এই মুহূর্তে

WEB Ad Valentine 3

WEB Ad_Valentine

হলদিয়াকাণ্ডে শাসকদলের কড়া বার্তায় স্পষ্ট, শিল্পে দাদাগিরি নয়

নিজস্ব প্রতিনিধি: খুব ছোট, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত অনেক সময় সরকারের দিক থেকে অনেক বড় একটা বার্তা সমাজের সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেয়। সম্প্রতি হলদিয়ায় একটি প্রতিষ্ঠিত কারখানায় অশান্তির জেরে আইএনটিটিইউসি-র দুই নেতাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। রাজ্যের শাসক দলেরই দুই শ্রমিক সংগঠনের নেতাকে এই ভাবে বহিষ্কার করার ঘটনা বা উদাহরণ খুব বেশি আমাদের রাজ্যে এর আগে দেখা যায়নি।

বাম জামানাতে শ্রমিক আন্দোলন, শ্রমিক নেতাদের অনেক সময় হঠকারী সিদ্ধান্ত এই রাজ্যের ছোট, মাঝারি এমন কি বৃহৎ শিল্পের প্রভূত ক্ষতি করেছে। শ্রমিক আন্দোলনের জেরে পশ্চিমবঙ্গে কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে এমন অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জামানায় রাজ্যের সর্বনাশা শ্রমিক আন্দোলন ও বনধ সংস্কৃতির বিরুদ্ধে শিল্প মহলের কাছে একটা অন্য রকম বার্তা দেওয়ার চেষ্টা হলেও তাতে আখেরে খুব বেশি লাভ হয়নি। বরং পশ্চিমবঙ্গ থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকাটাই বেশি পছন্দ করেছেন শিল্প মহলের একটি বড় অংশ। দলের মধ্যে এবং প্রশাসনিক কাজকর্মেও মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বুদ্ধবাবু একটি শিল্প বান্ধব পরিবেশ তৈরির কথা নানা ভাবে বলেছেন। পরিবেশ, পরিস্থিতি যে বদলাচ্ছে, তার বার্তাও তিনি বিভিন্ন শিল্প সম্মেলনে রাজ্য তথা দেশের তাবড় শিল্পপতিদের কাছে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু যে কোনও কারণেই হোক, রাজ্যে নতুন শিল্প বিনিয়োগের চিত্রটা খুব বেশি বদলায়নি। হলদিয়ার ঘটনাটি রাজ্যের বর্তমান শাসক দলের পক্ষ থেকে সঠিক সময়েই একটি ‘শিল্প বন্ধু’ বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে শিল্প মহলের অনেকেই মনে করছেন। খোদ রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক দলের নির্দেশে হলদিয়ায় গিয়ে সব পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে দলের এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছেন। ঠিক শ্রমিকদের আন্দোলনের জেরে কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অভিযোগ আসার পরেই আইএনটিটিইউসি- শীর্ষ নেতৃত্ব এই সিদ্ধান্ত নেয়। ঠিকা শ্রমিকদের আন্দোলনের জেরে এবং তাঁরা বাঁধা দেওয়ায় কাজে যোগ দিতে আসা অন্য শ্রমিক, কর্মচারীরাও কারখানায় ঢুকতে পারছিলেন না বলে অভিযোগ উঠেছিল। সব মিলিয়ে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই শাসক দলের শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে কারখানাটিতে উৎপাদনও শুরু হয়। কারখানা কর্তৃপক্ষ শাসক দলের এই পদক্ষেপে বিপুল ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে স্বস্তির শ্বাস ফেলেছেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আর্থ-সামাজিক নানা উন্নয়নের পাশাপশি শিল্প যে এখন তাঁর পাখির চোখ তার অনেকটাই এই ঘটনা থেকে স্পষ্ট হয়ে যায়। একই সঙ্গে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির কাছেও বর্তমান শাসক দল একটা অন্য বার্তা পৌঁছে দিতে পেরেছে বলেই বিভিন্ন মহল মনে করছে।

