নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা: গত বছর দুর্গাপুজো থেকে শুরু হয়েছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের উপরে নির্যাতন। তার পর থেকে লাগাতার দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নানা ছলছুতোয় হিন্দুদের মন্দির-বাড়িতে চলছে আক্রমণ-অগ্নিসংযোগ। সর্বশেষ ঘটনা ঘটেছে শুক্রবার নড়াইলের লোহাগড়ায়। একাধিক হিন্দু বাড়ি, মন্দির ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট চালিয়েছে মুসলিম মৌলবাদীরা। ওই ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন হিন্দু সম্প্রদায়। প্রতিটি ঘটনাতেই নীরব দর্শকের ভূমিকায় পুলিশ-প্রশাসন। আর প্রশাসনের এমন নীরব ভূমিকা নিয়েই শনিবার ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন দেশের বিশিষ্টজনেরা।
সাম্প্রতিক সময়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপরে হামলার ঘটনা নিয়ে উদ্বেগপ্রকাশ করে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন (Rashed Khan Menon) বলেছেন, ‘গত কয়েক মাস ধরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যে সব সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটছে তাতে মনে হচ্ছে, আমরা বাংলাদেশে বাস করছি না। আফগানিস্তানে রয়েছি। পরিকল্পিতভাবে দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনাগুলি ঘটানো হচ্ছে। এই বাংলাদেশের জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করিনি।’ ইতিহাসবিদ (Eminent Historian) অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন (Sayeed Anwar Hossain) বলেন, ‘যে বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, তা হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বিবর্ণ জয়ন্তীতে পরিণত হয়েছে।’
একই কথা শোনা গিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের (Shahariar Kabir) কণ্ঠেও। তাঁর কথায়, ‘দেশে সাম্প্রদায়িক হামলার পিছনে সুগভীর চক্রান্ত রয়েছে। হিন্দুদের বার্তা দেওয়া হচ্ছে, এ দেশ তোমার নয়। দেশজুড়ে যেভাবে সাম্প্রদায়িকতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, তাতে তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে যে সব সংগঠন মানবতাবিরোধী কার্যকলাপ চালিয়েছিল, তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।’ বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ফজলে হোসেন বাদশার (Fazle Hossain Badshah) মতে, ‘বাংলাদেশকে কার্যকর অর্থে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা খুব সহজসাধ্য নয়। এই কাজ স্বল্প সময়ে সম্ভবও নয়। কিন্তু সেই প্রচেষ্টা জারি রাখার পরিবেশ যদি আমরা তৈরি করতে না পারি, তাহলে সামনের দিনে ভয়াবহ পরিস্থিতি আমাদের জন্য অপেক্ষা করবে।’ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক (aadivasi Forum General Secretary) সঞ্জীব দ্রং (Sanjeev Drang) এ বিষয়ে বলেছেন, ‘আমরা এমন একটা দেশ চাই, যেখানে ধর্মীয় ও জাতিগত সব সম্প্রদায়ের মানুষ সমান অধিকার পাবেন। মানুষে মানুষে কোনও বৈষম্য থাকবে না।’