ২ খোঁচড়ের মাও যোগ ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে পুলিশমহলে। আশঙ্কা, এরকম আরও কেউ নেই তো? পুলিশের মধ্যেই কি মিশে রয়েছে মাওবাদীরা? সেই প্রশ্নেই উদ্বিগ্ন রাজ্যের প্রশাসন। উল্লেখ্য, মাওবাদীদের মূলস্রোতে ফিরে আসার বার্তা দিয়ে বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতে অনেক মাওবাদী আত্মসমর্পণ করে চাকরি পেয়েছে পুলিশে। কর্মরত থানা, জেলা পুলিশ সুপারের দফতর, পুলিশ লাইনে। সর্বত্র যাতায়াত অবাধ! নিজেদের প্রাক্তন মাওবাদী দাবি করে অনেকে এখনও চাকরি চাইছেন। তাই আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। আবার পুলিশমহলে নতুন করে মাও খোঁচড় ঢুকিয়ে দেওয়ার আশঙ্কাও থাকছে। এখন পুলিশের ইনফর্মার কে আর কেই বা মাওবাদী ইনফর্মার সেই ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে! তবে পুলিশের দাবি, তাঁরা সতর্ক। নিয়মিত অভিযান চলছে। মাওবাদীরা হারানো ঘাঁটি উদ্ধার করতে চাইলেও তা সম্ভব নয়।