নিজস্ব প্রতিনিধি: সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া। আর সেই বেড়ার উপরে মাথা নিচের দিকে রেখে ঝুলছে এক নিস্পাপ কিশোরীর নিথর দেহ। পাশে দাঁড়িয়ে জংলা পোশাক পড়া ভারতীয় সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীর জওয়ানরা। গোটা বিশ্ব স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল ওই ছবি দেখে। কুড়িগ্রাম সীমান্তে বিএসএফের নির্মম নৃশংসতার শিকার হওয়া ফেলানি খাতুনের হত্যা গোটা বিশ্বের বিবেককে নাড়িয়ে দিয়েছিল। শুক্রবার ১১ বছর পূর্ণ হল সেই অমানবিক, নৃশংস ঘটনার। আজও মেয়ের খুনীর বিচারের অপেক্ষায় রয়েছেন ফেলানির অসহায় বাবা নূর ইসলাম। আল্লাহের কাছে মেয়ের মৃত্যুর দিনে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করেছেন, অন্তত মরার আগে যাতে ফেলানী হত্যাকারী নরপিশাচের ফাঁসি দেখে যেতে পারেন। তাঁর সেই আশা পূর্ণ হবে কিনা, সময় বলবে।
আজ থেকে ১১ বছর আগের ঘটনা। কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনীটারী গ্রামের বাসিন্দা নূর ইসলাম সীমান্ত পেরিয়ে অসমের বোয়াইলপাড়া জেলার বঙ্গাইগাঁও এলাকায় সপরিবারে বসবাস করতেন। মেয়ে ফেলানীর বিয়ে ঠিক করেছিলেন নিজের শালীর ছেলের সঙ্গে। ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি শুক্রবার ভোর ছয়টা নাগাদ ফুলবাড়ি উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের অনন্তপুর সীমান্তের কাঁটাতার মই দিয়ে পার হচ্ছিলেন বাবা-মেয়ে। আচমকাই তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি চালায় বিএসএফের জওয়ানরা। ফেলানীর বাবা বাংলাদেশ সীমান্তে ঢুকে পড়ায় বরাতজোরে বেঁচে যান। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস মইয়ের উপরেই গুলিবিদ্ধ হয়ে কাঁটাতারে উল্টোভাবে ঝুলে পড়ে ফেলানী। প্রায় আধ ঘন্টা ছটফট করে নির্মমভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। সকাল পৌনে সাতটা থেকে থেকে দীর্ঘ চার ঘণ্টা নিথর দেহ কাঁটাতারের উপর ঝুলে থাকে। করুণ এই দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে নিমিষে ভাইরাল হয়ে যায়।
ফেলানীর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সরব হয় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলি। সমালোচনার মুখে পড়ে শেষ পর্যন্ত অভিযুক্ত বিএসএফ জওয়ান অমিয় ঘোষের বিচার শুরু করে বিএসএফ। দু’দফায় ফেলানিকে খুনে অভিযুক্তকে খালাস দেয়। রায় প্রত্যাখ্যান করে ভারতীয় মানবাধিকার সংগঠন মাসুম। ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে রিট আবেদন করেন ফেলানীর বাবা নূর ইসলাম। ২০১৬, ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে কয়েক দফা শুনানি পিছিয়ে যায়। পরে ২০২০ সালের ১৮ মার্চ করোনা শুরুর আগে শুনানির দিন ধার্য হলেও শুনানি স্থগিত হয়ে যায়।
মেয়ের মৃত্যুর দিনটির কথা মনে পড়লে আজও শিহরে ওঠেন ফেলানির মা জাহানারা বেগম। কোনও মতে বুকের কাছে কান্না চেপে বললেন, ‘মেয়েটার বিয়ের বেনারসী পরে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার কথা ছিল। তার পরিবর্তে সাদা কাপড় পরে কবরে চলে গেল। জল-জল করে চিৎকার করলেও আমার ফেলানির মুখে জলটুকু দেওয়া হয়নি। আমি খুনি অমিয় ঘোষের ফাঁসি চাই। তাহলেই আমার এবং ফেলানীর আত্মা শান্তি পাবে।’