টাটাদের ন্যানো গাড়ির কারখানার জন্য সিঙ্গুরে তৎকালীন বাম সরকারের জমি অধিগ্রহণ নীতি ও সব শেষে তার অন্তিম পরিণতি দেশের শিল্পায়নের ইতিহাসে চিরকাল জায়গা করে নিয়েছে। একই ভাবে জায়গা করে নিয়েছে সিঙ্গুরে কৃষি জমি অধিগ্রহণকে ঘিরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আন্দোলন ও সরকারের পিছু হাঁটার ইতিহাস। ন্যানো কারখানা রাজ্যে হলে আখেরে এই পশ্চিমবঙ্গের নিশ্চয় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কিছু লাভ হতো। কিন্তু তৎকালীন বাম সরকারের সিঙ্গুরে টাটাদের নিয়ে জমি নীতি সরকারের বিপক্ষেই গিয়েছে। নৈতিক জয় হয়েছে মমতার। দায়িত্বে আসার পর বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী নানাভাবে তাঁর শিল্পবন্ধুর ভাবমূর্তি তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। শিল্পে বিশেষ করে ছোটো শিল্পে বিনিয়োগ টেনে আনা ও কর্মসংস্থানের উপর তিনি জোর দিয়েছেন। ‘গ্লোবাল বিজনেস সামিট’- র আসর বসেছে এই রাজ্যে। বেশ কিছু বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি আসছে। কিছু বাস্তবায়িত হচ্ছে, কিছু হয়তো হচ্ছে না। বিরোধীরা তাই নিয়ে অনেক সময় সমালোচনা করছেন। এমনকী খোদ রাজ্যপালও রাজ্যে কতো বিনিয়োগ এসেছে তার তথ্য রাজ্য সরকারের কাছে বিভিন্ন সময়ে চেয়ে পাঠিয়েছেন। মুখ টিপে হেসেছেন হয়তো এই রাজ্য সরকারের সমালোচকরা। কিন্তু শিল্প বিশেজ্ঞরা বলছেন, এই চেষ্টাটাই আসলে শিল্পায়নের সঠিক পথ। ঠিক যেমন শিল্পবন্ধু সরকারের পরিচয় দিতে হলদিয়ার ঘটনায় রাজ্যের শাসক দলের দ্বিধাহীন পদক্ষেপ। ভোট রাজনীতির কথা না ভেবে, একেবারে শিল্পের পাশে দাঁড়ানো। যা সব সময় বিনিয়োগকারীরা চেয়ে থাকেন।

শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া নিশ্চয় থাকবে। কর্তৃপক্ষের কাছে দবি সনদ পেশ করার পাশাপাশি আলাপ আলোচনাও চলতে পারে। কিন্তু কারখানার দরজায় তালা লাগিয়ে উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া কোনও কারখানার মালিকই পছন্দ করেন না। কারণ ব্যাঙ্ক বা অন্য কোনও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে বা নিজের পুঁজি ঢেলে তিনি একটি প্রকল্প গড়েছেন। নিজের মুনাফার সঙ্গে তিনি বা সংশ্লিষ্ট সংস্থা কর্তৃপক্ষ আরও দশটা মানুষের মুখে দুটো ভাত ডালের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তাই তিনি চাইবেন সবার আগে নিজের সংস্থাকে বাঁচাতে। এ ক্ষেত্রে শ্রমিক শোষণ বা অন্য কোনও তাত্ত্বিক প্রসঙ্গকে বাদ দিয়ে, এটুকু খুব সহজেই বলা যায় শিল্প বাঁচলে তার সঙ্গে জড়িত আরও পাঁচটা মানুষও বাঁচে। শিল্পের চাকাও ঘুরতে থাকে। শুভবুদ্ধি সম্পন্ন অনেক মানুষই সারা দেশের আর্থিক অবস্থা ও বেকারত্বের হার দেখে এক কথায় বলছেন, কর্মহীন জীবন যেমন অভিশাপ। একই ভাবে নতুন শিল্পে খরা সমান অভিশাপ। তাই শিল্প বাঁচুক। বাঁচুক শ্রমিকও। তাই হলদিয়ার নিয়ে শাসক দলের এই শিল্পের পাশে থাকার পদক্ষেপকে শিল্পমহল কুর্নিশ জানিয়েছে।

Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

প্রধানমন্ত্রীকে হারিয়ে ‘গ্র্যামি’ জিতল শঙ্কর মহাদেবন ও জাকির হুসেনের ‘শক্তি’

ইতিহাসে প্রথম মহিলা প্রধান পেতে চলেছে মার্কিন নৌবাহিনী

অসাধ্য সাধন! ‘মিস নেদারল্যান্ড’ হলেন রূপান্তরকামী মডেল রিকি ভ্যালেরি কোলে

ব্রিটেনে শুরু নয়া যুগ, রাজা হিসেবে শপথ নিলেন চার্লস

আজ বিদ্রোহী কবির প্রয়াণ দিবস, তাঁকে শ্রদ্ধা জানানোর ‘অপরাধে’ মৃত্যু হয়েছিল যুবতীর

কথা বলো না, কেউ শব্দ করোনা, উনি গোলযোগ সইতে পারেন না

Advertisement
এক ঝলকে
Advertisement

জেলা ভিত্তিক সংবাদ

দার্জিলিং

কালিম্পং

জলপাইগুড়ি

আলিপুরদুয়ার

কোচবিহার

উত্তর দিনাজপুর

দক্ষিণ দিনাজপুর

মালদা

মুর্শিদাবাদ

নদিয়া

পূর্ব বর্ধমান

বীরভূম

পশ্চিম বর্ধমান

বাঁকুড়া

পুরুলিয়া

ঝাড়গ্রাম

পশ্চিম মেদিনীপুর

হুগলি

উত্তর চব্বিশ পরগনা

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

হাওড়া

পূর্ব মেদিনীপুর